ঘুষ-দুর্নীতির নেশায় আসক্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আহসান হাবিব। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
টেন্ডার-বাণিজ্যের অভিযোগে তাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা প্রশাসনিক ভবনে বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে বদলি করা হয়। এখানে নিয়োগ পেয়েই পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর প্রমান মিলেছে। তার অধীনস্থ কর্মচারীরা বলছে আহসান হাবিবের ঘুষ-বাণিজ্যই হলো মূল নেশা।
তার যোগসাজশে নরসিংদীর এইএন আবু হানিফ পাশা,পিডাব্লু জুলহাস মাহমুদ,হেড মেইট উজ্জ্বল ও বড় বাবু কামাল সরকার রাষ্ট্রের সম্পদ লুটপাট করে খাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্রে জানা যায়, মাসিক হাজিরায় যা বেতন আসে তা ডিএন-২সহ সবাই ভাগবাটোয়ারা করে নেন। রেলের ৫ জন নারী-পুরুষ ওয়েম্যানকে মাসিক ১২ হাজার টাকায় প্রাইভেট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানে মাসিক হাজিরায় জনবল সরবরাহ করে বলে ঢাকা ডিএন-২ হাবিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে নরসিংদী সেকশনে ৭টি গ্যাং থেকে ৫ জন মাসিক হাজিরায় যাদের দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে আমেনা বেগম গ্যাং নং ৪৯, ইয়াসমিন বেগম গ্যাং নং ৪৭ মনিরুল ইসলাম গ্যাং নং ৪৬, মিনহাজ গ্যাং নং ৪৪ এবং পারভিন বেগম গ্যাং নং ৪৩। তারা রেলের ওয়েম্যান কিন্তু চুক্তিতে কাজ করায় বাহিরে। তাদের পক্ষে রেললাইনে বসেই সরকারি হাজিরা সিটে স্বাক্ষর করেন কুলাউড়া বরমচাল গ্যাং-এর মেইট সোহেল। এই সেকশনের দায়িত্বের রয়েছেন পিডব্লু মোজাম্মেল হোসেন। রেলের চুরি করা মালামাল বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি হয় ডিএন-টু পর্যন্ত। যা দেখার কেউ নেই।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, দাপ্তরিক প্রাক্কলন অনুমোদন না নিয়েই প্রচুর কাজের দরপত্র আহ্বান এবং এসব কাজের বিনিময়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন আহসান হাবিব। কাজ না করিয়েই কিছু ঠিকাদারকে বিল তুলে দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া মাটি ভরাটে অনিয়ম এবং রেলওয়ের গাছ কেটে টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসব অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে প্রাথমিকভাবে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
সূত্র জানায়, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ হিসেবে কর্মরত অবস্থায় দাপ্তরিক প্রাক্কলন অনুমোদন না নিয়েই ৮২টি দরপত্র আহ্বান করেন আহসান হাবিব। এর মধ্যে অধিকাংশ বাসাবাড়ি ও ড্রেন মেরামত, রেল ফেলিং, পাইপলাইন মেরামতের মতো কম গুরুত্বপূর্ণ, অপ্রয়োজনীয় এবং লুকায়িত কাজ। এসব কাজের প্রতিটির জন্য তিনি দুই লাখ টাকা নেন বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছ থেকে। এছাড়া কাজের জন্য যে বাজেট প্রয়োজন, তা সেই সময় বরাদ্দ ছিল না। এসব কাজের অধিকাংশের প্রয়োজনীয়তাও ছিল না। তবুও সেসব কাজ কোনোটি বাতিল হয়নি, ধীরে ধীরে সেগুলোর চুক্তি করে কাজ না করিয়েই ঠিকাদারদের বিলও দেওয়া হয়। এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও প্রতিবেদনে এসব বিষয় আমলে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠে।
জানা যায়, পরিকল্পিতভাবে সেসব অবৈধ দরপত্র বৈধতা দেওয়া হয়। সে সময় চট্টগ্রাম অফিসের কর্মকর্তা আবু হানিফ পাশা এবং পাহাড়তলী কার্যালয়ের কর্মকর্তা সোহেল রানার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলেও তারা এখনও বহাল তবিয়তে আছেন। এসব অনিয়মে পূর্বাঞ্চলের তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ট্র্যাক) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। তিনি বর্তমানে ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক। ফলে দুর্নীতির ধারাবাহিক অভিযোগ থাকলেও আহসান হাবিবকে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হয়েছে।মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় তাকে বদলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।
ঢাকার বিভাগীয় প্রকৌশলি (ডিএন-২) আহসান হাবিবের সহযোগিতায় রেলওয়ের নাটবল্টু প্লেটসহ গুরুত্বপূর্ণ চুরি হওয়া মালামাল বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি হয় এইএন,পিডব্লু এবং ডিএন-টু পর্যন্ত। এত দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িত থাকা সত্ত্বেও আহসান হাবিবকে গুরুত্বপূর্ণ পদায়নে ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ কলকাঠি নেড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মহিউদ্দিন আরিফ এবং ঢাকা ডিএন টু হাসান হাবিব সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এই বিষয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তথ্য-প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
