চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা, যুদ্ধের শঙ্কা, হুঁশিয়ারি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:৩৩:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অক্টোবর ২০২১
  • / 183
চীনের সাথে তাইওয়ানের সম্পর্কের উত্তেজনা গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে দিয়েছেন যে, দুই পক্ষের মধ্যে দুর্ঘটনাক্রমে সংঘাত বেঁধে যেতে পারে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী চিউ কুয়ো-চেং এসব মন্তব্য করলেন যখন পর পর চার দিন ধরে চীনা সামরিক বিমান ‘রেকর্ড সংখ্যায়’ তাইওয়ানের বিমান প্রতিরক্ষা অঞ্চলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। খবর বিবিসির।

তাইওয়ান নিজেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু চীন মনে করে, এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি তাদের একটি দলছুট প্রদেশ। দুটি ভূখণ্ডের পুনরেকত্রিকরণের জন্য চীন বল প্রয়োগের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছে না।

তবে চীনা জঙ্গী বিমানগুলো তাইওয়ানের মূল ভূখণ্ডের আকাশ সীমা অতিক্রম না করলেও চিউ কুয়ো-চেং হুঁশিয়ার করেন যে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র কওে ‘ভুলক্রমে’ গোলাগুলি শুরু হওয়ার একটি ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। তাইওয়ানের বিমান প্রতিরক্ষা অঞ্চল থেকে হামলার আশঙ্কার ওপর নজর রাখা হয়।

তাইওয়ান প্রণালী থেকে শুরু করে এটি এমনকি চীনের মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত প্রসারিত। এই অঞ্চলের মধ্যে একটি সীমারেখা রয়েছে যেটি কেউ অতিক্রম করলে তাইওয়ান মনে করে তার বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানো হচ্ছে।

তাইওয়ানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে চীন তার দেশের ওপর সর্বাত্মক হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করবে। তিনি এসব কথা বলছিলেন যখন তাইপের একটি সংসদীয় কমিটিতে মিসাইল এবং যুদ্ধজাহাজ কেনার জন্য শত শত কোটি ডলারের একটি প্রতিরক্ষা বিল নিয়ে আলোচনা চলছে।

তাইওয়ানের ওপর চীন এখনই হামলা চালানোর ক্ষমতা রাখে- একথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতে এই হামলা চালানো অনেক সহজ হয়ে আসবে। তবে এ সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেননি।

চীনে ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্টরা শাসন ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে যায়। বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন যে, তাইওয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে বলে চীন ক্রমশই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট ছাই ইং-ওয়ান যাতে এমন কোন ঘোষণা না করেন, সেটা চীন ঠেকাতে চায়।

সম্প্রতি খোলাখুলিভাবে চীনের সামরিক শক্তি প্রদর্শন নিয়ে তাইওয়ানের সমর্থক পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, ‘তাইওয়ান চুক্তি’ মেনে চলার কথা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন।

বাইডেন দৃশ্যত ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের ‘এক চীন’ নীতির প্রতি ইঙ্গিত করছেন, যেখানে রাষ্ট্র হিসেবে তাইওয়ান নয় চীনকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। তবে এ চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের সাথে ‘জোরদার অনানুষ্ঠানিক’ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।

তাইওয়ানের বৃহত্তম শহর তাইপে চীনবিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: বিবিসি

তাইওয়ান রিলেশন্স অ্যাক্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের প্রতিরক্ষায় সহায়তা করবে। এই আইনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে এখন উত্তেজনা বেড়ে গেলেও তা ১৯৯৬ সালের পর্যায়ে পৌঁছেনি। ঐ বছর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার জন্য চীন মিসাইল পরীক্ষা চালিয়েছিল এবং তাদের ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিল।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

