কানাডা-বাংলাদেশ সম্পর্ক : নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর দাবি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১০:৫৭:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমাবার, ৩১ মে ২০২১
  • / 248

ছবি- সংগৃহীত।

::যুগের কন্ঠ ডেস্ক::

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর দাবি জোরালোভাবে সামনে এনেছেন কানাডায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার খলিলুর রহমান। খবরটি বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের।

তিনি বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে দুই দশক ধরে কানাডায় পালিয়ে থাকা নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি ‘দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ’।

কানডার পত্রিকা দি হিল টাইমসকে দেওয়া এক ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে খলিলুর রহমান বলেন, ‘একজন দণ্ডিত খুনিকে কানাডা আশ্রয় দিয়ে রেখেছে…২০ বছরের বেশি হতে চললো। এটা একটা অমীমাংসিত ইস্যু।’

একক বিষয় হিসেবে এটাই এখন দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে ‘গুরত্বপূর্ণ ইস্যু’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটার যদি সমাধান হয়, কানাডা-বাংলাদেশের সম্পর্ক এযাবৎকালের সবচেয়ে ভালো অবস্থায় পৌঁছাতে পারে।’

মুক্তিযুদ্ধের চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সেই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরও কয়েকজন পলাতক থেকে যান, যাদের একজন হলেন এসএইচএমবি নূর চৌধুরী। তাকে দেশে ফেরানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে, কিন্তু তাতে কোনো ফল আসেনি।

নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী ১৯৯৬ সালে সেদেশে যাওয়ার পর উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন করেন। কিন্তু গুরুতর অপরাধে সংশ্লিষ্টতার তথ্য থাকায় ২০০২ সালে তাদের আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে কানাডা। এরপর আপিল করেও ২০০৬ সালে তারা হেরে যান। তারপরও তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়নি।

এ অবস্থায় মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা কীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন, সেই অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য দেশটির সরকারের কাছে চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কানাডার আইনে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে প্রত্যর্পণে বাধা থাকায় সে দেশের সরকার ‘জনস্বার্থ রক্ষার’ যুক্তি দিয়ে তথ্য প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল।

২০১৯ সালে এক রায়ে কানাডার ফেডারেল আদালত সিদ্ধান্ত দেয়, নূর চৌধুরীর অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে জনস্বার্থের ব্যাঘাত ঘটবে না। সুতরাং তার বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কানাডা সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আদালতের ওই আদেশের পর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কানাডা সরকার এখনও নূর চৌধুরীর অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি বলে হিল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান খলিলুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ ও ২০১৮ সালে কানাডা সফরের সময় প্রবাসীদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নূর চৌধুরীকে ফেরানোর প্রসঙ্গ প্রকাশ্যেই সামনে এনেছিলেন। দ্বিতীয়বারের সফরে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকেও তিনি ওই প্রসঙ্গ তোলেন। তবে এরপর গত তিনবছরে কোনো সুখবর বাংলাদেশ পায়নি।

খলিলুর রহমান বলেন, এই খুনিকে অবশ্যই ফেরত পাঠাতে হবে। সে যেখান থেকে এসেছিল, কানাডা সরকার তাকে সেখানে ফেরত পাঠাতে পারে। সে এখানে (কানাডা) এসেছিল আমেরিকা থেকে। তাকে সেখানেই পাঠিয়ে দেওয়া হোক, অথবা যে কোনো জায়গায়। তাকে কানাডার মাটিতে আশ্রয় দিয়ে রাখবেন না।

তিন দশক ধরে পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা খলিলের মতে, নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর জন্য কানাডা সরকারের হাতে অনেক ধরনের বিকল্প থাকলেও দেশটির সরকার সেগুলো বিবেচনা করছে না। কানাডায় বাংলাদেশের হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসা কূটনীতিকরা নূর চৌধুরীকে ফেরানোর বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে গেছেন বরাবরই। কিন্তু খলিলুর রহমানই প্রথম হাই কমিশনার যাকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সামনে এ বিষয়ে উচ্চকণ্ঠ হতে দেখা গেল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তী সময়ে আইন করে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথও রুদ্ধ করে দেয় পঁচাত্তর–পরবর্তী সরকার।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বন্ধ হয়ে যায় এ মামলার বিচারকাজ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর মামলার বিচারকাজ ফের শুরু হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

