চিরচেনা রূপে রাজধানী
- আপডেট : ০২:৪১:৫১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মে ২০২১
- / 295
মহামারি করোনাভাইরাসে পরিস্থিতি দিনদিন অবনতির দিকে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে দেশজুড়ে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দেয় সরকার। ফলে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে দীর্ঘ ২২ দিন। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার থেকে চলাচল শুরু হয়েছে গণপরিবহনের। তবে সড়কে বাসের সংখ্যা বেশি নাহলেও ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন অনেকটা অবাধে চলাচল করছে। তবুও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। একইসঙ্গে খুশি পরিবহন মালিক-শ্রমিকরাও।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, টিকাটুলি মোড়, গুলিস্তান, জিপিও মোড়, পল্টন মোড়, কাকরাইল, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, নতুনবাজার, নিউ মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে তীব্র যানজটের চিত্র দেখা যায়।
অর্ধেক আসন খালি রেখে বাস চললেও স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে অনেকেই ছিলেন উদাসীন। নিয়ম মানাতে মাঠে ছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সরকারি নির্দেশনা মেনে বন্ধ দূরপাল্লার বাস। তবে, ঈদ সামনে রেখে ঠেকানো যায়নি ঢাকা ছাড়া মানুষের স্রোত। রাজধানীর পাশাপাশি অন্যান্য জেলার ভেতরেও শুরু হয়েছে গণপরিবহন চলাচল। তবে, যাত্রী স্বল্পতার কথা জানান মালিক-শ্রমিকরা।
সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করা বাসগুলোতে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। এখান থেকে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে চালক, হেলপার এবং যাত্রীদের মুখে মাস্ক দেখা গেছে।
সদরঘাট-গাবতলি রুটের ৭ নম্বরে পরিবহনের বাস চালক রনি বলেন, ‘বহুতদিন পরে খুইলছে তাই এহনো বেশি পাইনা, তয় মাসক (মাস্ক) না পইরা কাউরে উঠবার দেই না।’
দীপন পরিবহনের চালক মোশারফ বলেন, ‘লকডাউনের কারণে আমাদের পরিবার নিয়ে চলতে অনেক সমস্যা হচ্ছিল। এখন আমরা বাস চালানোর সুযোগ পেয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা যাত্রী পরিবহন করছি এবং করব।’
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু গণপরিবহনে দুই সিটে একজন করে যাত্রী বসতে বসা দেখা গেছে। সকাল থেকে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম থাকায় পরিবহনের চালক ও হেলপাররা অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানোর সুযোগ পাচ্ছেন না।
গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনে আজিমপুর থেকে ঠিকানা পরিবহন, দেওয়ান পরিবহন ও ভিআইপি পরিবহনসহ কয়েকটি বাস সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে।
ঠিকানা পরিবহনের চালক আসলাম বলেন, ‘উপরের নির্দেশ আছে এক সিটে একজনের বেশি যাত্রী নেওন যাইবো না। আমাগো লগে স্যানিটাইজার আছে।’
এদিকে ধানমণ্ডি-২৭ থেকে নিউ মার্কেট সড়কে গাড়ির সঙ্গে গাড়ির ছুঁই ছুঁই অবস্থা দেখা গেছে। এতে তীব্র যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষের।
ধানমন্ডি ২৭ নম্বর থেকে গাবতলী পর্যন্ত নিয়মিত টহল দেয়া একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘পরিবহন চালু হওয়ায় গাড়ি একটু বেড়েছে। এর সঙ্গে বাইরে থেকেও গাড়ি আসছে। ফলে যানজট বেড়েছে। বিভিন্ন অজুহাতে মানুষ আজ বের হওয়ার চেষ্টা করছে।’
মিরপুর দুয়ারিপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে নিউ মার্কেট, আজিমপুর ও গুলিস্তানের উদ্দেশ্যে আশির্বাদ ও বিহঙ্গ বাস সার্ভিস ছেড়ে যেতে দেখা যায়। সকালে যাত্রী সংখ্যা কম থাকলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সেটাও বেড়েছে।
নিউ মার্কেট যেতে বাসের অপেক্ষায় থাকা দুলাল বলেন, ‘হেলপাররা সকল যাত্রী স্পর্শ পায়, তারাই বেশি ঝুঁকিতে থাকবে। তাই তাদের অবশ্যই নিরাপদে থাকতে মাস্ক পরা জরুরি।’
সায়েন্সল্যাব মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শাহীন উদ্দিন জানান, ‘সকাল ১০টার পর থেকে গাড়ির চাপ বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে বেলা গড়াতে থাকলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রতি সিগন্যালে প্রায় ১৫-২০ মিনিটের মত সময় লাগছে।’
পল্টন মোড়ে যানজটে মোটরবাইকে দাঁড়িয়ে থাকা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘লকডাউন ও চলছে, পরিবহন ও খুলেছে, ভাই সড়কে দেখেন এত গাড়ি, নির্বিঘ্নে চলছে। তাহলে এমন নাম মাত্র লকডাউনের কি দরকার।’
গুলিস্তান থেকে গুলশানে আসা সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা আহাদ হোসেন বলেন, আমি জানতাম আজকে গণপরিবহন নামবে। সেজন্য সকাল সকালে বেরিয়েছি বাসা থেকে। কিন্তু যে অবস্থা দেখলাম পথে পথে যানজট। আমার গুলশানে আসতেই পাক্কা এক ঘণ্টা ১০ মিনিট সময় লেগেছে।’
মহাখালীর সিএনজি চালক রফিক আলী বলেন, ‘গত কয়েকদিন যাবতই রাস্তায় গাড়ি বেশি। আজকে সিটি সার্ভিস নামায় আমরা খুব বেকাদায় পড়েছি। মহাখালী থেকে গুলিস্তানে একজন যাত্রীকে নিয়ে গেছি দেড় ঘণ্টায়।’
বাংলামোটর ট্রাফিক সার্জেন্ট মাহমুদুল হাসান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাংলামোটর, মগবাজার, কাকরাইল আশেপাশের সড়কগুলোতে কিছুটা যানজট কম ছিলো। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিলো। গণপরিবহন চালু করায় এমন যানজটের তীব্রতা লক্ষ করা যাচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় সর্বাত্মক লকডাউন। বন্ধ করা হয় সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রী পরিবহন।
সম্প্রতি দোকান-পাট, শপিংমল ও বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করা হয়। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গণপরিবহন চালুর দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ করেন সড়ক পরিবহন শ্রমিকরা।
পরে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে মহানগর ও জেলায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ।
নির্দেশনায় বলা হয়, আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। কোনোভাবেই মোট আসনের অর্ধেকের বেশি যাত্রী নেয়া যাবে না। সমন্বয় করে ৬০ শতাংশ বাড়ানো ভাড়ার বেশি আদায় করা যাবে না।