জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, জুলাই সনদ জাতীয় দলিল হিসেবে তৈরি হয়েছে। তার বাস্তবায়ন দ্রুততার সাথে ঘটবে। নাগরিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে এই দিকনির্দেশনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে। শুক্রবার বিকেলে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আমাদের যে স্বপ্ন, বাংলাদেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, তাকে ধারণ করে তাকে অগ্রসর করে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকলের জন্য একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে চেষ্টা তাতে একটি দিক নির্দেশনা দেয়ার জন্যই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় এক বছর ধরে পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে এই জাতীয় সনদে উপনীত হয়েছেন।
সকলের আন্তরিকতা সকলের প্রচেষ্টা প্রত্যেকটি পদে পদে তাদের অংশগ্রহণের জন্য আমি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি কমিশনের পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। কিন্তু কেবলমাত্র কমিশন নয়, কেবলমাত্র রাজনৈতিক দল ন,য় বাংলাদেশের বিভিন্ন সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন, কমিশনের কর্মচারীরা থেকেছেন, আমাদের গবেষকরা থেকেছেন। কিন্তু তার চেয়েও বড় জিনিস হচ্ছে, প্রতি মুহূর্তে গণমাধ্যমের কারণে আপনারা বাংলাদেশের নাগরিকরা এবং বাংলাদেশের বাইরের সকলেই এর প্রতি নজর রেখেছেন।
এই জাতীয় সনদ কেবলমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি নয়, এ হচ্ছে নাগরিকের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এবং রাষ্ট্রের একটি সামাজিক চুক্তি। এই সামাজিক চুক্তি। এই যে প্রত্যাশা এর প্রত্যেকটি বিষয়ের মধ্যে জড়িত আছে। বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামের তাদের কষ্টের তাদের প্রচেষ্টার প্রত্যেকটি বিন্দু যুক্ত আছে। গত বছরের জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, যারা আজকে আহত আছেন, যে জুলাই যোদ্ধারা আজকেও সামগ্রিকভাবে কষ্টকর জীবন যাপন করছেন, তাদের প্রত্যেকের অবদানের মধ্য দিয়ে এই সনদ তৈরি হয়েছে। কেননা জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থান দীর্ঘদিনের রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যে আকাঙ্ক্ষা তার প্রতিফলন।
বাংলাদেশে গত ১৬ বছর ধরে ২০০৯ সাল থেকে যে ফ্যাসিবাদী শাসন তৈরি হয়েছিল তার বিরুদ্ধে যে সাহসিকতা, যে দৃঢ়তা বাংলাদেশের নাগরিকরা দেখিয়েছেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সূচনা এক দফা দাবিতে পরিণত হয়েছিল
এবং শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদী শাসককে পলায়নে বাধ্য করতে পেরেছে। সেই অর্জনের একটি স্মারক হচ্ছে এই জাতীয় সনদ। এখানে এর শেষ নয়।
আমরা মনে করি, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আমাদের যে চেষ্টা, সকলের যে চেষ্টা, সেই চেষ্টা একদিনে সাফল্য অর্জন করবে না। একটি দলিল কেবলমাত্র সেটা নিশ্চয়তা দেবে না।
আমরা আশা করি এই যে জাতীয় দলিল তৈরি হয়েছে, তার বাস্তবায়ন ঘটবে। দ্রুততার সাথে বাস্তবায়ন ঘটবে। নাগরিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে এই দিকনির্দেশনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে।
কিন্তু আমাদের অনেকটা পথ যেতে হবে। আমাদের মতের পার্থক্য থাকবে, রাজনীতিতে মতপার্থক্য না থাকলে তা গণতান্ত্রিক হয় না। মতের পার্থক্য থাকবে।দ, পথের পার্থক্য থাকবে কিন্তু এক জায়গায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বহু স্রোত যেন মোহনায় এসে মেলে, যেন আমরা বলতে পারি যে, আমাদের অনেক স্রোত কিন্তু মোহনা একটি সেটি হচ্ছে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। আমাদের বহু স্রোত আমরা সকলে এক জায়গায় যে আমরা যেকোন ধরনের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই দাঁড়িয়ে থাকব। সেই স্বপ্ন সেই প্রত্যা সেই চেষ্টার স্ারক যতটুকু আমরা অর্জন করেছি এটি প্রথম পদক্ষেপ।
যে ধারাবাহিকতা তার একটি মোড় ফেরানো মুহূর্ত মাত্র আমাদের অনেকটা পথ যেতে হবে। এই অগ্রসরমানতায় নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের মানুষদের প্রত্যেকের ভূমিকা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো সেই মতপার্থক্য সত্ত্বেও তারা এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেইদিক থেকে আজকের এই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরের এই অনুষ্ঠান ঐতিহাসিক।
আমরা যে দীর্ঘ পথ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ের সূচনা হয়েছে। তারই একটি পর্যায়ে এটি। আমাদের অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রে যে দিক নির্দেশনা, যে পথ নির্দেশ আমরা পাই, তাকে অগ্রসর করে নিয়ে গিয়েই আমরা একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান করতে পারবো। যা সাম্যমানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারকে প্রতিষ্ঠা করে। সেই প্রচেষ্টায় আমরা সকলেই এক, আমরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ। কেননা সেখানে আমি, আপনি, তুমি সে এভাবে আমরা বিভক্ত নই, আমরাই সকলে এক সেই প্রচেষ্টা সেই সংগ্রাম সেই প্রয়াস সেই পথযাত্রা অব্যাহত থাকবে। সেই প্রত্যাশা ঐকমত্য কমিশনের সেই প্রত্যাশা আমাদের সকলের সেই অগ্রযাত্রায় আপনাদের অংশীদারিত্বের প্রত্যাশা করে আবারও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।