রাশিয়ায় যারা হতে পারেন ব্রাজিলের তুরুপের তাস
০২ জুন ২০১৮, ১১:০২

চার বছর পরে আসে বিশ্বকাপ। শুরু হয় উত্তেজনা, গুঞ্জন আর কৌশলগত বিশ্লেষণ। আর বিশ্বকাপের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ সেলেসাওরা। সেই ১৯৩০ বিশ্বকাপ থেকে প্রতিটি বিশ্বকাপেই অংশ নিয়েছে ব্রাজিল। ব্রাজিলের হলুদ জার্সি যেন বিশ্বকাপের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় অনেকখানি। জোগো বোনিতো বা সুন্দর ফুটবলের মোহনীয় খেলার প্রবক্তা তো ব্রাজিলই।
১৯৫৮ সাল থেকে কালোমানিক পেলের নেতৃত্বে শুরু হয় ব্রাজিল ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে সোনালী যুগের পথচলা। তারপর যুগের বিবর্তনে একে একে এসেছেন রোমারিও, বেবেতো, সক্রেটিস, রোনালদো, রিভালদো, রবার্তো কার্লোস, রোনালদিনহো, কাকা-রা। এরা যেমন ব্রাজিলের জন্য বয়ে এনেছেন সাফল্য, তেমনি তাদের পায়ের জাদুতে বিশ্বফুটবলকেও করেছেন সমৃদ্ধ।
সর্বশেষ ২০০২ সালে জার্মানিকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ নেয় ব্রাজিল। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ষোলটি বছর। মাঝের তিনটি বিশ্বকাপে আশা জাগানিয়ে খেলা খেলেও আসেনি কাঙ্খিত সাফল্য। তাই ষষ্ঠ বিশ্বকাপ বা মিশন হেক্সার স্বপ্নে বিভোর ব্রাজিল চাইবে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে কাঙ্খিত সাফল্য।
নেইমার-জেসুস-ফিরমিনো-কৌটিনহোদের সমন্বয়ে গড়া দুর্দান্ত আক্রমণভাগ আর অতন্দ্র প্রহরী থিয়েগো সিলভা, মিরান্ডা, মার্সেলো আর দানিলোদের সমন্বয়ে গড়া রক্ষণভাগ এবং গোলমুখ আঁকড়ে থাকা এলিসন বেকার-এডারসনরা আশার পালে লাগিয়েছেন নতুন হাওয়া। তাই কোচ তিতে দায়িত্ব নেয়ার পর একটি ম্যাচেও এখন পর্যন্ত হারতে হয়নি ব্রাজিলকে।
তিতের ব্রাজিলে রয়েছে সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ের ছড়াছড়ি। রেকর্ড ট্রান্সফার বাজেটে বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে পাড়ি জমানো নেইমার থেকে পাদপ্রদীপের আড়ালে থেকে যাওয়া রেনাতো অগাস্টো প্রত্যেকেই সম্ভাবনাময়। ডিপ লাইং প্লেমেকার ক্যাসেমিরো থেকে আক্রমণভাগের প্রাণভোমরা নেইমার-জেসুসদের কেউই কারও চেয়ে কম নন।
তাই যথারীতি রাশিয়া বিশ্বকাপেও হট ফেবারিট ব্রাজিল। আর সেটা তাদের পুরনো ঐতিহ্যের চেয়ে খেলোয়াড়দের নৈপুণ্যের কারণেই বেশি।
ব্রাজিল দলের সেইসব তুখোড় খেলোয়াড়দের নিয়েই বাংলাদেশ জার্নালের এই আয়োজন-
