একদিকে তীব্র দাবদাহে পুড়ছে এশিয়া, অন্যদিকে ভয়াবহ বন্যা ও শিলাবৃষ্টিতে বিপর্যস্ত ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের নানা প্রান্তে এই চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলোর জন্য সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে গত কয়েকদিন ধরে চলছে তীব্র দাবদাহ। সোমবার (২০ মে) দিল্লির নাজফগড়ে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা বছরের সর্বোচ্চ।
অবস্থার অবনতি হওয়ায় আগামী পাঁচ দিনের জন্য জারি করা হয়েছে রেড এলার্ট। পরীক্ষার কারণে যেসব স্কুলে এখনও ছুটি হয়নি, সেগুলো দ্রুত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গরমের তীব্রতায় বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা, ঝুঁকিতে পড়ছে প্রবীণ ও শিশুদের স্বাস্থ্য। স্থানীয় আবহাওয়া দফতর সবাইকে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তানেও তাপমাত্রা বেড়ে চরমে। আগামী ২৩ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত পাঞ্জাব ও সিন্ধুসহ কয়েকটি প্রদেশে তীব্র দাবদাহের পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির আবহাওয়া অধিদফতর।
এ অবস্থায় পাঞ্জাব প্রদেশের সব স্কুল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিন্ধুর জনগণকে দেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা।
এদিকে ইউরোপের পোল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় গিনিয়াজনো শহর পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে, আটকে পড়েছেন বহু মানুষ। দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রেও পরিস্থিতি নাজুক। নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের ওমাহা শহরে ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এতে উপড়ে গেছে গাছপালা, হাজার হাজার মানুষ বিদ্যুৎহীন অবস্থায় পড়েছে।
একই রাতে কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি ও বন্যার সতর্কতা জারি করা হয়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউমা অঞ্চল।
পরিবেশবিদদের মতে, এসব ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক পরিবর্তন নয়, বরং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সরাসরি ফল।
বায়ু ও পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, যার প্রভাবে বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়, খরা, দাবানল ও ভারি বৃষ্টিপাতের মাত্রা।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখন যে দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে, তা ভবিষ্যতে আরও তীব্র ও ধ্বংসাত্মক রূপ নেবে, যদি না এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়।”