কানাডা-বাংলাদেশ সম্পর্ক : নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর দাবি

আপডেট : ১০:৫৭:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমাবার, ৩১ মে ২০২১
::যুগের কন্ঠ ডেস্ক::

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর দাবি জোরালোভাবে সামনে এনেছেন কানাডায় বাংলাদেশের হাই কমিশনার খলিলুর রহমান। খবরটি বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের।

তিনি বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে দুই দশক ধরে কানাডায় পালিয়ে থাকা নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি ‘দুই দেশের সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ’।

কানডার পত্রিকা দি হিল টাইমসকে দেওয়া এক ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে খলিলুর রহমান বলেন, ‘একজন দণ্ডিত খুনিকে কানাডা আশ্রয় দিয়ে রেখেছে…২০ বছরের বেশি হতে চললো। এটা একটা অমীমাংসিত ইস্যু।’

একক বিষয় হিসেবে এটাই এখন দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে ‘গুরত্বপূর্ণ ইস্যু’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটার যদি সমাধান হয়, কানাডা-বাংলাদেশের সম্পর্ক এযাবৎকালের সবচেয়ে ভালো অবস্থায় পৌঁছাতে পারে।’

মুক্তিযুদ্ধের চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সেই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরও কয়েকজন পলাতক থেকে যান, যাদের একজন হলেন এসএইচএমবি নূর চৌধুরী। তাকে দেশে ফেরানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে, কিন্তু তাতে কোনো ফল আসেনি।

নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী ১৯৯৬ সালে সেদেশে যাওয়ার পর উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন করেন। কিন্তু গুরুতর অপরাধে সংশ্লিষ্টতার তথ্য থাকায় ২০০২ সালে তাদের আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে কানাডা। এরপর আপিল করেও ২০০৬ সালে তারা হেরে যান। তারপরও তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়নি।

এ অবস্থায় মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা কীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন, সেই অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য দেশটির সরকারের কাছে চেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু কানাডার আইনে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে প্রত্যর্পণে বাধা থাকায় সে দেশের সরকার ‘জনস্বার্থ রক্ষার’ যুক্তি দিয়ে তথ্য প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল।

২০১৯ সালে এক রায়ে কানাডার ফেডারেল আদালত সিদ্ধান্ত দেয়, নূর চৌধুরীর অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে জনস্বার্থের ব্যাঘাত ঘটবে না। সুতরাং তার বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কানাডা সরকারকে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। আদালতের ওই আদেশের পর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও কানাডা সরকার এখনও নূর চৌধুরীর অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি বলে হিল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান খলিলুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ ও ২০১৮ সালে কানাডা সফরের সময় প্রবাসীদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নূর চৌধুরীকে ফেরানোর প্রসঙ্গ প্রকাশ্যেই সামনে এনেছিলেন। দ্বিতীয়বারের সফরে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকেও তিনি ওই প্রসঙ্গ তোলেন। তবে এরপর গত তিনবছরে কোনো সুখবর বাংলাদেশ পায়নি।

খলিলুর রহমান বলেন, এই খুনিকে অবশ্যই ফেরত পাঠাতে হবে। সে যেখান থেকে এসেছিল, কানাডা সরকার তাকে সেখানে ফেরত পাঠাতে পারে। সে এখানে (কানাডা) এসেছিল আমেরিকা থেকে। তাকে সেখানেই পাঠিয়ে দেওয়া হোক, অথবা যে কোনো জায়গায়। তাকে কানাডার মাটিতে আশ্রয় দিয়ে রাখবেন না।

তিন দশক ধরে পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা খলিলের মতে, নূর চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর জন্য কানাডা সরকারের হাতে অনেক ধরনের বিকল্প থাকলেও দেশটির সরকার সেগুলো বিবেচনা করছে না। কানাডায় বাংলাদেশের হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসা কূটনীতিকরা নূর চৌধুরীকে ফেরানোর বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে গেছেন বরাবরই। কিন্তু খলিলুর রহমানই প্রথম হাই কমিশনার যাকে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সামনে এ বিষয়ে উচ্চকণ্ঠ হতে দেখা গেল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পরবর্তী সময়ে আইন করে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথও রুদ্ধ করে দেয় পঁচাত্তর–পরবর্তী সরকার।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বন্ধ হয়ে যায় এ মামলার বিচারকাজ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর মামলার বিচারকাজ ফের শুরু হয়।