রবিবার, ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জলবায়ু পরিবর্তন : ধুলোবালিতে বছরে ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু

এ বি রহমান
জুলাই ১৫, ২০২৫ ১:৪৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে ধুলোবালি ও বালুঝড় ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব ধুলিঝড়ের কারণে প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ১৫০টি দেশে প্রায় ৩৩ কোটি মানুষ এ ধরনের ঝড়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

গত শনিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ‘আন্তর্জাতিক ধুলিঝড় প্রতিরোধ দিবস’ পালন করেছে। একই সঙ্গে ২০২৫ থেকে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত সময়কে ‘ধুলিঝড় প্রতিরোধের দশক’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ পরিষদের সভাপতি ফিলেমোন ইয়াং বলেন, “ধুলিঝড় এখন বিশ্বের সবচেয়ে অবহেলিত, অথচ ভয়াবহ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমি অবক্ষয় ও অস্থায়ী কৃষিপ্রথা এই সংকটকে আরও তীব্র করছে।”

ডব্লিউএমও মহাসচিব সেলেস্টে সাওলো বলেন, ধুলিঝড় শুধু জানালা ধুলায় ঢেকে দেওয়া বা আকাশ ঝাপসা করে দেওয়ার ঘটনা নয়—এটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্য, জীবিকা ও পরিবেশের জন্য সরাসরি হুমকি। এসব ঝড়ের কারণে পরিবহন, কৃষি, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনসহ নানা খাতে বড় ক্ষতি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

জাতিসংঘের প্রতিনিধি লরা প্যাটারসনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ২ বিলিয়ন টন ধুলো বাতাসে মিশে যায়, যার ওজন মিসরের বিখ্যাত গিজার প্রায় ৩০০টি পিরামিডের সমান। এই ধুলোর প্রায় ৮০ শতাংশই উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়। বাতাসে ভেসে এই ধুলো আফ্রিকা থেকে আমেরিকার ক্যারিবিয়ান অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

জাতিসংঘের আঞ্চলিক কমিশনের প্রধান রোলা দাস্তি জানান, শুধু মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ধুলিঝড় মোকাবিলায় প্রতি বছর গড়ে ১৫০ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়—যা ওই অঞ্চলের মোট জিডিপির প্রায় ২.৫ শতাংশ। সম্প্রতি বসন্ত মৌসুমেই ইরাক, কুয়েত ও ইরানে ভয়াবহ ধুলিঝড় দেখা দিয়েছে, যার ফলে স্কুল, অফিস বন্ধ রাখতে হয়েছে এবং হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ২.৯ বিলিয়ন মানুষ ধুলিকণার নিরাপদ সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যা ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৮ বিলিয়নে—অর্থাৎ প্রায় বিশ্বের অর্ধেক মানুষ এখন এই ঝুঁকিতে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রেও ধুলিঝড়ের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৭ সালে দেশটিতে ধুলো ও বায়ু ক্ষয়ের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা ১৯৯৫ সালের তুলনায় চার গুণ বেশি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ধুলিঝড়ের ঝুঁকি কমাতে এখনই টেকসই ভূমি ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব কৃষিপদ্ধতি ও আধুনিক পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি। অন্যথায়, ভবিষ্যতে এই সংকট আরও প্রাণঘাতী ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।