জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—এটি শুধু পরিবেশ নয়, অর্থনীতি, কৃষি ও সমাজের প্রতিটি খাতকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। তাই টেকসই কৃষি, বনায়ন ও পরিবেশবান্ধব নগরায়ণে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে—এ আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও ইইউ ডেলিগেশনের প্রধান মাইকেল মিলার।
তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এককভাবে কোনো দেশের পক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা, প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিনিময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত “NDC 3.0 for COP30: Dialogue on Agriculture, Forestry & Urbanisation” শীর্ষক সংলাপে তিনি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ আয়োজনের সহযোগিতায় ছিল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ও ইয়ুথ ফর এনডিসি।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, “বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কৃষি, গ্রামীণ জীবিকা ও জনস্বাস্থ্য এখন হুমকির মুখে। তাই নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সবুজ প্রযুক্তি, টেকসই কৃষি ব্যবস্থা ও পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনায় তরুণদের নেতৃত্ব দিতে হবে। আজকের তরুণরাই আগামী প্রজন্মের নীতিনির্ধারক।”
তিনি আরও বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে এগোচ্ছি। এখনই সমন্বিত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে। তবে আশাব্যঞ্জক দিক হলো, বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রজন্ম এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি সচেতন।”
ইইউ রাষ্ট্রদূত জানান, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করছে। এরাসমাস প্লাস কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পাচ্ছে। এটি তরুণদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ও নেতৃত্ব তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, “খুলনা অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা, নদীভাঙন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তব চিত্র। আগামী ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনস্ (এনডিসি) প্রক্রিয়া জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি, টেকসই বনায়ন ও সহনশীল নগর পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
তিনি জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ইতোমধ্যে লবণসহনশীল ফসল, ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ ও টেকসই শহর পরিকল্পনায় গবেষণা চালাচ্ছেন। “আমরা সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে এসব গবেষণার ফলাফল শেয়ার করছি,” বলেন উপাচার্য।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় কোনো দেশ একা সফল হতে পারে না। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তির বিনিময়ই হতে পারে টেকসই সমাধান।”
সংলাপের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্রিন ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ও সোশ্যাল প্রোটেকশন বিভাগের টিম লিডার এডউইন কোয়েককোয়েক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. জাকির হোসেন, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মো. নাজমুস সাদাত ও এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোছাঃ সাবিহা সুলতানা। আলোচনা পরিচালনা করেন বিআইপি’র মহাসচিব শেখ মুহাম্মদ মেহেদী হাসান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিআইপি প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. আদিল মুহাম্মদ খান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুই চাকমা এবং ইয়ুথ ফর এনডিসির প্রতিনিধি ফাইয়াজ। অনুষ্ঠানের স্বাগত ও সমাপনী বক্তব্য দেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিষয়ক দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আশিক উর রহমান।
আয়োজনের আগে সকালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছালে রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান উপাচার্য। পরে তিনি উপাচার্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবীসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ইইউ রাষ্ট্রদূতকে মনোগ্রাম খচিত ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।