এলএসডি সেবনে মস্তিষ্কে যেসব বিকৃতি ঘটে

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:৩৫:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১
  • / 214

ফাইল ফটো

::আন্তর্জাতিক ডেস্ক::

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তকারীরা ভয়াবহ মাদক এলএসডির খোঁজ পেয়েছেন। এরপরই এলএসডি নিয়ে ভয়ঙ্কর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে।

জানা গেছে, এ মাদক ব্যবহারের পর সেবনকারীরা নিজেকে হত্যার চেষ্টা করতে থাকেন। যেটি ঘটেছে হাফিজুর রহমানের সঙ্গে। এলএসডিতে আসক্ত হাফিজুর নিজের গলায় দা চালিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।

পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, ১৫ মে রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢামেকের সামনে এক ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা নিজেই কাটেন হাফিজুর। এসময় উন্মাদের মতো বারবার বলছিলেন, ‘আমাকে মাফ করে দাও।’

পরে অস্বাভাবিক এই মৃত্যুর কারণ খুঁজতে নেমে ঢাবির তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ভয়ঙ্কর এলএসডির বিষয়ে বেশকিছু তথ্য পায় পুলিশ।

জানা যায়, এ মাদক বিদেশ থেকে দেশে আনা হয়। উচ্চবিত্তদের মাঝেই এটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। তবে বর্তমানে এর ব্যবহার ছড়িয়েছে সারা বাংলাদেশে।

এলএসডি কী?

এলএসডি অর্থ হল- ‘লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড’। এ অ্যাসিড এক ধরণের সাইকেডেলিক ওষুধ, যা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের জন্য পরিচিত। এটি প্রধাণত প্রমোদমূলক ওষুধ হিসেবে এবং আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য ব্যবহার হয়। সাধারণত জিভের নিচে রেখে এলএসডি সেবন করা হয়। এই অ্যাসিড প্রায়ই বল্টার কাগজ, চিনির কিউব, বা জিলেটিনে বিক্রি করা হয়। এটি ইনজেকশনের সাহায্যেও নেয়া হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনস্থ মাদক বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ড্রাগ অ্যাবিউজের তথ্য অনুযায়ী, এলএসডি রাসায়নিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি একটি পদার্থ। যা ‘রাই’ এবং বিভিন্ন ধরনের শস্যের গায়ে জন্মানো এক বিশেষ ধরণের ছত্রাকের শরীরের লাইসার্জিক অ্যাসিড থেকে তৈরি করা হয়। এটি গন্ধহীন একটি পদার্থ।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের মতে, এটি পাউডার, তরল, ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের আকারে পাওয়া যায়। এলএসডিকে সাইকাডেলিক মাদক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ মাদকের প্রভাবে মানুষের মতিভ্রম ঘটে। আশেপাশের পরিবেশ ও বাস্তবতাকে মুহূর্তেই ভুলে গিয়ে অলীক বস্তু প্রত্যক্ষ করতে থাকেন সেবনকারীরা।

এলএসডির আবিষ্কার

এলএসডির প্রথম পরিচয় করে দেন সুইস রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান। তবে তিনি এটি মাদিক হিসেবে ব্যবহারের জন্য আবিষ্কার করেননি। ত্রিশের দশকে এরগট নামক এক ধরনের ‘প্যারাসাইটিক ফাঙ্গাস’ দমন করতেই তিনি এটি তৈরি করেছিলেন।

আসলে হফম্যান কম রক্তচাপ, মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উন্নতি এবং শ্বাস-প্রশ্বাস উন্নত করার ওষুধ তৈরির জন্য ‘লাইসার্জিক অ্যাসিড’ নিয়ে কাজ করছিলেন। হঠাৎ করেই নিজের অজান্তে এলএসডি নামক আধুনিককালের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভয়াবহ ড্রাগের প্রভাব আবিষ্কার করেন।