চীন-তাইওয়ান উত্তেজনা, যুদ্ধের শঙ্কা, হুঁশিয়ারি

আপডেট : ০১:৩৩:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ অক্টোবর ২০২১
চীনের সাথে তাইওয়ানের সম্পর্কের উত্তেজনা গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে দিয়েছেন যে, দুই পক্ষের মধ্যে দুর্ঘটনাক্রমে সংঘাত বেঁধে যেতে পারে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী চিউ কুয়ো-চেং এসব মন্তব্য করলেন যখন পর পর চার দিন ধরে চীনা সামরিক বিমান ‘রেকর্ড সংখ্যায়’ তাইওয়ানের বিমান প্রতিরক্ষা অঞ্চলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। খবর বিবিসির।

তাইওয়ান নিজেকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু চীন মনে করে, এই দ্বীপ রাষ্ট্রটি তাদের একটি দলছুট প্রদেশ। দুটি ভূখণ্ডের পুনরেকত্রিকরণের জন্য চীন বল প্রয়োগের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছে না।

তবে চীনা জঙ্গী বিমানগুলো তাইওয়ানের মূল ভূখণ্ডের আকাশ সীমা অতিক্রম না করলেও চিউ কুয়ো-চেং হুঁশিয়ার করেন যে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র কওে ‘ভুলক্রমে’ গোলাগুলি শুরু হওয়ার একটি ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। তাইওয়ানের বিমান প্রতিরক্ষা অঞ্চল থেকে হামলার আশঙ্কার ওপর নজর রাখা হয়।

তাইওয়ান প্রণালী থেকে শুরু করে এটি এমনকি চীনের মূল ভূখণ্ড পর্যন্ত প্রসারিত। এই অঞ্চলের মধ্যে একটি সীমারেখা রয়েছে যেটি কেউ অতিক্রম করলে তাইওয়ান মনে করে তার বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানো হচ্ছে।

তাইওয়ানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে চীন তার দেশের ওপর সর্বাত্মক হামলা চালানোর সক্ষমতা অর্জন করবে। তিনি এসব কথা বলছিলেন যখন তাইপের একটি সংসদীয় কমিটিতে মিসাইল এবং যুদ্ধজাহাজ কেনার জন্য শত শত কোটি ডলারের একটি প্রতিরক্ষা বিল নিয়ে আলোচনা চলছে।

তাইওয়ানের ওপর চীন এখনই হামলা চালানোর ক্ষমতা রাখে- একথা স্বীকার করে তিনি বলেন, আগামী দিনগুলোতে এই হামলা চালানো অনেক সহজ হয়ে আসবে। তবে এ সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত আর কিছু বলেননি।

চীনে ১৯৪৯ সালে কমিউনিস্টরা শাসন ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে যায়। বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন যে, তাইওয়ান আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারে বলে চীন ক্রমশই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট ছাই ইং-ওয়ান যাতে এমন কোন ঘোষণা না করেন, সেটা চীন ঠেকাতে চায়।

সম্প্রতি খোলাখুলিভাবে চীনের সামরিক শক্তি প্রদর্শন নিয়ে তাইওয়ানের সমর্থক পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, ‘তাইওয়ান চুক্তি’ মেনে চলার কথা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন।

বাইডেন দৃশ্যত ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের ‘এক চীন’ নীতির প্রতি ইঙ্গিত করছেন, যেখানে রাষ্ট্র হিসেবে তাইওয়ান নয় চীনকে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। তবে এ চুক্তির অধীনে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের সাথে ‘জোরদার অনানুষ্ঠানিক’ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।

তাইওয়ানের বৃহত্তম শহর তাইপে চীনবিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: বিবিসি

তাইওয়ান রিলেশন্স অ্যাক্টে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের প্রতিরক্ষায় সহায়তা করবে। এই আইনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে এখন উত্তেজনা বেড়ে গেলেও তা ১৯৯৬ সালের পর্যায়ে পৌঁছেনি। ঐ বছর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার জন্য চীন মিসাইল পরীক্ষা চালিয়েছিল এবং তাদের ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিল।