মাদকাসক্ত পরিবারের দুর্ভোগের ভয়াবহ চিত্র দেখেছি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:৪৩:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১
  • / 138
পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পুলিশে চাকরি করার সুবাদে নির্বিশেষে মাদকাসক্ত সদস্যদের নিয়ে পরিবারের দুর্ভোগের ভয়াবহ করুণ চিত্র আমি দেখেছি। সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের গোপনে চোখের পানি ফেলতে দেখেছি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্রের (ওয়েসিস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এই গোপন কান্না এত কষ্টের- যা কারও সঙ্গে শেয়ারও করা যায় না সামাজিক মর্যাদার কারণে। কিন্তু আমার কাছে এসে শেয়ার করেছেন। এমন ঘটনা একটা না, অহরহ ঘটনা আছে। এরকম ঘটনা হয়েছে যে, তার ছেলে, স্ত্রী কিংবা মেয়েকে গোপনে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। কারণ সমাজে তার সম্মান রয়েছে, তাই কেউ যেন জানতে না পারে।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, কোনো মাদকই দেশে তৈরি হয় না। ফেনসিডিল আসে প্রতিবেশী এক দেশ থেকে, জনপ্রিয় মাদক ইয়াবা আসে প্রতিবেশী আরেক দেশ থেকে। এখন আবার আসছে আইস, যা প্রতিবেশী এক দেশসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকে আসে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে আমরা যে কাজটা করার চেষ্টা করি সেটা হচ্ছে মাদকের সাপ্লাই কমানো। এসব দমনের জন্য ছয় থেকে সাতটা বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে।

তিনি বলেন, কাস্টম বিভিন্ন পোর্টে মাদক দমনে কাজ করেছে। কিন্তু যদি ডিমান্ড থাকে কোনো না কোনোভাবে দেশে মাদকের সাপ্লাই হবেই। সেটা যদি হয় ১ কোটি, ৮০ লাখ ও ৩৬ লাখ তাহলে প্রত্যেক দিন এই মাদক কোনো না কোনোভাবে দেশে প্রবেশের চেষ্টা হবেই। সে কারণে অবশ্যই আমাদের মাদকের ডিমান্ড কমাতে হবে। ডিমান্ড কমাতে হলে যারা মাদকাসক্ত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ওয়েসিস আমাদের অতি ক্ষুদ্র একটি উদ্যোগ।

পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, অনেকের মতে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮০ লাখ। কেউ কেউ বলেন এ সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে। এদের চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজারের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তাহলে কত বছরে আমরা তাদের চিকিৎসা দিতে পারবো। এসব দিক বিবেচনা করেই আমরা একটি আধুনিক মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের আরেকটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, আমরা ভবিষ্যতে মানিকগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীর তীরে বিশাল এলাকায় পাঁচ’শ থেকে এক হাজার বেডের এ ধরনের হাসপাতাল করতে চাই। এক্ষেত্রে আমরা একটা রিজিওনাল হাব করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ ধনী দেশে উন্নীত হবে। যদি আমাদের যুব সমাজ মাদকের করাল গ্রাসে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে দেশের নেতৃত্ব দেবে কে?

মেডিকেল ট্যুরিজম নিয়ে আইজিপি বলেন, আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর হেলথ ট্যুরিজমে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যায়। আমরা যদি বিশেষায়িত হাসপাতাল করে বিদেশ থেকে এক্সপার্টদের নিয়ে আসতে পারি তাহলে আমাদের এই অর্থ দেশেই থাকবে। দেশে এক্সপার্ট তৈরি হবে। পরে আর বিদেশী এক্সপার্টের প্রয়োজন হবে না।

করোনায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে পুলিশ বাহিনীর অনন্য অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাকালে দেশ ও জাতির কল্যাণে ১০৬ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমরা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে সাধারণ হাসপাতাল থেকে কোভিড হাসপাতাল উন্নীত করেছি। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে শুধু পুলিশ সদস্যদেরই নয়, দেশের বিভিন্ন পেশার মানুষকে করোনার চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল পুলিশ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার প্রশংসা করেছে। করোনার টিকা প্রদানের ক্ষেত্রেও পুলিশ হাসপাতাল অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার জন্য আমাদের সবাইকে একই লক্ষ্যে ধাবিত হতে হবে বলেও আহবান জানান আইজিপি।

উল্লেখ্য, মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সাততলা ভবনের ষাট শয্যার ওয়েসিসে বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসক, সাইকোলজিস্ট, সাইকোথেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, ইয়োগা এক্সপার্ট এবং অভিজ্ঞ অ্যাডিকশন কাউন্সেলরগণের মাধ্যমে বিশ্বমানের সমন্বিত চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে। এখানে পুরুষ এবং নারী রোগীর জন্য পৃথক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।

ওয়েসিস এ চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক তদারকি, স্বতন্ত্র কাউন্সেলিং সেশন, উন্নতমানের শরীর চর্চাকেন্দ্র, বিনোদন সুবিধা, ইনডোর ও আউটডোর গেমস, কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ও জীবনধর্মী শিক্ষামূলক নানা আয়োজনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ও পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. বেনজীর আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

মাদকাসক্ত পরিবারের দুর্ভোগের ভয়াবহ চিত্র দেখেছি

আপডেট : ০১:৪৩:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১
পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, পুলিশে চাকরি করার সুবাদে নির্বিশেষে মাদকাসক্ত সদস্যদের নিয়ে পরিবারের দুর্ভোগের ভয়াবহ করুণ চিত্র আমি দেখেছি। সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের গোপনে চোখের পানি ফেলতে দেখেছি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্রের (ওয়েসিস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এই গোপন কান্না এত কষ্টের- যা কারও সঙ্গে শেয়ারও করা যায় না সামাজিক মর্যাদার কারণে। কিন্তু আমার কাছে এসে শেয়ার করেছেন। এমন ঘটনা একটা না, অহরহ ঘটনা আছে। এরকম ঘটনা হয়েছে যে, তার ছেলে, স্ত্রী কিংবা মেয়েকে গোপনে চিকিৎসা দিতে হয়েছে। কারণ সমাজে তার সম্মান রয়েছে, তাই কেউ যেন জানতে না পারে।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, কোনো মাদকই দেশে তৈরি হয় না। ফেনসিডিল আসে প্রতিবেশী এক দেশ থেকে, জনপ্রিয় মাদক ইয়াবা আসে প্রতিবেশী আরেক দেশ থেকে। এখন আবার আসছে আইস, যা প্রতিবেশী এক দেশসহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ থেকে আসে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে আমরা যে কাজটা করার চেষ্টা করি সেটা হচ্ছে মাদকের সাপ্লাই কমানো। এসব দমনের জন্য ছয় থেকে সাতটা বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে।

তিনি বলেন, কাস্টম বিভিন্ন পোর্টে মাদক দমনে কাজ করেছে। কিন্তু যদি ডিমান্ড থাকে কোনো না কোনোভাবে দেশে মাদকের সাপ্লাই হবেই। সেটা যদি হয় ১ কোটি, ৮০ লাখ ও ৩৬ লাখ তাহলে প্রত্যেক দিন এই মাদক কোনো না কোনোভাবে দেশে প্রবেশের চেষ্টা হবেই। সে কারণে অবশ্যই আমাদের মাদকের ডিমান্ড কমাতে হবে। ডিমান্ড কমাতে হলে যারা মাদকাসক্ত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ওয়েসিস আমাদের অতি ক্ষুদ্র একটি উদ্যোগ।

পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, অনেকের মতে বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৮০ লাখ। কেউ কেউ বলেন এ সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে। এদের চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজারের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তাহলে কত বছরে আমরা তাদের চিকিৎসা দিতে পারবো। এসব দিক বিবেচনা করেই আমরা একটি আধুনিক মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের আরেকটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র নির্মাণের কথা উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, আমরা ভবিষ্যতে মানিকগঞ্জের কালিগঙ্গা নদীর তীরে বিশাল এলাকায় পাঁচ’শ থেকে এক হাজার বেডের এ ধরনের হাসপাতাল করতে চাই। এক্ষেত্রে আমরা একটা রিজিওনাল হাব করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ ধনী দেশে উন্নীত হবে। যদি আমাদের যুব সমাজ মাদকের করাল গ্রাসে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে দেশের নেতৃত্ব দেবে কে?

মেডিকেল ট্যুরিজম নিয়ে আইজিপি বলেন, আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর হেলথ ট্যুরিজমে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যায়। আমরা যদি বিশেষায়িত হাসপাতাল করে বিদেশ থেকে এক্সপার্টদের নিয়ে আসতে পারি তাহলে আমাদের এই অর্থ দেশেই থাকবে। দেশে এক্সপার্ট তৈরি হবে। পরে আর বিদেশী এক্সপার্টের প্রয়োজন হবে না।

করোনায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে পুলিশ বাহিনীর অনন্য অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনাকালে দেশ ও জাতির কল্যাণে ১০৬ জন পুলিশ সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমরা কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে সাধারণ হাসপাতাল থেকে কোভিড হাসপাতাল উন্নীত করেছি। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে শুধু পুলিশ সদস্যদেরই নয়, দেশের বিভিন্ন পেশার মানুষকে করোনার চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল পুলিশ হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার প্রশংসা করেছে। করোনার টিকা প্রদানের ক্ষেত্রেও পুলিশ হাসপাতাল অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার জন্য আমাদের সবাইকে একই লক্ষ্যে ধাবিত হতে হবে বলেও আহবান জানান আইজিপি।

উল্লেখ্য, মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সাততলা ভবনের ষাট শয্যার ওয়েসিসে বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসক, সাইকোলজিস্ট, সাইকোথেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, ইয়োগা এক্সপার্ট এবং অভিজ্ঞ অ্যাডিকশন কাউন্সেলরগণের মাধ্যমে বিশ্বমানের সমন্বিত চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে। এখানে পুরুষ এবং নারী রোগীর জন্য পৃথক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।

ওয়েসিস এ চিকিৎসকদের সার্বক্ষণিক তদারকি, স্বতন্ত্র কাউন্সেলিং সেশন, উন্নতমানের শরীর চর্চাকেন্দ্র, বিনোদন সুবিধা, ইনডোর ও আউটডোর গেমস, কর্মমুখী প্রশিক্ষণ ও জীবনধর্মী শিক্ষামূলক নানা আয়োজনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক ও পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. বেনজীর আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম।