রবিবার, ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ : বাড়ছে দুর্যোগ, উদ্বাস্তু ও উষ্ণতা

আলাউদ্দীন মিয়া
জুলাই ৯, ২০২৫ ৪:২৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে পৃথিবীজুড়ে ধুলা ও বালিঝড় এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ধুলিঝড়গুলো বছরে প্রায় ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ১৫০টি দেশে প্রায় ৩৩ কোটি মানুষ এসব ঝড়ের সরাসরি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

গত শনিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ আন্তর্জাতিক ধুলিঝড় প্রতিরোধ দিবস পালন করেছে। একই সঙ্গে ২০২৫ থেকে ২০৩৪ সালকে ঘোষণা করা হয়েছে ‘ধুলিঝড় প্রতিরোধের দশক’ হিসেবে।
সাধারণ পরিষদের সভাপতি ফিলেমোন ইয়াং বলেন, “ধুলিঝড় এখন বিশ্বের অন্যতম অবহেলিত কিন্তু মারাত্মক বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমি অবক্ষয় ও অস্থায়ী কৃষিপদ্ধতি এই সংকটকে আরও তীব্র করছে।”

ডব্লিউএমও মহাসচিব সেলেস্টে সাওলো সতর্ক করে বলেন, “ধুলিঝড় মানে শুধু জানালায় ধুলো জমা নয়, এটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও জীবনের মানের ওপর সরাসরি আঘাত।”
তিনি জানান, ধুলিঝড়ের কারণে পরিবহন, কৃষি, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও জনস্বাস্থ্যে ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও হৃদরোগের রোগী।

জাতিসংঘ প্রতিনিধি লরা প্যাটারসন জানান, প্রতি বছর প্রায় ২ বিলিয়ন টন ধুলা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে—যার ওজন মিসরের গিজার ৩০০টি পিরামিডের সমান!
এই ধুলোর ৮০ শতাংশই আসে উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমি অঞ্চল থেকে। শক্তিশালী বাতাসে এসব ধুলা হাজার কিলোমিটার দূর পর্যন্ত চলে যায়, এমনকি আফ্রিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যারিবিয়ান পর্যন্তও পৌঁছে যায়।

জাতিসংঘের আঞ্চলিক কমিশনের প্রধান রোলা দাস্তি জানান, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ধুলিঝড় মোকাবিলায় বছরে গড়ে ১৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়, যা ওই অঞ্চলের মোট জিডিপির প্রায় ২.৫ শতাংশ।
শুধু চলতি বসন্তেই ইরাক, কুয়েত ও ইরানে ভয়াবহ ধুলিঝড় দেখা দিয়েছে। হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে, বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল ও অফিস।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, ২০০৩-২০০৭ সালের মধ্যে বিশ্বের ২.৯ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ সীমার চেয়ে বেশি ধুলিকণার সংস্পর্শে এসেছিলেন। ২০১৮-২০২২ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৮ বিলিয়নে—অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন ধুলিঝড়জনিত ঝুঁকিতে।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ২০১৭ সালে ধুলিঝড়ের ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা ১৯৯৫ সালের তুলনায় চার গুণ বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই যদি টেকসই ভূমি ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব কৃষিপদ্ধতি এবং ধুলিঝড় পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নয়ন না করা হয়, তবে ভবিষ্যতে এই সংকট আরও প্রাণঘাতী ও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।

“ধুলিঝড় আর কেবল মরুভূমির গল্প নয়, এটি এখন বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও টেকসই উন্নয়নের সংকট।”— ডব্লিউএমও মহাসচিব সেলেস্টে সাওলো