১৯৩৮ সালে এ মাদক তৈরি হবার পর বিজ্ঞানী এবং ফিজিশিয়ানদের কাছে এটির কোনো গুরুত্ব ছিলো না। পাঁচ বছর পর হফম্যান আবার এলএসডি-২৫ নিয়ে কাজ শুরু করেন। পরে ২৫ মাইক্রোগ্রাম এলএসডি তিনি নিজেই জিভে স্পর্শ করেন। এরপরই তিনি চলে যান স্বপ্নের জগতে। এর পরদিন হফম্যান জিভে নেন ২৫০ মাইক্রোগ্রাম এরও প্রায় দশগুণ বেশি। ফলাফল একই ছিল, তবে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন হফম্যান। দ্রুত চিকিৎসককে ডেকে নিজের ব্লাড প্রেশার, হার্টরেট, শ্বাস-প্রশ্বাস সব পরীক্ষা করান। যদিও সব ঠিকই ছিলো।

এরপর হফম্যানের সহকর্মীরা সবাই স্বাদ, বর্ণ ও রংহীন সেই সাইকেডেলিক ড্রাগ একে একে টেস্ট করেন। সবারই একই অবস্থা হয়। এভাবেই আবিষ্কার হয় ভয়াবহ মাদক এলএসডি।

এলএসডি সেবনের পর মস্তিষ্কে যা ঘটে

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের গবেষণা অনুসারে, এই মাদকটি মানুষের মস্তিষ্কের সেরোটোনিন নামক রাসায়নিকের কার্যক্রম প্রভাবিত করে। এ কারণে সেবনকারীদের অনুভূতি এবং পারিপার্শ্বিকতার সম্পর্কে ধারণার পরিবর্তন ঘটে।

এলএসডি নেয়ার পর সাধারণত মানুষ ‘হ্যালুসিনেট’ করে বা এমন দৃশ্য দেখে যা বাস্তবে নেই। অনেক সময় অলীক দৃশ্য দেখার কারণে দুর্ঘটনার শিকারও হয়ে থাকেন সেবনকারীরা। অনেকেই এই মাদক ব্যবহারের পর ভালো অনুভূতি বোধ করেন। আবার অনেকেই উন্মাদ হয়ে ভয়ঙ্কর কিছু পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে বিপদগ্রস্ত হয়ে থাকেন। এলএসডি বিশ্বের অনেক দেশে অবৈধ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা বেকলি ফাউন্ডেশন সম্প্রতি এলএসডির উপর গবেষণা করেছে। এই গবেষণার প্রধান গবেষক ডেভিড নাট এই গবেষণাকে পার্টিকেল ফিজিক্সে হিগস বোসনের আবিষ্কারের সমতুল্য বলে আখ্যা দিয়েছেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ২০ জন স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে এ গবেষণার কাজ শুরু হয়।

দুইদিনে তাদের ওপর ইঞ্জেকশনে ও ট্যাবলেট আকারে ৭৫ মাইক্রোগ্রাম এলএসডি প্রয়োগ করা হয়। এরপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ও মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তের চলাচল পরীক্ষা করা হয় ও ছবি তোলা হয়। এই মাদক নেয়ার আগে ও পরে সেবনকারীর মস্তিষ্কের ছবি তুলে পার্থক্য বের করা হয়। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, এলএসডি গ্রহণের পর সেবনকারী চোখ বন্ধ করেও অলীক সব দৃশ্য চোখের সামনে দেখতে পায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন এর সমীক্ষা অনুসারে, এলএসডি গ্রহণের ফলে মানুষের হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়াও অনেকের ক্ষেত্রে অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, অতিরিক্ত ঘামসহ নানা ধরণের মানসিক সমস্যাও তৈরি হয়। এছাড়াও দুর্ঘটনা, বাড়ির জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়া, বিষণ্ণতা বা দুশ্চিন্তায় পরেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

ইউরোপের বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের বাণিজ্যিক ওয়েবসাইট রিসার্চগেইট’এ ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় মোট ৬৪ জনের মৃত্যু হয় এলএসডি গ্রহণের পরবর্তী জটিলতায়। ১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এলএসডিসহ সব ধরণের সাইকাডেলিক ড্রাগ নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ চিকিৎসা কাজে এলএসডি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে এই বিষয়ে গবেষণায় কিছুটা ঘাটতি পড়ে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মনোচিকিৎসক ও রসায়নবিদরা বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, মানসিক অবসাদের মতো অসুস্থতার চিকিৎসায় এখনো এলএসডির কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

এলএসডি সেবনে মস্তিষ্কে যেসব বিকৃতি ঘটে

আপডেট : ০১:৩৫:৩৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুন ২০২১
::আন্তর্জাতিক ডেস্ক::

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তকারীরা ভয়াবহ মাদক এলএসডির খোঁজ পেয়েছেন। এরপরই এলএসডি নিয়ে ভয়ঙ্কর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে।

জানা গেছে, এ মাদক ব্যবহারের পর সেবনকারীরা নিজেকে হত্যার চেষ্টা করতে থাকেন। যেটি ঘটেছে হাফিজুর রহমানের সঙ্গে। এলএসডিতে আসক্ত হাফিজুর নিজের গলায় দা চালিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন।

পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, ১৫ মে রাত পৌনে ৮টার দিকে ঢামেকের সামনে এক ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে দা নিয়ে নিজের গলা নিজেই কাটেন হাফিজুর। এসময় উন্মাদের মতো বারবার বলছিলেন, ‘আমাকে মাফ করে দাও।’

পরে অস্বাভাবিক এই মৃত্যুর কারণ খুঁজতে নেমে ঢাবির তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ভয়ঙ্কর এলএসডির বিষয়ে বেশকিছু তথ্য পায় পুলিশ।

জানা যায়, এ মাদক বিদেশ থেকে দেশে আনা হয়। উচ্চবিত্তদের মাঝেই এটি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। তবে বর্তমানে এর ব্যবহার ছড়িয়েছে সারা বাংলাদেশে।

এলএসডি কী?

এলএসডি অর্থ হল- ‘লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথ্যালামাইড’। এ অ্যাসিড এক ধরণের সাইকেডেলিক ওষুধ, যা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবের জন্য পরিচিত। এটি প্রধাণত প্রমোদমূলক ওষুধ হিসেবে এবং আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য ব্যবহার হয়। সাধারণত জিভের নিচে রেখে এলএসডি সেবন করা হয়। এই অ্যাসিড প্রায়ই বল্টার কাগজ, চিনির কিউব, বা জিলেটিনে বিক্রি করা হয়। এটি ইনজেকশনের সাহায্যেও নেয়া হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনস্থ মাদক বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ড্রাগ অ্যাবিউজের তথ্য অনুযায়ী, এলএসডি রাসায়নিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি একটি পদার্থ। যা ‘রাই’ এবং বিভিন্ন ধরনের শস্যের গায়ে জন্মানো এক বিশেষ ধরণের ছত্রাকের শরীরের লাইসার্জিক অ্যাসিড থেকে তৈরি করা হয়। এটি গন্ধহীন একটি পদার্থ।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের মতে, এটি পাউডার, তরল, ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের আকারে পাওয়া যায়। এলএসডিকে সাইকাডেলিক মাদক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ মাদকের প্রভাবে মানুষের মতিভ্রম ঘটে। আশেপাশের পরিবেশ ও বাস্তবতাকে মুহূর্তেই ভুলে গিয়ে অলীক বস্তু প্রত্যক্ষ করতে থাকেন সেবনকারীরা।

এলএসডির আবিষ্কার

এলএসডির প্রথম পরিচয় করে দেন সুইস রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান। তবে তিনি এটি মাদিক হিসেবে ব্যবহারের জন্য আবিষ্কার করেননি। ত্রিশের দশকে এরগট নামক এক ধরনের ‘প্যারাসাইটিক ফাঙ্গাস’ দমন করতেই তিনি এটি তৈরি করেছিলেন।

আসলে হফম্যান কম রক্তচাপ, মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উন্নতি এবং শ্বাস-প্রশ্বাস উন্নত করার ওষুধ তৈরির জন্য ‘লাইসার্জিক অ্যাসিড’ নিয়ে কাজ করছিলেন। হঠাৎ করেই নিজের অজান্তে এলএসডি নামক আধুনিককালের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভয়াবহ ড্রাগের প্রভাব আবিষ্কার করেন।

