শনিবার, ২৫শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

যুক্তরাষ্ট্রে দীপাবলি উৎসবকে কেন্দ্র করে সামাজিকমাধ্যমে সমালোচনার ঝড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
অক্টোবর ২৪, ২০২৫ ৩:৫৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে এবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দীপাবলি উৎসবে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ওভাল অফিসেও দীপাবলি উৎসবের আয়োজন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এই উদযাপন নিয়ে বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্যের (হেট স্পিচ) ঝড় ওঠে। টার্গেট ছিলেন দীপাবলি উৎসব পালনকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। ‘মেক অ্যামেরিকা গ্রেট এগেইন’ বা মাগা

ক্যাম্পেইনের সদস্য এবং উগ্র-ডানপন্থিরা দাবি করেন, এই উৎসব যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব নয়। তারা একে ‘অ-আমেরিকান’ ও ‘দানবীয়’ বলে অভিহিত করেন।

সামাজিকমাধ্যমে ‘হেট স্পিচ’ বা ‘ঘৃণাপুর্ণ মন্তব্য’ ছড়িয়ে দেন হিন্দুত্ববাদী ও দিপাবলী উৎসব পালনকারীদের বিপক্ষে। পাশাপাশি এই উৎসব উদযাপনকারীদের যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে যাওয়ার দাবি জানান তারা।

এমনকি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনরাও এই আক্রমণ থেকে বাদ যাননি। দীপাবলির শুভেচ্ছা জানানোর পর অনলাইনে আক্রমণের শিকার এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল এবং জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক ও সাবেক কংগ্রেস সংদস্য তুলসী গ্যাবার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

ভারতীয় বংশোদ্ভূত এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল এবং জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড দু’জনেই সামাজিকমাধ্যম এক্সে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানান। এরপরই ‘হেট স্পিচে’ ভরে ওঠে মন্তব্যের ঘর।

তুলসি গ্যাবার্ড দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখেন, ‘ঈশ্বরের ভালোবাসার আলো আমাদের পথ দেখাক এবং সন্দেহের ছায়া দূর করুক এবং আমাদের সকল কাজে তার ভালোবাসা প্রতিফলিত করতে অনুপ্রাণিত করুক।’

এই পোস্ট দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মন্তব্যের ঘর দ্রুত ভরে ওঠে ঘৃণাপূর্ণ মন্তব্যে। অনেকে বিদ্বেষমূলক মিম শেয়ার করেন। আবার অনেকে লেখেন, ‘দানব ঈশ্বর’, ‘আমার দেশ থেকে বেরিয়ে যাও’। এমনকি একজন লেখেন, ‘দীপাবলি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো উৎসব নয়, ভারতে চলে যাও’।

কাশ প্যাটেলেও অনলাইনে একই ধরনের হয়রানির শিকার হন। তার দীপাবলির শুভেচ্ছা পোস্টে নানা ধরনের নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়। যেমন ‘তোমাকে নির্বাসিত করা উচিৎ’, ‘এটি যুক্তরাষ্ট্র, আমরা দীপাবলি উদযাপন করি না।’

ঘৃণা এখানেই থেমে থাকেনি। সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নিকি হ্যালি, যার বাবা-মা ভারতীয় শিখ ধর্মাবলম্বী, পরবর্তীতে খ্রীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি তার অনুসারিদের দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিকমাধ্যমে আক্রমণের শিকার হন।

একজন লেখেন, ‘কী নিকি, ভারত প্রথমে?’

একজন লেখেন, ‘তোমার দানবকে নিয়ে তুমি ভারতে চলে যাও’। তাকে পৌত্তলিক বলেও গালি দেন কেউ কেউ।

হাস্যকরভাবে, যখন এইসব ঘটছিল, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ওভাল অফিসের ভেতরে কাশ প্যাটেল এবং বেশ কয়েকজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নির্বাহীর সাথে প্রদীপ জ্বালাতে দেখা যায়। তবে এই সৌজন্যতা তার সমর্থকদের মধ্যে দেখা যায়নি।

ব্রিটিশ-অ্যামেরিকান সাংবাদিক মেহেদি হাসান কিছু বিদ্বেষপূর্ণ পোস্ট শেয়ার করেছেন। একে তিনি ফ্রাঙ্কেস্টাইন পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি লেখেন, মাগা নেতারা যাদের তৈরি করেছেন, তাদের কাছ থেকেই এখন তারা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।

যারা ঘৃণা ছড়িয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম কন্সিটিটিউশনাল এটর্নি ব্র্যাডলি পিয়ার্স। সপ্তাহজুড়ে তিনি এক্সে একাধিক বিদ্বেষমূলক পোস্ট করেছেন। এরমধ্যে রয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে মহান করে তোলার অর্থ, আমাদের দেশে মূর্তিপূজার জন্য অনুতপ্ত হওয়া উচিত, তা উদযাপন না করে।’ আরেকটি পোস্ট ছিলো ‘দীপাবলি হচ্ছে একটি পৈশাচিক ভুয়া ঈশ্বরের আরাধনা। কোনো খ্রীষ্টানের এটা উদযাপন করা উচিৎ নয়।’

এদিকে, ক্রিস্টিয়ান ন্যাশনালিস্ট যাজক জো ওয়েবনও এদের সাথে শামিল হয়েছেন। তিনি সামাজিকমাধ্যমে লেখেন, ‘কাগুজে মার্কিনিরা প্রকৃত মার্কিনি নন, আমি তাদের ছুটির দিনকে সম্মান করি না। আমি তাদের ভুয়া ঈশ্বর ও মূর্তীকে শ্রদ্ধা করিনা।’

এমনকি তিনি কাশ প্যাটেলকে সরাসরি আক্রমণ করেন। তিনি লেখেন, ‘বাড়ি ফিরে যাও এবং বালির দানবকে পূজা কর’।

যুক্তরাষ্ট্রে একদিকে দীপাবলিতে সরকারি ‍ছুটি ঘোষণা করা হচ্ছে, অন্যদিকে এই উৎসবকে ঘিরে বিভক্তির আগুনে ঘি ঢালছেন অনেকে। অনেকে একে দেখছেন ধর্মীয় সহনশীলতার পরীক্ষা হিসেবে। সব মিলিয়ে একটি বিষয় পরিস্কার, দীপাবলির প্রতি এই ঘৃণা একটি বড় ধরনের বিতর্কর দরজা খুলে দিয়েছে- আর তাহলো, ‘আমেরিকান হওয়া বলতে আসলে কী বোঝায়?’

সূত্র: মিন্ট