করোনা টেস্টের নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি , অতঃপর গ্রেপ্তার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১২:৪৭:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / 204
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে দৈনিক আড়াই হাজার টাকা বেতনে পাঁচ শতাধিক জনবল নিয়োগের বিজ্ঞাপন ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় টিকেএস গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কোভিড-১৯ র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য সারাদেশে লোক নিয়োগের নামে হাতিয়ে নিচ্ছিল কোটি কোটি টাকা, যে প্রকল্পের মেয়াদ ৯০ দিন। নজরে আসলে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ।

অভিযানে গ্রেপ্তার হয় আলামিন (ম্যানেজিং ডিরেক্টর), আবুল হাসান তুষার (চেয়ারম্যান) ও মোহাম্মদ শাহিন মিয়া (মার্কেটিং ম্যানেজার) নামের ৩ প্রতারক। ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার, আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, ট্যাক্স সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরণের জাল নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয়। গতকাল ৩১ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা ও ঝালকাঠি জেলা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানান ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বলেন, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণিতে অবস্থিত আল-রাজি কমপ্লেক্সের ২য় ফ্লোরকে নিজেদের কার্যালয় সাজিয়ে গত ১১ জুলাই একটি প্রতারক চক্র ‘টিকেএস গ্রুপের’ এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘টিকেএস হেলথ সার্ভিস’ নামক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান বানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় মন্ত্রী বরাবর আবেদন করে।

আবেদনে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪ টি জেলা, ৪৯২ টি উপজেলা এবং ৪ হাজার ৫৬২টি ইউনিয়নে বিনামূল্যে কভিড-১৯ টেস্ট করানোর জন্য তাদের মোট ৫ হাজার ১২৬ জন সম্মুখ যোদ্ধা প্রস্তুত আছে বলে আবেদনে উল্লেখ করে।

হারুন অর রশীদ বলেন, ভুঁইফোড় এই প্রতিষ্ঠানের বৈধ কোন অস্তিত্ব না থাকায় স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয় থেকে কোভিড টেস্ট, লোক নিয়োগ, ক্যাম্প স্থাপনের কোন অনুমতি তারা পাবে না প্রতীয়মান হওয়ায় প্রতারক চক্রটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে ১৯ জুলাই সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে।

এছাড়াও তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাকিয়া পারভীন এর স্বাক্ষর সীল জাল করে নিজেরাই বুথ স্থাপন, স্যাম্পল কালেকশন, লোক নিয়োগ এবং ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি দিয়ে দেয়। এই ভূয়া অনুমতি পত্রের মাধ্যমে গ্রেপ্তারা ঢাকা এবং ঝালকাঠি জেলার উপজেলা কো-অর্ডিনেটর এবং ইউনিয়নের ফিল্ড অফিসার পদে বিভিন্ন জনকে নিয়োগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত কোন রকম সনদ এবং অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও শুধু প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য এই চক্রটি এই কর্মে লিপ্ত থাকে। এ পরিকল্পনাকারী আদুল্লাহ আল আমিন CIB (CareGivers institute of Bangladesh’ এর মার্কেটিং ম্যানেজার এবং আবুল হোসেন তুষার আলফালাহ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক রিলেশনশিপ ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতো।

তিনি আরও বলেন, আব্দুল্লাহ আল আমিন এবং আবুল হাসান তুষার প্রাথমিকভাবে কোম্পানির প্রোফাইল বানানোর জন্য খরচ করে ১০০০ টাকা, বিভিন্ন লোগো সম্বলিত আবেদন পত্র প্রিন্ট করার জন্য খরচ করে এক হাজার টাকা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার জন্য ৫শত টাকা সর্বমোট ২ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করে সমগ্র বাংলাদেশে একশটি ক্যাম্প স্থাপন করে। প্রতিটি ক্যাম্প এর ডিলারশিপ দেয়ার জন্য তারা কমপক্ষে ২ লাখ টাকা করে মোট ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা করছিল। একই সঙ্গে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র/ যুবকদের মধ্য থেকে বেশ কয়েক লাখ ছাত্র যুবককে একশ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের নামে আরো কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখছিল।

জনসাধারণের উদ্দেশ্যে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, কোভিড-১৯ টেস্ট করিয়ে সেবার নামে জালিয়াতি সম্পর্কে সবাই সতর্ক থাকবেন। ফ্রি কোভিড-১৯ টেস্টের নামে কেউ কোথাও ক্যাম্প স্থাপন করলে পুলিশকে অবগত করুন, পুলিশ ব্যবস্থা নিবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

করোনা টেস্টের নামে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি , অতঃপর গ্রেপ্তার

