মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, প্রাণী সুস্থ থাকলে বা প্রাণীকে সুস্থ রাখতে পারলে মানুষও থাকবে নিরাপদ; মেডিকেল ডাক্তার প্রয়োজন হবে না।
তিনি বলেন, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি রোগমুক্ত থাকলে তা থেকে প্রাপ্ত খাদ্যও হবে নিরাপদ, আর নিরাপদ খাদ্যই মানুষের সুস্থতার অন্যতম মূল চাবিকাঠি।
উপদেষ্টা আজ শনিবার বিকালে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল অডিটরিয়ামে নবীন ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য আয়োজিত “হ্যান্ডস-অন ট্রেনিং প্রোগ্রাম ফর ফ্রেশ ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েটস”-এর সার্টিফিকেট বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ) -এর উদ্যোগে এবং এনিম্যাল হেলথ কোম্পানিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আহকাব)-এর সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, দেশে ১৮ কোটি মানুষের চিকিৎসার জন্য প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে ৯ জন মেডিকেল ডাক্তার থাকা প্রয়োজন। অথচ প্রায় ৫ কোটি প্রাণীর জন্য প্রতিটি উপজেলায় মাত্র একজন ভেটেরিনারিয়ান দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, প্রতিটি উপজেলায় তাহলে কেন তিন-চারজন ভেটেরিনারিয়ান থাকতে পারবে না? ভেটেরিনারি আইন সম্পর্কে উপদেষ্টা বলেন, ভেটেরিনারি আইন প্রায় প্রস্তুত, শিগগিরই তা মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ফিড আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি, কারণ এ আইন ছাড়া প্রাণিখাদ্যকে নিরাপদ রাখা সম্ভব নয়।
দক্ষ ভেটেরিনারিয়ানদের আন্তর্জাতিক অঙ্গণে পাঠানোর বিষয়ে প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, দক্ষ ভেটেরিনারিয়ানদের বিদেশে পাঠানো গেলে দেশের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে এবং তারা দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে বিদেশেও সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারবে।
ভেটেরিনারিয়ানদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, “আমাদের কাছে কোনো প্রাণীই খেলনা নয়; প্রতিটি প্রাণীর সেবার অধিকার আছে। সেই সেবা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে একযোগে নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের বাস্তব প্রয়োজন বিবেচনায় ভেটেরিনারি মেডিসিন ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সকে কম্বাইন্ড ডিগ্রি হিসেবে চালু করা হবে, এ বিষয়ে ছোটখাটো মতপার্থক্য থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে বলেও উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ)-এর আহবায়ক ডাঃ মোঃ সফিউল আহাদ সরদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)-এর ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. বাহানুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ড. মো. বয়জার রহমান, এনিম্যাল হেলথ কোম্পানিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আহকাব) -এর সভাপতি সায়েম উল হক, বিসিএস লাইভস্টক ক্যাডার এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ডা. মো. আ. মান্নান মিয়া। এসময় শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ডা. মো. তারেক হোসেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা নবীন ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েটদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিকে একটি সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তারা বলেন, এই ধরনের প্রশিক্ষণ নবীন পেশাজীবীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করবে এবং প্রাণিসম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিন মাস ব্যাপী “প্রি-সার্ভিস হ্যান্ডস অন ট্রেনিং”-এ অংশগ্রহণকারী ভেটেরিনারি গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে উপদেষ্টা এসময় সার্টিফিকেট বিতরণ করেন।
