জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগীয় সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, গণভোট জাতির ম্যান্ডেট পাওয়ার একমাত্র উপায়, এবং সেই ম্যান্ডেট অর্জনের প্রক্রিয়ায় কোনো বিলম্বের সুযোগ নেই। তাই নভেম্বরের মধ্যেই গণভোটের আয়োজন করতে হবে, যাতে জুলাই সনদটি আইনগত ভিত্তি পায়।
বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে ‘অতি জরুরি বৈঠকে’র সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করছেন আলী রীয়াজ।
মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, এই কমিশন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘণ্টার পর ঘণ্টা নয়, দিনের পর দিন এখানে আলোচনা করেছেন। দীর্ঘ আলোচনার পর অনেকগুলো বিষয়ে একমত হয়েছেন, আবার অনেক বিষয়ে মতভেদ (difference of opinion) রয়ে গেছে।
আমি মনে করি, মতের পার্থক্য অনেক ক্ষেত্রেই ঐক্যকে সুদৃঢ় করে—কারণ ঐক্য শুধু এক মতের ভিত্তিতে নয়, বরং ভিন্ন মতও ঐক্যকে দৃঢ় করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সেসব ভিন্ন মতকেও আমরা শ্রদ্ধা জানাই।
তিনি বলেন, আমি আরও মনে করি, বাংলাদেশের ৫৪ বছরের রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিকতায় ঐক্যবদ্ধ কমিশন ও জাতীয় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
কারণ আমাদের বয়স খুব বেশি নয়, আমরা ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে শুধু বিভাজনের দৃশ্য দেখে এসেছি। ছাত্রজীবনে দেখেছি এক দল অন্য দলের সঙ্গে বসতে চায় না; জাতীয় রাজনীতিতেও একই দৃশ্য—এক দল অন্য দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে অনিচ্ছুক।
তিনি আরো বলেন, এই বিভাজন শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং তা জনগণের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছিল।
কিন্তু আজ আমি অত্যন্ত গর্বিত (I feel proud) যে এই সনদ তৈরির ক্ষেত্রে জাতীয় রাজনৈতিক দলসমূহ দিনের পর দিন পাশাপাশি বসে আলোচনা করেছেন। যারা আদর্শিকভাবে একে অপরের প্রতি আস্থা বা বিশ্বাস রাখতেন না, তারাও একসঙ্গে বসেছেন। সুতরাং, এই সনদ প্রণয়নের ধারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের এক শুভ সূচনা করবে। এজন্য এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হিসেবেও চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
শেষ মুহূর্তে কিছু বিষয় সংশয় তৈরি হয়েছে, জাতিকে অস্পষ্ট রেখে সফলতা সম্ভব নয়শেষ মুহূর্তে কিছু বিষয় সংশয় তৈরি হয়েছে, জাতিকে অস্পষ্ট রেখে সফলতা সম্ভব নয়
অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, আজ বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ নেই, কারণ আমরা অনেক পয়েন্টে একমত হয়েছি, আবার কিছু পয়েন্টে মতভেদ রয়েছে—যেগুলো ইতোমধ্যে উপস্থাপিত হয়েছে।
প্রতিদিন এখান থেকে বের হয়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দ যে বক্তব্য রেখেছেন, গোটা জাতি আগামী দিনে সেই বক্তব্যের আলোকে তাদের রায় প্রদান করবেন। আমাদের এখানে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার কোন কারণ নেই—কারণ জনগণের কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।
তিনি বলেন, জুলাই সনদ তৈরির ক্ষেত্রে যেসব পয়েন্টে আমরা একমত হয়েছি, সেগুলো নিয়ে আমরা সনদে স্বাক্ষর করতে চাই। এই সনদে স্বাক্ষরের পর যে আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য গণভোটের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের বক্তব্যও প্রদান করেছি।
গণভোট জাতির ম্যান্ডেট পাওয়ার একমাত্র উপায়, এবং সেই ম্যান্ডেট অর্জনের প্রক্রিয়ায় কোনো বিলম্বের সুযোগ নেই। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে—নভেম্বরের মধ্যেই গণভোটের আয়োজন করতে হবে, যাতে সনদটি আইনগত ভিত্তি পায়। আমরা সেই ঐতিহাসিক ও শুভ মুহূর্তের অপেক্ষায় আছি।