রবিবার, ১৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জলবায়ু লক্ষ্য পূরণে কার্বন ক্রেডিটের চিন্তায় ইইউ

মোহাম্মাদ ওমর ফারুক
জুলাই ১, ২০২৫ ৫:০৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ২০৪০ সালের কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্য অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে কার্বন ক্রেডিট অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভাবছে। তবে এই প্রস্তাবকে ‘জলবায়ু দায় এড়ানোর কৌশল’ আখ্যা দিয়ে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো তীব্র আপত্তি ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

ইউরোপীয় জলবায়ু কমিশনার ওয়পকে হোকস্ট্রা জানিয়েছেন, ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলো আগামী বুধবার ব্রাসেলসে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০৪০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই–অক্সাইড নির্গমন ৯০ শতাংশ হ্রাসের লক্ষ্য নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে।

হোকস্ট্রা বলেন, “পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কোথা থেকে নয়, বরং মোট কতটা নির্গমন কমছে। আমরা চাই ইউরোপ এবং বৈশ্বিক দক্ষিণ উভয় জায়গায় কার্যকর পদক্ষেপ হোক।”

তিনি জানান, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বেশ কিছু দেশ বৃক্ষরোপণ, বন পুনরুদ্ধারসহ বিভিন্ন প্রকল্পে কার্বন ক্রেডিট বিক্রির মাধ্যমে অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে। এটি ইইউ’র ২০৫০ সালের মধ্যে ‘নিট শূন্য নির্গমন’ অর্জনের লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়ক হতে পারে।

তবে পরিবেশবাদীদের মতে, কার্বন অফসেট ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনী দেশগুলো নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিঙ্কট্যাঙ্ক এনার্জি অ্যান্ড ক্লাইমেট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট–এর আন্তর্জাতিক প্রধান গ্যারেথ রেডমন্ড কিং বলেন, “ইইউ’র মতো বড় নির্গমনকারী অঞ্চল যদি অভ্যন্তরীণ নির্গমন সর্বোচ্চভাবে কমায় না, তাহলে বৈশ্বিক জলবায়ু প্রচেষ্টা দুর্বল হয়ে পড়বে।”

তিনি আরও বলেন, এই ধরনের উদ্যোগ ইইউ’র দীর্ঘদিনের জলবায়ু নেতৃত্বের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে— এমন এক সময়ে যখন বিশ্বকে সেই নেতৃত্ব সবচেয়ে বেশি দরকার।

এর জবাবে হোকস্ট্রা জানান, উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্বন প্রকল্পগুলোকে অতিরিক্ত উদ্যোগ হিসেবেই গণ্য করা হবে, তাদের নিজস্ব প্রতিশ্রুতির বিকল্প হিসেবে নয়। একই সঙ্গে তিনি কার্বন ক্রেডিট ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিতে কঠোর যাচাই–বাছাইয়ের আশ্বাস দিয়েছেন।

তবে ২০৪০ সালের লক্ষ্য নির্ধারণ নিয়ে ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ প্রস্তাব করেছে যে, ২০৩৫ সালের জন্য জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (NDC) ঘোষণাকে ২০৪০ সালের চূড়ান্ত লক্ষ্যমাত্রা থেকে আলাদা রাখা হোক, যাতে ভবিষ্যতে লক্ষ্য নির্ধারণে আরও নমনীয়তা রাখা যায়।

কিন্তু হোকস্ট্রা বলেছেন, ইইউ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ২০৪০ সালের উচ্চাকাঙ্ক্ষী নির্গমন লক্ষ্য ও সমন্বিত NDC উপস্থাপন করবে, যেমনটি জাতিসংঘ মহাসচিব অনুরোধ করেছেন। তিনি চীনের নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সমালোচনা করে বলেন, “কপ ২৮ এ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক।”

আগামী নভেম্বরে ব্রাজিলের বেলেম শহরে অনুষ্ঠিতব্য কপ ৩০ সম্মেলনের আগেই সব দেশকে নতুন NDC উপস্থাপন করতে বলা হয়েছে। যদিও অনেক দেশ এখনো তা প্রকাশ করেনি।

হোকস্ট্রা বলেন, “যদিও ব্রাজিল ঘোষণা দিয়েছে যে কপ ৩০ এ কোনো NDC আলোচনা হবে না, তবুও আমি বিশ্বাস করি— বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমায় রাখতে NDC’র প্রভাব এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনার প্রয়োজন আছে।”