মঙ্গলবার, ১১ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সহজ স্কিন কেয়ার রুটিন

অনলাইন ডেস্ক
অক্টোবর ১৭, ২০২৫ ৩:৪২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা খুব সাধারণ। সারাদিন মুখে তেলতেলে ভাব, হঠাৎ হঠাৎ ব্রণ ওঠা — এসব অনেকেরই পরিচিত সমস্যা। তবে চিন্তা করার কিছু নেই! সঠিক যত্ন নিলে ত্বক অনেক সুন্দর ও পরিষ্কার রাখা সম্ভব।

এখানে খুবই সহজ একটি ৪ ধাপের স্কিন কেয়ার রুটিন দেওয়া হলো, যা আপনি প্রতিদিন সকাল ও রাতে করতে পারেন।

তৈলাক্ত ত্বকের যত্নের ৪টি ধাপ

– মুখ ধুতে হবে এক্সফোলিয়েটিং ফেসওয়াশ দিয়ে, সকাল ও রাতে।

– টোনার ব্যবহার করুন, যাতে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড বা ল্যাকটিক অ্যাসিড থাকে।

১. মুখ ধোয়া – সকাল ও রাতে

মুখ পরিষ্কার করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তৈলাক্ত ত্বকে বেশি তেল জমে, তাই দিনে দুবার ভালোভাবে মুখ ধুতে হবে।

রাতের ঘুমের সময় ত্বকে তেল আর মৃত কোষ জমে — তাই সকালেও মুখ ধোয়া জরুরি। এক্সফোলিয়েটিং ফেসওয়াশ বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করলে ভালো।

২. টোনার ব্যবহার

মুখ ধোয়ার পর টোনার ব্যবহার করলে ত্বক আরও পরিষ্কার হয়, রোমছিদ্র ছোট দেখায়, আর তেল নিয়ন্ত্রণে থাকে।

যে টোনারগুলোতে নিচের উপাদান থাকে, সেগুলো ভালো :

– স্যালিসাইলিক অ্যাসিড

– গ্লাইকোলিক অ্যাসিড

– ল্যাকটিক অ্যাসিড

৩. ত্বকের ট্রিটমেন্ট

এই ধাপটা আপনার ত্বকের সমস্যার উপর নির্ভর করে। ব্রণ হলে বেনজয়েল পারঅক্সাইড বা সালফার ব্যবহার করতে পারেন (দিনে)। রাতে রেটিনল ব্যবহার করলে রোমছিদ্র পরিষ্কার থাকে, ত্বক উজ্জ্বল দেখায়।

একটা ভালো দিক হলো — তৈলাক্ত ত্বকে বয়সের ছাপ তুলনামূলকভাবে দেরিতে পড়ে!

৪. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার – সকালে ও রাতে

অনেকেই মনে করেন, তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার দরকার নেই। কিন্তু এটা ভুল ধারণা।

ত্বকে যদি ঠিকমতো আর্দ্রতা না থাকে, তাহলে উল্টো বেশি তেল বের হতে শুরু করে।

সঠিক ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন

– হালকা ও পাতলা

– তেলমুক্ত

– রোমছিদ্র বন্ধ না করে এমন (non-comedogenic)

– জলভিত্তিক (water-based)

ব্রণ হলে কী করবেন?

– তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হওয়া খুবই সাধারণ। কিন্তু ত্বক শুকিয়ে ফেলা যাবে না।

– স্যালিসাইলিক অ্যাসিড : রোমছিদ্র পরিষ্কার করে, লালভাব কমায়।

– বেনজয়েল পারঅক্সাইড : ব্যাকটেরিয়া মারে, কিন্তু ত্বক শুকিয়ে ফেলতে পারে। তাই ধীরে ধীরে শুরু করুন।

এগুলো কাজ না করলে, স্কিন স্পেশালিস্ট দেখান। তারা Isotretinoin (Accutane) নামের ওষুধ দিতে পারেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে, কিছু সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ার পর ব্রণ ও তেলভাব কমে যেতে পারে– তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

প্রাকৃতিক উপাদান যেগুলো কাজে লাগতে পারে

যদি আপনি ঘরোয়া উপায় পছন্দ করেন, নিচের প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ট্রাই করতে পারেন :

মধু – জীবাণুনাশক, ব্রণ কমায়।

ওটমিল – ত্বকের লালভাব কমায়, অতিরিক্ত তেল শোষণ করে।

জোজোবা তেল – হালকা ময়েশ্চার দেয়, রোমছিদ্র বন্ধ করে না।

তবে মনে রাখবেন, প্রাকৃতিক মানেই সবসময় ভালো — এমনও না। সবার ত্বক আলাদা।

দামি প্রোডাক্ট লাগবে না

ভালো স্কিন কেয়ারের জন্য অনেক টাকা খরচ করতে হবে — এটা ভুল। ফার্মেসি বা ড্রাগস্টোরে অনেক ভালো, কম দামের প্রোডাক্ট পাওয়া যায়। খেয়াল রাখুন প্রোডাক্টে যেন কার্যকর উপাদান থাকে, আর রিভিউ দেখে কিনুন।

ছেলেদের জন্য পরামর্শ

পুরুষদের ত্বকের যত্নও একইরকম। শুধু পার্থক্য হলো — ছেলেরা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেতে পারে না। বাকিটা একদম একই।

যেসব ভুল এড়িয়ে চলবেন

চেহারার তেল না মুছে ফেলা – ব্লটিং পেপার দিয়ে হালকা চাপ দিয়ে তেল মুছে ফেলুন।

ব্যায়ামের পর মুখ না ধোওয়া – ঘাম, তেল ও ময়লা জমে ব্রণ হতে পারে। ব্যায়ামের পর মুখ ধুয়ে নিন।

ভুল প্রোডাক্ট ব্যবহার – অ্যালকোহলযুক্ত বা ভারী (যেমন ভ্যাসলিন, কোকো বাটার) প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলুন।

সানস্ক্রিন না লাগানো – রোদে বের হলে SPF ৩০ বা তার বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। Zinc oxide বা Titanium dioxide থাকলে ব্রণও কমে।

সাবধানে ব্যবহার করুন

বেনজয়েল পারঅক্সাইড বা স্যালিসাইলিক অ্যাসিড বেশি ব্যবহার করলে ত্বকে জ্বালা বা লালভাব হতে পারে। ধীরে ধীরে শুরু করুন। Isotretinoin জাতীয় বড়ি অবশ্যই ডাক্তার দেখিয়ে খেতে হবে।

কখন ডার্মাটোলজিস্ট দেখানো দরকার?

যদি সব চেষ্টা করেও ত্বকের সমস্যা না কমে, তাহলে দেরি না করে একজন স্কিন স্পেশালিস্ট দেখান। প্রত্যেকের ত্বক আলাদা — তাই কারও জন্য যেটা কাজ করে, আপনার জন্য নাও করতে পারে।

তৈলাক্ত ত্বক সামলানো কঠিন না — শুধু নিয়ম করে যত্ন নিতে হবে।

মনে রাখবেন

– দিনে দুবার মুখ ধুতে হবে

– টোনার ব্যবহার করুন

– ত্বক ট্রিট করুন

– হালকা ময়েশ্চারাইজার লাগান

– সানস্ক্রিন ভুলবেন না

সঠিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন, ধৈর্য ধরুন, আর দরকার হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তাহলেই আপনার ত্বক থাকবে পরিষ্কার, স্বাস্থ্যকর আর ব্রণমুক্ত।

সূত্র : হেলথলাইন