রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর এলাকায় মাইক্রোবাস ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৬ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ। এই চক্রটি যাত্রীবেশে মাইক্রোবাস ভাড়া করে লুঙ্গি, গামছা ও দড়ি দিয়ে চালকের হাত-পা বেঁধে গাড়ি ছিনতাই করতো ।

গ্রেপ্তাররা হলো -মীর মিজান মিয়া, মো. হাবিব মিয়া, মো. ফারুক, মো. কামাল মিয়া, মো. আল আমিন ও মোবারক।

শুক্রবার নরসিংদী ও কুমিল্লা জেলায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা মিরপুর জোনাল টিম।এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই করা ১টি মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়।

এর আগে একজন মাইক্রোবাসের মালিক মো. আজহারুল ইসলামের অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৭ এপ্রিল উত্তরা পূর্ব থানায় একটি মামলা দায়ের হয়।

শনিবার (৫ জুন) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানা এলাকায় গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছিনতাই চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ। এ চক্রের সদস্য গ্রেপ্তার হাবিব গাড়ি ছিনতাই মামলায় সাজা প্রাপ্ত আসামী। সে জামিনে বেরিয়ে এসে গাড়ি ছিনতাইয়ের অপরাধের সাথে পুনরায় জড়িত হয়েছে।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, অপর গ্রেপ্তার মিজান গাড়ির নকল নাম্বার প্লেট ও কাগজপত্র তৈরি করে। পুলিশকে এড়ানোর জন্য এ চক্রের সদস্যরা অন্যের নামে রেজিস্ট্রিকৃত মোবাইল সীম কার্ড ব্যবহার করে।

তিনি আরো বলেন, অপরাধীরা যাতে অপরাধ করতে না পারে সে জন্যে নিজের নামে রেজিস্ট্রিকৃত সীম অন্যকে ব্যবহার করতে না দিয়ে নিজেই ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়াও পুরাতন গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে গাড়ির কাগজপত্র বিআরটিএর মাধ্যমে যথাযথভাবে যাচাই করে গাড়ি কিনতে অনুরোধ জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, উত্তরা পূর্ব থানার দস্যুতার মামলাটি তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা মিরপুর জোনাল টিম। গ্রেপ্তার হাবিব তার বিদেশ ফেরত আত্মীয়কে ঢাকা বিমানবন্দর হতে আনার কথা বলে কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা হতে একটি হাইএইস মাইক্রোবাস ভাড়া করেন। গত ২২ এপ্রিল মাইক্রোবাস চালক আবুল বাশার গ্রেপ্তার হাবিবকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হন। হাবিব করিমগঞ্জ থানা এলাকা থেকে যাত্রীবেশে ৪ জন লোককে মাইক্রোবাসে তুলেন। তাদের বহনকৃত মাইক্রোবাসটি ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে আসলে গ্রেপ্তাররা লুঙ্গি, গামছা ও দড়ি দিয়ে মাইক্রোবাস চালক মো. আবুল বাশারের হাত-পা বেঁধে ফেলে মাইক্রোবাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ফারুক মাইক্রোবাসটি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার গাউছিয়া দরিকান্দী রোডে নিয়ে মাইক্রোবাসের চালককে চলন্ত গাড়ী থেকে ফেলে দেন। পরবর্তীতে, গ্রেপ্তার হাবিব গাড়ীটি চালিয়ে কুমিল্লা জেলার চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিয়ে যান। মাইক্রোবাসটি গ্রেপ্তার মিজানের কাছে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। মিজান ভুয়া নম্বর প্লেট ও কাগজপত্র সংগ্রহ করে কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ার বিনিময়ে গাড়িটি চালাতেন।

প্রসঙ্গত, গত ২১ এপ্রিল অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তার বিদেশ ফেরত আত্মীয়কে ঢাকা বিমানবন্দর হতে আনার জন্য কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে একটি হাইএইস মাইক্রোবাস ভাড়া করে। এর পরদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় মাইক্রোবাস চালক মো. আবুল বাশার উক্ত ব্যক্তিকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে। উক্ত ব্যক্তি করিমগঞ্জ এলাকা হতে ৪ জন লোককে মাইক্রোবাসে উঠায়। তাদের বহনকৃত মাইক্রোবাসটি ঢাকার আব্দুল্লাহপুরে পৌঁছলে অজ্ঞাতনামা যাত্রীবেশে অপরাধীরা মাইক্রোবাসটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

গ্রেপ্তারদের উত্তরা পূর্ব থানায় দায়ের করা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।