গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কান্না

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০৭:২২:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১
  • / 201
::নিজস্ব প্রতিবেদক::

প্রতিদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নানা সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন-বিক্ষোভ, অনশনের মতো কর্মসূচি পালিত হয়। তবে  শুক্রবার এ জায়গাটিতে এমন একটি কর্মসূচি পালিত হয়েছে, যা সবাইকে আবেগতাড়িত করেছে।

নানা সময়ে ‘গুমের’ শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা এসেছিলেন তাদের মনের কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরতে। একেকটি পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য দেয়ার সময় কান্নায় প্রেসক্লাব এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।

দেশে নানা সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়েদের ডাক’ আয়োজিত এই মানববন্ধনে গুম হওয়া স্বজনদের ফিরে পেতে আকুতি জানায় শিশু, কিশোর ও বৃদ্ধ পিতা-মাতারা। তাদের সবার মুখে একই ভাষ্য, কোথায় কেমন আছেন তাদের নিখোঁজ স্বজন কিছুই জানেন না তারা।

প্রতি বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহকে বিশ্বজুড়ে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘গুম সপ্তাহ’।

মানববন্ধনে ২০১৯ সালের ২০ জুন থেকে নিখোঁজ মিরপুরের কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে আনিসা ইসলাম বলেন, বাবাকে ফিরে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও অভিযোগ করেছি। কিন্তু দুই বছর হয়ে গেলো এখনো আমার বাবাকে ফিরে পাইনি।

পরিবারে বাবার শূন্যতার কথা তুলে ধরে আনিসা বলেন, আব্বু হারিয়ে যাবার পর ছোট ভাই দুই মাস ঘুমাতে পারেনি। আম্মু কিছু বলতে পারত না। শুধু বলতো, ঘুমাও আব্বু এসে কলিং বেল বাজাবে। এভাবে তো দুই বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু আব্বু তো কলিং বেল বাজায় না।

কান্নায় ভেঙে পড়ে আনিসা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে বলেন, আপনি একবার দেখেন। আমরা কেউ মিথ্যা বলিনি। আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দেন। আব্বু ছাড়া আমরা কীভাবে থাকব।

আনিশার মতো সাথিকা সরকার এসেছে বাবাকে ফিরে পাওয়ার দাবি জানাতে। প্রথম শ্রেণিতে পড়া সাথিকার বাবা মো. সোহেল আট বছর আগে গুম হয়েছেন। এখনো তার খোঁজ পায়নি তার পরিবার।

সাথিকা বলে, আমি তো জানিই না আব্বু কীভাবে হারিয়ে গেছে। আমি অনেক ছোট ছিলাম। আম্মু বলত আব্বু বিদেশ গেছেন। আমার জন্য অনেক খেলনা নিয়ে আসবেন। কিন্তু আব্বু এখনো খেলনা আনে নাই। কথাও বলিনি আব্বুর সঙ্গে। আম্মু কিছু আর বলে না।

গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, মায়ের সন্তান ফিরে আসুক মায়ের কোলে। গুম হওয়া সব সন্তান তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিন। আমাদের কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। শুধু চাই সন্তান ফিরে আসুক। সন্তান ফিরে আসবে এই আশায় পথ চেয়ে বসে আছি।

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াস বলেন, টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আমার বাবা ও তার গাড়িচালক গুম হন। এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ অন্যায়ের প্রতিকার পেতে হলে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে গুমের প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। পাশাপাশি গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।

তিনি জানান, দেশে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত ১১ জন গুম হয়েছেন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ না পেয়ে অনিশ্চিত ও দুঃসহ জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের পরিবারের সদস্যদের। সরকার কখনও পদক্ষেপ নেয় না। কীভাবে দিন পার করবে পরিবারগুলো।

মানববন্ধনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর প্রমুখ অংশ নেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের কান্না

আপডেট : ০৭:২২:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মে ২০২১
::নিজস্ব প্রতিবেদক::

