মেয়েদের কথা ভেবে সমঝোতায় রাজি বাবা-মা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১১:৩৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২১
  • / 174
মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে সমঝোতা করতে রাজি হয়েছেন জাপানি নাগরিক মা এরিকো ও বাবা ইমরান শরীফ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই পক্ষ তেজগাঁওয়ে ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট সেন্টারের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

এরিকো বলেন, সমঝোতায় রাজি হয়েছি সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য। বাচ্চাদের দেখে এলাম, তাদের হাস্যোজ্জ্বল দেখেছি। নিজ হাতে তাদের গোসল করিয়েছি। আমি সত্যিই গর্বিত এখানকার যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা অনেক আন্তরিক।

ভিকটিম সেন্টারের পরিবেশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, যদিও এটি কোনো পাঁচতারকা হোটেল নয়, তারপরও পরিবেশ সুন্দর এবং নিরাপদ।

এ সময় এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, যদিও বলা হয়েছে একটি ফ্ল্যাটকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা সত্য নয়। ফ্ল্যাটের বিষয়টি ছিল, তবে সেটি একমাত্র কারণ ছিল না। তাদের মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে তা নিয়ে জাপানি আদালতে একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় এরিকো বিজয়ী হয়েছে। জাপানি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন সন্তানদের যেন এরিকোর কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার স্বামী সেটি না করে বাংলাদেশে চলে এসেছেন।

যেহেতু পারিবারিক বিষয়, সেখানে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় রয়েছে। এই জন্য আমরা চেষ্টা করছি, আইনি প্রক্রিয়ার বাহিরেও সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি কীভাবে শেষ করা যায়। আমরা আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারবো।

সমঝোতা হতে পারে কী ধরনের প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখনো তাদের মধ্যে কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি, তারা এখনো স্বামী-স্ত্রী। যদিও এরিকো বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছেন কিন্তু সেটি এখনও কার্যকর হয়নি। এখনো নানা ধরনের সমঝোতা করার সুযোগ রয়েছে। আইনে বলা হয়েছে যতই সমস্যা থাক না কেন বাচ্চাদের ভবিষ্যতের জন্য উভয় পক্ষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আমরা একটি সমঝোতায় যাওয়ার চেষ্টা করবো বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে। আমরা চেষ্টা করছি, মামলাটির শুনানি আগামী ৩১ তারিখের আগে পরস্পরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি সমঝোতায় আসার। এ সমঝোতার বিষয়ে উভয়পক্ষ ও আইনজীবীরা প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছেন।

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে তাদের হোটেলে নিয়ে যেতে সন্তানদের বাবা চাচ্ছেন। এ বিষয়ে মায়ের ইচ্ছা কী জানতে চাইলে আইনজীবী বলেন, এখন এই বিষয়টির সঙ্গে উভয় পক্ষ জড়িত। কারও একার পক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে সুতরাং কোনো ব্যক্তি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করলে তা কার্যকর করা সম্ভব নয়। তবে দুই পক্ষ একমত হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।

সন্তানদের কোনো অভিজাত হোটেলে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়ে বাবা ইমরান শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, এখানে বাচ্চারা ঠিকমত খেতে পারছে না। সন্তানদের ভবিষ্যতের বিবেচনায় যেকোনো ভালো সিদ্ধান্তের জন্য সমঝোতায় বসতে রাজি আছি। সমঝোতার পর ফলাফল কী দাঁড়ায় তার ওপর পরবর্তী বিষয়গুলো জড়িত রয়েছে। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করবো আমার বাচ্চাগুলো যেন ভালো থাকে।

তিনি বলেন, ভিকটিম সেন্টারে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন তারা অত্যন্ত আন্তরিক। তবে তাদের মন খারাপ। তারা ডিপ্রেশন এ রয়েছে। ১০-১২ বছরের দুজন বাচ্চার আশপাশে যারা আছে সবাই অপরিচিত কেমন থাকতে পারে আপনারাই বলুন। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে যদি হোটেলে স্থানান্তর করা যায় তাহলে সন্তানদের পাশাপাশি মা-বাবা আলাদা আলাদা রুমে পাশাপাশি থাকতে পারবে ফলে তারা মানসিক শান্তি পাবে বলে আমি মনে করি।

জাপানের ফ্লাটের বিষয়ে যে তথ্য দেয়া হয়েছে এ বিষয়টি ভুল তথ্য। আমাকে দুদিনের লিগ্যাল নোটিশ দিয়ে পুরোদমে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে। আমাকে বাধ্য হয়েই চলে আসতে হয়েছে বাংলাদেশে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মেয়েদের কথা ভেবে সমঝোতায় রাজি বাবা-মা

আপডেট : ১১:৩৫:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগাস্ট ২০২১
মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে সমঝোতা করতে রাজি হয়েছেন জাপানি নাগরিক মা এরিকো ও বাবা ইমরান শরীফ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই পক্ষ তেজগাঁওয়ে ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট সেন্টারের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

এরিকো বলেন, সমঝোতায় রাজি হয়েছি সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য। বাচ্চাদের দেখে এলাম, তাদের হাস্যোজ্জ্বল দেখেছি। নিজ হাতে তাদের গোসল করিয়েছি। আমি সত্যিই গর্বিত এখানকার যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা অনেক আন্তরিক।

ভিকটিম সেন্টারের পরিবেশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, যদিও এটি কোনো পাঁচতারকা হোটেল নয়, তারপরও পরিবেশ সুন্দর এবং নিরাপদ।

এ সময় এরিকোর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, যদিও বলা হয়েছে একটি ফ্ল্যাটকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তা সত্য নয়। ফ্ল্যাটের বিষয়টি ছিল, তবে সেটি একমাত্র কারণ ছিল না। তাদের মধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে তা নিয়ে জাপানি আদালতে একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলায় এরিকো বিজয়ী হয়েছে। জাপানি আদালত নির্দেশ দিয়েছেন সন্তানদের যেন এরিকোর কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার স্বামী সেটি না করে বাংলাদেশে চলে এসেছেন।

যেহেতু পারিবারিক বিষয়, সেখানে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয় রয়েছে। এই জন্য আমরা চেষ্টা করছি, আইনি প্রক্রিয়ার বাহিরেও সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি কীভাবে শেষ করা যায়। আমরা আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারবো।

সমঝোতা হতে পারে কী ধরনের প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এখনো তাদের মধ্যে কিন্তু বিবাহবিচ্ছেদ হয়নি, তারা এখনো স্বামী-স্ত্রী। যদিও এরিকো বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেছেন কিন্তু সেটি এখনও কার্যকর হয়নি। এখনো নানা ধরনের সমঝোতা করার সুযোগ রয়েছে। আইনে বলা হয়েছে যতই সমস্যা থাক না কেন বাচ্চাদের ভবিষ্যতের জন্য উভয় পক্ষকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আমরা একটি সমঝোতায় যাওয়ার চেষ্টা করবো বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে। আমরা চেষ্টা করছি, মামলাটির শুনানি আগামী ৩১ তারিখের আগে পরস্পরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি সমঝোতায় আসার। এ সমঝোতার বিষয়ে উভয়পক্ষ ও আইনজীবীরা প্রাথমিকভাবে একমত হয়েছেন।

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে তাদের হোটেলে নিয়ে যেতে সন্তানদের বাবা চাচ্ছেন। এ বিষয়ে মায়ের ইচ্ছা কী জানতে চাইলে আইনজীবী বলেন, এখন এই বিষয়টির সঙ্গে উভয় পক্ষ জড়িত। কারও একার পক্ষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব নয়। আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে সুতরাং কোনো ব্যক্তি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করলে তা কার্যকর করা সম্ভব নয়। তবে দুই পক্ষ একমত হলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।

সন্তানদের কোনো অভিজাত হোটেলে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়ে বাবা ইমরান শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, এখানে বাচ্চারা ঠিকমত খেতে পারছে না। সন্তানদের ভবিষ্যতের বিবেচনায় যেকোনো ভালো সিদ্ধান্তের জন্য সমঝোতায় বসতে রাজি আছি। সমঝোতার পর ফলাফল কী দাঁড়ায় তার ওপর পরবর্তী বিষয়গুলো জড়িত রয়েছে। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করবো আমার বাচ্চাগুলো যেন ভালো থাকে।

তিনি বলেন, ভিকটিম সেন্টারে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন তারা অত্যন্ত আন্তরিক। তবে তাদের মন খারাপ। তারা ডিপ্রেশন এ রয়েছে। ১০-১২ বছরের দুজন বাচ্চার আশপাশে যারা আছে সবাই অপরিচিত কেমন থাকতে পারে আপনারাই বলুন। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে যদি হোটেলে স্থানান্তর করা যায় তাহলে সন্তানদের পাশাপাশি মা-বাবা আলাদা আলাদা রুমে পাশাপাশি থাকতে পারবে ফলে তারা মানসিক শান্তি পাবে বলে আমি মনে করি।

জাপানের ফ্লাটের বিষয়ে যে তথ্য দেয়া হয়েছে এ বিষয়টি ভুল তথ্য। আমাকে দুদিনের লিগ্যাল নোটিশ দিয়ে পুরোদমে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে। আমাকে বাধ্য হয়েই চলে আসতে হয়েছে বাংলাদেশে।