আপডেট : ১২:৪৭:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে দৈনিক আড়াই হাজার টাকা বেতনে পাঁচ শতাধিক জনবল নিয়োগের বিজ্ঞাপন ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় টিকেএস গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কোভিড-১৯ র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য সারাদেশে লোক নিয়োগের নামে হাতিয়ে নিচ্ছিল কোটি কোটি টাকা, যে প্রকল্পের মেয়াদ ৯০ দিন। নজরে আসলে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের গুলশান বিভাগ।

অভিযানে গ্রেপ্তার হয় আলামিন (ম্যানেজিং ডিরেক্টর), আবুল হাসান তুষার (চেয়ারম্যান) ও মোহাম্মদ শাহিন মিয়া (মার্কেটিং ম্যানেজার) নামের ৩ প্রতারক। ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটার, আইডি কার্ড, ভিজিটিং কার্ড, ট্যাক্স সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরণের জাল নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয়। গতকাল ৩১ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা ও ঝালকাঠি জেলা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব তথ্য জানান ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বলেন, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণিতে অবস্থিত আল-রাজি কমপ্লেক্সের ২য় ফ্লোরকে নিজেদের কার্যালয় সাজিয়ে গত ১১ জুলাই একটি প্রতারক চক্র ‘টিকেএস গ্রুপের’ এর একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘টিকেএস হেলথ সার্ভিস’ নামক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান বানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় মন্ত্রী বরাবর আবেদন করে।

আবেদনে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪ টি জেলা, ৪৯২ টি উপজেলা এবং ৪ হাজার ৫৬২টি ইউনিয়নে বিনামূল্যে কভিড-১৯ টেস্ট করানোর জন্য তাদের মোট ৫ হাজার ১২৬ জন সম্মুখ যোদ্ধা প্রস্তুত আছে বলে আবেদনে উল্লেখ করে।

হারুন অর রশীদ বলেন, ভুঁইফোড় এই প্রতিষ্ঠানের বৈধ কোন অস্তিত্ব না থাকায় স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয় থেকে কোভিড টেস্ট, লোক নিয়োগ, ক্যাম্প স্থাপনের কোন অনুমতি তারা পাবে না প্রতীয়মান হওয়ায় প্রতারক চক্রটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে ১৯ জুলাই সম্পূর্ণ জালিয়াতি করে।

এছাড়াও তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জাকিয়া পারভীন এর স্বাক্ষর সীল জাল করে নিজেরাই বুথ স্থাপন, স্যাম্পল কালেকশন, লোক নিয়োগ এবং ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমতি দিয়ে দেয়। এই ভূয়া অনুমতি পত্রের মাধ্যমে গ্রেপ্তারা ঢাকা এবং ঝালকাঠি জেলার উপজেলা কো-অর্ডিনেটর এবং ইউনিয়নের ফিল্ড অফিসার পদে বিভিন্ন জনকে নিয়োগ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত কোন রকম সনদ এবং অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও শুধু প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য এই চক্রটি এই কর্মে লিপ্ত থাকে। এ পরিকল্পনাকারী আদুল্লাহ আল আমিন CIB (CareGivers institute of Bangladesh’ এর মার্কেটিং ম্যানেজার এবং আবুল হোসেন তুষার আলফালাহ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক রিলেশনশিপ ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতো।

তিনি আরও বলেন, আব্দুল্লাহ আল আমিন এবং আবুল হাসান তুষার প্রাথমিকভাবে কোম্পানির প্রোফাইল বানানোর জন্য খরচ করে ১০০০ টাকা, বিভিন্ন লোগো সম্বলিত আবেদন পত্র প্রিন্ট করার জন্য খরচ করে এক হাজার টাকা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার জন্য ৫শত টাকা সর্বমোট ২ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করে সমগ্র বাংলাদেশে একশটি ক্যাম্প স্থাপন করে। প্রতিটি ক্যাম্প এর ডিলারশিপ দেয়ার জন্য তারা কমপক্ষে ২ লাখ টাকা করে মোট ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা করছিল। একই সঙ্গে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ শিক্ষাবর্ষের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র/ যুবকদের মধ্য থেকে বেশ কয়েক লাখ ছাত্র যুবককে একশ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের নামে আরো কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখছিল।

জনসাধারণের উদ্দেশ্যে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, কোভিড-১৯ টেস্ট করিয়ে সেবার নামে জালিয়াতি সম্পর্কে সবাই সতর্ক থাকবেন। ফ্রি কোভিড-১৯ টেস্টের নামে কেউ কোথাও ক্যাম্প স্থাপন করলে পুলিশকে অবগত করুন, পুলিশ ব্যবস্থা নিবে।