টিকটক হৃদয়ের সহযোগী যশোরের আল-আমিন!

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০৩:২৯:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মে ২০২১
  • / 243

তরুণীকে নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিওতে থাকা যশোরের আল আমিন (বামে), মাঝে তানিয়া, ডানে সবুজ। তারা তিনজনই পলাতক

::যশোর প্রতিনিধি::

ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিওতে টিকটক হৃদয় বাবু’র সহযোগী যশোরের এক যুবকও রয়েছে। আল-আমিন নামের ওই যুবকের বাড়ি যশোর শহরের চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকায়। ভিডিও প্রচার হওয়ার পর আলামিনের এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

আল-আমিনের পরিবারের সদস্যরা তাকে শনাক্ত করলেও তাদের দাবি, ৮ মাস আগে আল-আমিনকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় পুলিশও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করেছে। এদিকে নির্যাতনকারী ওই চক্রের ব্যাপারেও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, সম্ভবত গত ২১ মে ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। এই নির্যাতনের জড়িত অভিযোগে ৬ জনকে আটকের খবরও দিয়েছে গণমাধ্যমগুলো। আটক সবাই একই গ্রুপের এবং সবাই বাংলাদেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘটনাটি প্রচার হওয়ার পর নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেছেন। তরুণীটিকে পাচার করে নিয়ে যাওয়ার মূল হোতা টিকটক হৃদয়ের পরিচয়ও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে ভিডিওটি প্রচার হওয়ার পর দেখা গেছে, নির্যাতনকারী চক্রের মধ্যে যশোরের আল-আমিন নামের এক যুবকও রয়েছে। আল-আমিন (২৪) যশোরের চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকার ভ্যানচালক মনু মিয়ার ছেলে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মনু মিয়া বলেন, ‘আল-আমিন ভালো না। বাইরের থেকে আল-আমিনের কাছে লোক আসতো। ঘরে বসে তারা ইয়াবা খেতো। তাই ৮ মাস আগে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। শুনিছি, আলা-অমিন ইন্ডিয়া গেছে, তার বউ বাপের বাড়ি। সেখানে সে কি করছে জানি না, তার সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।’

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, আগে থেকেই বেপরোয়া আল-আমিন দেশে দু’টি বিয়ে করেছেন। দুই সংসারে তার দু’টি সন্তান রয়েছে। তাদের ফেলে তিনি ভারতে চলে যান। ভিডিওতে তিনি গোলাপি ফুলহাতা গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট পরিহিত এবং তার পায়ে কালো রাবারের জুতা রয়েছে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, ভিডিওতে থাকা লাল ফুলহাতা টপস পরা মেয়েটির নাম তানিয়া। এই তানিয়ার বাড়ি যশোরের নওয়াপাড়ায়। তানিয়াকে আল-আমিন স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভারতে নিয়ে গেছে। আল-আমিন বা তানিয়ার কেউই এখনও আটক হয়নি। তারা ওই এলাকায় পালিয়ে রয়েছে।

এদিকে ভারতের একটি সূত্র জানিয়েছে, টিকটক হৃদয় বাবু, আল-আমিনসহ এই চক্রটি ভারতের বেঙ্গালুরুর কোর্টলোর এলাকায় থাকে। সেখানে রাফি নামে একজনের আস্তানা রয়েছে। এই রাফির বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকায়। তার প্রকৃত নাম আশরাফুল মন্ডল। রাফিকে আল-আমিনরা বস বলে সম্বোধন করে।

সূত্রটি আরও জানায়, গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর আল-আমিন তানিয়াকে নিয়ে অবৈধপথে বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। যাওয়ার আগে সে চাঁচড়া এলাকার ইয়াবা বিক্রেতা কামরুলের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার ইয়াবা কিনে নিয়ে যায়। ‘অরিজিনাল মাল’ হিসেবে ইয়াবা আশক্ত রাফিকে উপহার দেয়ার জন্য এই ইয়াবা সে বেঙ্গালুরু নিয়ে গেছে।

ভারতের সূত্রটি আরও জানায়, নির্যাতনে জড়িত আল-আমিন ও তানিয়া গা ঢাকা দিয়েছে। এছাড়া ডালিম ও সবুজ নামে আরও দুই যুবক ছিল, তারাও পালিয়ে গেছে। তবে বেঙ্গালুরু পুলিশ তাদের খুঁজছে।

এদিকে ভাইরাল ভিডিও নিয়ে কথা হয় চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। তারা জানান, এলাকায় এটি জানাজানি হওয়ার পর অনেকে আল-আমিনের পরিবারের সদস্যদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে। এটি নিয়ে বাড়ির লোকজনও চাপের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় পুলিশও বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজ খবর করছে। তারা ওই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক রোকিবুজ্জামান বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ জানান।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) বেলাল হোসাইন জানান, ভারতের তরুণী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনা তিনি জানেন। ওই ঘটনায় জড়িত কারোর বাড়ি যশোরে- এমন তথ্য এখনও তারা পাননি। তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর রাখাবেন বলে জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

টিকটক হৃদয়ের সহযোগী যশোরের আল-আমিন!