প্রতিদিন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নানা সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন-বিক্ষোভ, অনশনের মতো কর্মসূচি পালিত হয়। তবে  শুক্রবার এ জায়গাটিতে এমন একটি কর্মসূচি পালিত হয়েছে, যা সবাইকে আবেগতাড়িত করেছে।

নানা সময়ে ‘গুমের’ শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনরা এসেছিলেন তাদের মনের কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরতে। একেকটি পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য দেয়ার সময় কান্নায় প্রেসক্লাব এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে।

দেশে নানা সময়ে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়েদের ডাক’ আয়োজিত এই মানববন্ধনে গুম হওয়া স্বজনদের ফিরে পেতে আকুতি জানায় শিশু, কিশোর ও বৃদ্ধ পিতা-মাতারা। তাদের সবার মুখে একই ভাষ্য, কোথায় কেমন আছেন তাদের নিখোঁজ স্বজন কিছুই জানেন না তারা।

প্রতি বছর মে মাসের শেষ সপ্তাহকে বিশ্বজুড়ে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘গুম সপ্তাহ’।

মানববন্ধনে ২০১৯ সালের ২০ জুন থেকে নিখোঁজ মিরপুরের কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে আনিসা ইসলাম বলেন, বাবাকে ফিরে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছেও অভিযোগ করেছি। কিন্তু দুই বছর হয়ে গেলো এখনো আমার বাবাকে ফিরে পাইনি।

পরিবারে বাবার শূন্যতার কথা তুলে ধরে আনিসা বলেন, আব্বু হারিয়ে যাবার পর ছোট ভাই দুই মাস ঘুমাতে পারেনি। আম্মু কিছু বলতে পারত না। শুধু বলতো, ঘুমাও আব্বু এসে কলিং বেল বাজাবে। এভাবে তো দুই বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু আব্বু তো কলিং বেল বাজায় না।

কান্নায় ভেঙে পড়ে আনিসা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে বলেন, আপনি একবার দেখেন। আমরা কেউ মিথ্যা বলিনি। আমার আব্বুকে ফিরিয়ে দেন। আব্বু ছাড়া আমরা কীভাবে থাকব।

আনিশার মতো সাথিকা সরকার এসেছে বাবাকে ফিরে পাওয়ার দাবি জানাতে। প্রথম শ্রেণিতে পড়া সাথিকার বাবা মো. সোহেল আট বছর আগে গুম হয়েছেন। এখনো তার খোঁজ পায়নি তার পরিবার।

সাথিকা বলে, আমি তো জানিই না আব্বু কীভাবে হারিয়ে গেছে। আমি অনেক ছোট ছিলাম। আম্মু বলত আব্বু বিদেশ গেছেন। আমার জন্য অনেক খেলনা নিয়ে আসবেন। কিন্তু আব্বু এখনো খেলনা আনে নাই। কথাও বলিনি আব্বুর সঙ্গে। আম্মু কিছু আর বলে না।

গুমের শিকার সাজেদুল ইসলাম সুমনের মা হাজেরা খাতুন বলেন, মায়ের সন্তান ফিরে আসুক মায়ের কোলে। গুম হওয়া সব সন্তান তাদের মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিন। আমাদের কারও প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। শুধু চাই সন্তান ফিরে আসুক। সন্তান ফিরে আসবে এই আশায় পথ চেয়ে বসে আছি।

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াস বলেন, টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে আমার বাবা ও তার গাড়িচালক গুম হন। এখন পর্যন্ত তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ অন্যায়ের প্রতিকার পেতে হলে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়কারী আফরোজা ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে গুমের প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে। পাশাপাশি গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।

তিনি জানান, দেশে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত ১১ জন গুম হয়েছেন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ না পেয়ে অনিশ্চিত ও দুঃসহ জীবন কাটাতে হচ্ছে তাদের পরিবারের সদস্যদের। সরকার কখনও পদক্ষেপ নেয় না। কীভাবে দিন পার করবে পরিবারগুলো।

মানববন্ধনে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর প্রমুখ অংশ নেন।