নেইমার: ব্রাজিলের আক্রমণভাগের প্রাণভোমরা তিনি। যে দলে নেইমার খেলেন তাদের জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বহুগুণে। আর এবার বিশ্বকাপটা নিজের করে নেয়ার ইঙ্গিত তো তিনি আগেই দিয়ে রেখেছেন। দুরন্ত গতি, বল নিয়ন্ত্রণ, ফ্লিক আর মোহনীয় ফিনিশিং স্কিল দিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগ চূর্ণ করতে তার জুড়ি নেই। তাইতো নেইমারকে পেতে মুখিয়ে আছে ইউরোপের বড় বড় সব ক্লাবগুলো। তার পায়ে ভর করেই হতে পারে ব্রাজিলের মিশন হেক্সা স্বপ্ন বাস্তবায়ন।
গ্যাব্রিয়েল জেসুস: সেলেসাওদের আক্রমণভাগের আরেক ভরসার নাম ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ২১ বছর বয়সী স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুস। দুরন্ত গতির এই ফুটবলার ডি-বক্সে হয়ে উঠতে পারেন বিধ্বংসী। দূরপাল্লার শট থেকে ওয়ান টু ওয়ান কন্ডিশনে চিপ কিংবা ব্যাকহিল থেকে গোল করতে জুড়ি নেই জেসুসের।
ফিরমিনো: লিভারপুলকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ প্রতিযোগিতার মূল ধারায় ফিরিয়ে আনা এবং উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছাতে ব্রাজিলের এই স্ট্রাইকারের ছিল অসামান্য অবদান। তার কারিশমা আর অভিজ্ঞতার পাশাপাশি দলের জন্য নিঃস্বার্থ ভূমিকা ব্রাজিলের মিশন হেক্সার জন্য রাখতে পারে বড় অবদান।
কৌটিনহো: সেলেসাওদের মাঝমাঠের আক্রমণ তাকে ঘিরেই সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে কোচ তিতের। ব্রাজিলের অন্যান্য অ্যাটাকারদের মতো তারও রয়েছে দুর্দান্ত গতি, বল কন্ট্রোল আর ফিনিশিং। লিভারপুলে তার নজরকাড়া পারফরম্যান্সের কারণেই বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব বার্সেলোনা তাকে দলে ভিড়িয়েছে চড়া মূল্যে। কৌটিনহোর একটি কি-পাস কিংবা দূরপাল্লার বাঁকানো শট ঘুরিয়ে দিতে পারে যে কোনো ম্যাচের গতি।
ক্যাসেমিরো: প্রতিপক্ষের দুর্দান্ত আক্রমণ কিংবা দলের কারও ভুলে কাউন্টার অ্যাটাকের শিকার হলে সেই মুহূর্তে দলের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভাবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায় ক্যাসেমিরোকে। রিয়াল মাদ্রিদে এই ভূমিকার জন্য তাকে ডাকা হয় ‘পকেটম্যান’। কৌটিনহো-অগাস্টোদের পেছনে একজন ক্যাসেমিরো থাকলে অনেকখানি নির্ভার হয়ে খেলতে পারেন আক্রমণ এবং রক্ষণভাগের খেলোয়াড়রা। পাশাপাশি তার রয়েছে দূরপাল্লার শট থেকে গোল করার ক্ষমতা।
সর্বোপরি, রাশিয়া বিশ্বকাপকে ঘিরে দুর্দান্ত একটি দল সাজিয়েছেন কোচ তিতে। আক্রমণভাগের পাশাপাশি ফুলব্যাক মার্সেলো আর দানিলোও পারেন রক্ষণভাগ থেকে উঠে এসে আক্রমণভাগকে সহায়তা করতে। গোলবারের সামনে ভরসার নাম এলিসন আর তার বদলি এডারসন। আক্রমণভাগের যে কারও যেমন জ্বলে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে তেমনি দলের বাকি সবাইও তাদের সেরাটা দিতে পারলে সেলেসাওরা দেখতেই পারে আরেকবার বিশ্বজয়ের স্বপ্ন।
বিশ্বকাপ উপলক্ষে ব্রাজিল ফুটবলের ভক্তদের আয়োজন