আপডেট : ০৩:২৯:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ মে ২০২১
::যশোর প্রতিনিধি::

ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ভাইরাল ভিডিওতে টিকটক হৃদয় বাবু’র সহযোগী যশোরের এক যুবকও রয়েছে। আল-আমিন নামের ওই যুবকের বাড়ি যশোর শহরের চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকায়। ভিডিও প্রচার হওয়ার পর আলামিনের এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

আল-আমিনের পরিবারের সদস্যরা তাকে শনাক্ত করলেও তাদের দাবি, ৮ মাস আগে আল-আমিনকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় পুলিশও বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করেছে। এদিকে নির্যাতনকারী ওই চক্রের ব্যাপারেও চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, সম্ভবত গত ২১ মে ভারতের বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। এই নির্যাতনের জড়িত অভিযোগে ৬ জনকে আটকের খবরও দিয়েছে গণমাধ্যমগুলো। আটক সবাই একই গ্রুপের এবং সবাই বাংলাদেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘটনাটি প্রচার হওয়ার পর নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেছেন। তরুণীটিকে পাচার করে নিয়ে যাওয়ার মূল হোতা টিকটক হৃদয়ের পরিচয়ও নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে ভিডিওটি প্রচার হওয়ার পর দেখা গেছে, নির্যাতনকারী চক্রের মধ্যে যশোরের আল-আমিন নামের এক যুবকও রয়েছে। আল-আমিন (২৪) যশোরের চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকার ভ্যানচালক মনু মিয়ার ছেলে।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মনু মিয়া বলেন, ‘আল-আমিন ভালো না। বাইরের থেকে আল-আমিনের কাছে লোক আসতো। ঘরে বসে তারা ইয়াবা খেতো। তাই ৮ মাস আগে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। শুনিছি, আলা-অমিন ইন্ডিয়া গেছে, তার বউ বাপের বাড়ি। সেখানে সে কি করছে জানি না, তার সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।’

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, আগে থেকেই বেপরোয়া আল-আমিন দেশে দু’টি বিয়ে করেছেন। দুই সংসারে তার দু’টি সন্তান রয়েছে। তাদের ফেলে তিনি ভারতে চলে যান। ভিডিওতে তিনি গোলাপি ফুলহাতা গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট পরিহিত এবং তার পায়ে কালো রাবারের জুতা রয়েছে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, ভিডিওতে থাকা লাল ফুলহাতা টপস পরা মেয়েটির নাম তানিয়া। এই তানিয়ার বাড়ি যশোরের নওয়াপাড়ায়। তানিয়াকে আল-আমিন স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভারতে নিয়ে গেছে। আল-আমিন বা তানিয়ার কেউই এখনও আটক হয়নি। তারা ওই এলাকায় পালিয়ে রয়েছে।

এদিকে ভারতের একটি সূত্র জানিয়েছে, টিকটক হৃদয় বাবু, আল-আমিনসহ এই চক্রটি ভারতের বেঙ্গালুরুর কোর্টলোর এলাকায় থাকে। সেখানে রাফি নামে একজনের আস্তানা রয়েছে। এই রাফির বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা এলাকায়। তার প্রকৃত নাম আশরাফুল মন্ডল। রাফিকে আল-আমিনরা বস বলে সম্বোধন করে।

সূত্রটি আরও জানায়, গত বছর ২৩ সেপ্টেম্বর আল-আমিন তানিয়াকে নিয়ে অবৈধপথে বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। যাওয়ার আগে সে চাঁচড়া এলাকার ইয়াবা বিক্রেতা কামরুলের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকার ইয়াবা কিনে নিয়ে যায়। ‘অরিজিনাল মাল’ হিসেবে ইয়াবা আশক্ত রাফিকে উপহার দেয়ার জন্য এই ইয়াবা সে বেঙ্গালুরু নিয়ে গেছে।

ভারতের সূত্রটি আরও জানায়, নির্যাতনে জড়িত আল-আমিন ও তানিয়া গা ঢাকা দিয়েছে। এছাড়া ডালিম ও সবুজ নামে আরও দুই যুবক ছিল, তারাও পালিয়ে গেছে। তবে বেঙ্গালুরু পুলিশ তাদের খুঁজছে।

এদিকে ভাইরাল ভিডিও নিয়ে কথা হয় চাঁচড়া মধ্যপাড়া এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। তারা জানান, এলাকায় এটি জানাজানি হওয়ার পর অনেকে আল-আমিনের পরিবারের সদস্যদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে। এটি নিয়ে বাড়ির লোকজনও চাপের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় পুলিশও বিষয়টির ব্যাপারে খোঁজ খবর করছে। তারা ওই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে স্থানীয় চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক রোকিবুজ্জামান বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ জানান।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) বেলাল হোসাইন জানান, ভারতের তরুণী নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনা তিনি জানেন। ওই ঘটনায় জড়িত কারোর বাড়ি যশোরে- এমন তথ্য এখনও তারা পাননি। তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে খোঁজ খবর রাখাবেন বলে জানিয়েছেন।