রায় পক্ষে এলে দু-একদিনের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া
- আপডেট : ০২:৩১:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুন ২০২১
- / 186
গত ৩০ মার্চ ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। চাকরি প্রত্যাশীদের দাবির পরও ৩০ এপ্রিল এ আবেদনের প্রক্রিয়া শেষ হয়। এক মাসের মধ্যে ফলপ্রকাশ ও নিয়োগের কথা থাকলেও হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে নিয়োগ স্থগিত হয়ে যায়। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) মোমিনুর রশিদ আমিন বলেছেন, আগামী সোমবার আপিলের শুনানির কথা। ওই দিন শুনানি যদি এনটিআরসি এর পক্ষে আসে দুই-একদিনের মধ্যেই ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব। কারণ ফল প্রকাশের সব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করা আছে ইতোমধ্যে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ লাগতে পারে।
শনিবার বাংলাদেশ জার্নালকে তিনি বলেন, আমাদের স্কুলগুলোতে অনেক শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে। আমরা সেগুলো পূরণ করতে চাই। কিন্তু এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চাই মেধা সম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে। শিক্ষক নিয়োগের গাইডলাইনে বলা হচ্ছে জাতীয় মেধাক্রমের ভিত্তিতে নিয়োগ। এর ফলে যাদের রেজাল্ট ভালো সামনের সারিতে রয়েছেন তারাই আগে নিয়োগ পাবেন। এতে তুলনামূলক বেশি নাম্বারধাররী নিবন্ধিতরা উপযুক্ত জায়গায় যেতে পারবেন।
কম্বাইন্ড লিস্টের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন কেউ যদি ৪০ মার্ক পেয়ে নিয়োগের জন্য রিট করেন, এবং তাকে নিয়োগ দিয়ে দিলে যিনি ৮০ মার্ক পেয়েছেন তিনি বঞ্চিত হবেন। হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন রিটকারী দেড় হাজার শিক্ষককে ৪ সপ্তাহ অর্থাৎ জুনের মধ্যে নিয়োগ দিতে। কিন্তু সে আদেশ অনুযায়ী নিয়োগ দিতে গেলে জাতীয় মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আবার এ দেড় হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিলে আরো অনেকেই রিট করবেন। তখন বিষয়টি আরো বেশি গোঁজামিল হয়ে যাবে। তাই এনটিআরসি এর পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে।
মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, এর আগেও কম্বাইন্ড লিস্ট থেকে জাতীয় মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এবং পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে সফটওয়্যার এর মাধ্যমে। এতে শিক্ষকের প্রথম মহান পেশায় প্রকৃত মেধাবীরা নিয়োগ পেয়েছেন। আমরা আশা করছি আপিলের রায় এনটিআরসি এর পক্ষে আসবে। এবং কম্বাইন্ড লিস্টের মাধ্যমে সামনের সারিতে বা যাদের নাম্বার বেশি আছে তারা নিয়োগ পাবেন। শুনানি সম্পন্ন হলে দুই একদিনের মধ্যেই নিয়োগ দেওয়া সম্ভব। সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ লাগতে পারে। কারণ সবকিছুই রেডি। সফটওয়ারেই নিয়োগপ্রাপ্তদের তালিকা অটো নির্ধারিত হবে। সেখানে আমাদের কারো হাত থাকবে না। আমরা চাই না যাদের নাম্বার বেশি আছে তারা কোনভাবেই বঞ্চিত হোক। স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বেশি নাম্বারধারীরা জাতীয় মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ পাবেন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট একটি রায় দিয়েছিলেন। ওই রায়ে কয়েক দফা নির্দেশনা ছিল। তার মধ্যে একটি ছিল সম্মিলিত মেধা তালিকা অনুযায়ী রিট আবেদনকারী (১ থেকে ১২ তম নিবন্ধনধারী) এবং অন্যান্য আবেদনকারীদের নামে সনদ জারি করবে। কিন্ত ২ বছরেও রায় বাস্তবায়ন না করায় রিট আবেদনকারীরা আদালত অবমাননার আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি করে ২০১৯ সালে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় ৫৪ হাজার পদের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে এনটিআরসিএ। এরপর নিয়োগ থেকে বিরত থাকতে একটি আবেদন করেন রিটকারীরা। হাইকোর্ট গত ৬ মে এ রিটিকারীদের পক্ষে রায় দেন। এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের নির্দেশ দেন। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে ১৩ জুন আপিল করে এনটিআরসিএ। আগামী সোমবার এ আপিলের শুনানির কথা রয়েছে। শুনানি এনটিআরসি এর পক্ষে আসলে এ সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা জানান, রিটকারীদের পক্ষে আদালত যে রায় দিয়েছে সেটি চ্যালেঞ্জ করে আমরা আপিল করেছি। সোমবার আপিলের শুনানি কথা রয়েছে। শুনানিতে রায় আমাদের পক্ষে থাকবে বলে আমরা আশাবাদী। আদালতের স্থগিতাদেশ পেলে চলতি সপ্তাহেই গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ করা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি শান্ত আহমেদ বলেন, সারাদেশের বেকার নিবন্ধিত শিক্ষকেরা আর বসে থাকবে না। তারা বুঝে গেছে তাদেরকে আর বসে থাকলে হবে না। নিবন্ধনধারীদের সাথে তামাশা করা হচ্ছে। আমাদেরকে এক সপ্তাহের মধ্যে সুখবর দেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত কোন আশার বাণী শোনাতে পারেনি এনটিআরসিএ।
তিনি বলেন, সারাদেশের গ্রামগঞ্জ থেকে এসব নিবন্ধনধারীরা দাবী আদায়ে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। যেহেতু কষ্টের টাকায় আবেদন করেছে সেহেতু গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফলের জন্যেও রাজপথে নামতে প্রস্তুত। আর বসে থাকবে না কেউ। যৌক্তিক দাবী আদায়ে বৃহত্তর কর্মসূচি আসবে শিগগিরই।