মঙ্গলবার, ২১শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে চলছে ‘পবিত্র সৌন্দর্যের সন্ধানে: মলয় বালার ভক্তিমূলক শিল্প’

বিনোদন রিপোর্টার
অক্টোবর ২১, ২০২৫ ১:১৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাংলার প্রাচ্য-চিত্রকলার ঐতিহ্য, আধ্যাত্মিকতা ও নন্দনতত্ত্বের এক অনন্য মেলবন্ধনে শুরু হয়েছে অধ্যাপক মলয় বালার একক চিত্রপ্রদর্শনী ‘পবিত্র সৌন্দর্যের সন্ধানে: মলয় বালার ভক্তিমূলক শিল্প’। প্রদর্শনীর কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মিখাইল ইদ্রিস, লার্নিং ডিজাইনার, লার্নিং ডিজাইন স্টুডিও।

প্রদর্শনীটি উৎসর্গ করা হয়েছে বিশিষ্ট ভাস্কর, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীকে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন, চিত্রশিল্পী সমর মজুমদার এবং লেখক ও গবেষক শরিফা আক্তার।

১৮ শুরু হয়ে ১১ দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী চলবে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে ২৮শে অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত, রবিবার ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

মলয় বালা ১৯৭৮ সালে গোপালগঞ্জ জেলার রামশীল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোরের প্রাকৃতিক পরিবেশই গড়ে তুলেছে তাঁর শিল্পচেতনা ও নন্দনবোধের ভিত্তি। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। ২০১৪ সালে তিনি ‘বাংলার প্রাতিষ্ঠানিক প্রাচ্য-চিত্রকলার ধারা’ শীর্ষক গবেষণার জন্য পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

এ পর্যন্ত শিল্পী মলয় বালার তিনটি একক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে ‘প্রাচ্যগৃহ : আমার শিল্পজগৎ’ (২০০৭),

‘শকুন্তলার পুনর্মিলনী’ (২০১৫) এবং ‘পবিত্র সৌন্দর্যের সন্ধানে: মলয় বালার ভক্তিমূলক শিল্প’ (২০২৫)।

শিল্পী মলয় বালা বলেন, ‘আমি আঁকি ঈশ্বরের সান্নিধ্য খুঁজে পেতে, ধ্যান করতে এবং তাঁর আরও কাছাকাছি যেতে। আমার হৃদয় অনুভব করে ঐশ্বরিক সত্তাকে–পবিত্র পুরাণে, আমাদের আধ্যাত্মিক গুরুশ্রেষ্ঠদের মধ্যে, প্রকৃতির পবিত্র সৌন্দর্যে এবং নারীর মর্যাদাময় অনুগ্রহে–যা আমি আমার চিত্রে প্রকাশ করার চেষ্টা করি।’

বর্তমান প্রদর্শনীতে মোট আশিটি শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হবে, যা চারটি পর্ব বা বিষয়ে বিন্যস্ত—শকুন্তলা, ধর্ম, নারী ও প্রকৃতি। ‘শকুন্তলা’ পর্বে রয়েছে পৌরাণিক চরিত্র ও শকুন্তলার জীবনোপাখ্যান। এই ধারার চিত্রে বট গাছের শিকড়মধ্যস্থ অবয়ব-প্রধান কাজ তার স্বকীয় পরিচয় বহন করে। ‘ধর্ম’ পর্বে রয়েছে ধর্মগুরু বুদ্ধ, শ্রীকৃষ্ণ, দেবী দুর্গা ও অন্যান্য। ‘নারী’ পর্বের কাজ দৃশ্যত ফিগারেটিভ। ‘প্রকৃতি’ পর্বের কাজে ওঠে এসেছে পশু-পাখি ও ল্যান্ডস্কেপ।

শিল্পী মলয় বালার শিল্পচর্চা আধ্যাত্মিকতার গভীর অন্বেষণ—যেখানে তিনি শিল্পের মাধ্যমে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে চান, সাধনা করেন, ধ্যান করেন। তাঁর শিল্প যেন একেকটি প্রার্থনা, একেকটি নিবেদন—যেখানে শিল্পী নিজেকে সমর্পণ করেন সেই পরম শক্তির কাছে, যিনি তাঁর মাধ্যমে সৃষ্টি সম্পন্ন করেন।

কিউরেটর মিখাইল ইদ্রিস প্রদর্শনী সম্পর্কে বলেন, ‘শিল্পী মলয় বালার শিল্পসাধনা প্রকাশ করে এক আধ্যাত্মিক প্রেরণাকে, যা পৃথিবী, প্রকৃতি ও জীবজগৎকে পবিত্র আলোর মধ্যে উদ্ভাসিত করতে চায়। তাঁর শিল্প রহস্যময়ভাবে আত্মার ঐশ্বরিক মিলনের আকাঙ্ক্ষাকে পুনরায় জাগিয়ে তোলে।’

এই প্রদর্শনী মূলত প্রাচ্যধারার কাজ দিয়েই সাজানো হয়েছে। যেখানে জলরং ধৌত (wash) পদ্ধতির কাজই বেশি। গোয়াশ, টেম্পারা, অ্যাক্রেলিক মাধ্যমের কাজও রয়েছে। শিল্পীর অ্যাক্রেলিক মাধ্যমের কাজগুলো দেখতে অনেকটা জলরং ওয়াশ পদ্ধতির কাজের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

একক প্রদর্শনীর এ আয়োজনের সঙ্গে আরও থাকবে ঐতিহ্যবাহী বাংলা সংগীত পরিবেশনা, লোক ও প্রাচ্য শিল্পকর্ম-বিষয়ক কর্মশালা এবং শিল্পীর সঙ্গে কথোপকথন।

উল্লেখ্য, প্রদর্শিত শিল্পকর্মসমূহ মাঝে মাঝে সংযোজন-বিয়োজন করা হবে। ফলে দর্শকরা প্রতিদিনই নতুন শিল্পস্বাদ গ্রহণ করতে পারবেন। প্রদর্শনী চলাকালীন ধারাবাহিকভাবে যন্ত্রশিল্পীদের (বাঁশের বাঁশি, দোতারা, একতারা, সারিন্দা, খমক, বেহালা, সেতার, সারেঙ্গী, প্রভৃতি) একক পরিবেশনা অব্যাহতভাবে রাখার চেষ্টা করা হবে।