১৯৩৮ সালে এ মাদক তৈরি হবার পর বিজ্ঞানী এবং ফিজিশিয়ানদের কাছে এটির কোনো গুরুত্ব ছিলো না। পাঁচ বছর পর হফম্যান আবার এলএসডি-২৫ নিয়ে কাজ শুরু করেন। পরে ২৫ মাইক্রোগ্রাম এলএসডি তিনি নিজেই জিভে স্পর্শ করেন। এরপরই তিনি চলে যান স্বপ্নের জগতে। এর পরদিন হফম্যান জিভে নেন ২৫০ মাইক্রোগ্রাম এরও প্রায় দশগুণ বেশি। ফলাফল একই ছিল, তবে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন হফম্যান। দ্রুত চিকিৎসককে ডেকে নিজের ব্লাড প্রেশার, হার্টরেট, শ্বাস-প্রশ্বাস সব পরীক্ষা করান। যদিও সব ঠিকই ছিলো।

এরপর হফম্যানের সহকর্মীরা সবাই স্বাদ, বর্ণ ও রংহীন সেই সাইকেডেলিক ড্রাগ একে একে টেস্ট করেন। সবারই একই অবস্থা হয়। এভাবেই আবিষ্কার হয় ভয়াবহ মাদক এলএসডি।

এলএসডি সেবনের পর মস্তিষ্কে যা ঘটে

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের গবেষণা অনুসারে, এই মাদকটি মানুষের মস্তিষ্কের সেরোটোনিন নামক রাসায়নিকের কার্যক্রম প্রভাবিত করে। এ কারণে সেবনকারীদের অনুভূতি এবং পারিপার্শ্বিকতার সম্পর্কে ধারণার পরিবর্তন ঘটে।

এলএসডি নেয়ার পর সাধারণত মানুষ ‘হ্যালুসিনেট’ করে বা এমন দৃশ্য দেখে যা বাস্তবে নেই। অনেক সময় অলীক দৃশ্য দেখার কারণে দুর্ঘটনার শিকারও হয়ে থাকেন সেবনকারীরা। অনেকেই এই মাদক ব্যবহারের পর ভালো অনুভূতি বোধ করেন। আবার অনেকেই উন্মাদ হয়ে ভয়ঙ্কর কিছু পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে গিয়ে বিপদগ্রস্ত হয়ে থাকেন। এলএসডি বিশ্বের অনেক দেশে অবৈধ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা সংস্থা বেকলি ফাউন্ডেশন সম্প্রতি এলএসডির উপর গবেষণা করেছে। এই গবেষণার প্রধান গবেষক ডেভিড নাট এই গবেষণাকে পার্টিকেল ফিজিক্সে হিগস বোসনের আবিষ্কারের সমতুল্য বলে আখ্যা দিয়েছেন। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ২০ জন স্বেচ্ছাসেবককে নিয়ে এ গবেষণার কাজ শুরু হয়।

দুইদিনে তাদের ওপর ইঞ্জেকশনে ও ট্যাবলেট আকারে ৭৫ মাইক্রোগ্রাম এলএসডি প্রয়োগ করা হয়। এরপর বিভিন্ন পদ্ধতিতে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ও মস্তিষ্কের ভেতরে রক্তের চলাচল পরীক্ষা করা হয় ও ছবি তোলা হয়। এই মাদক নেয়ার আগে ও পরে সেবনকারীর মস্তিষ্কের ছবি তুলে পার্থক্য বের করা হয়। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, এলএসডি গ্রহণের পর সেবনকারী চোখ বন্ধ করেও অলীক সব দৃশ্য চোখের সামনে দেখতে পায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন এর সমীক্ষা অনুসারে, এলএসডি গ্রহণের ফলে মানুষের হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এছাড়াও অনেকের ক্ষেত্রে অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, অতিরিক্ত ঘামসহ নানা ধরণের মানসিক সমস্যাও তৈরি হয়। এছাড়াও দুর্ঘটনা, বাড়ির জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়া, বিষণ্ণতা বা দুশ্চিন্তায় পরেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

ইউরোপের বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের বাণিজ্যিক ওয়েবসাইট রিসার্চগেইট’এ ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৫৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় মোট ৬৪ জনের মৃত্যু হয় এলএসডি গ্রহণের পরবর্তী জটিলতায়। ১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এলএসডিসহ সব ধরণের সাইকাডেলিক ড্রাগ নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ চিকিৎসা কাজে এলএসডি ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলে এই বিষয়ে গবেষণায় কিছুটা ঘাটতি পড়ে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মনোচিকিৎসক ও রসায়নবিদরা বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, মানসিক অবসাদের মতো অসুস্থতার চিকিৎসায় এখনো এলএসডির কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।