আফগানিস্তানে আর্থিক সহায়তার অঙ্গীকার বিশ্ব নেতাদের

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১২:১৫:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অক্টোবর ২০২১
  • / 142
আফগানিস্তানকে চরম অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে আর্থিক সহায়তার অঙ্গীকার করেছেন উন্নত দেশগুলোর জোট জি-২০-এর নেতারা। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, দেশটিকে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে দেয়া ঠিক হবে না।

বুধবার বিবিসির খবরে বলা হয়, আফগান অর্থনীতি রক্ষায় শত কোটি ডলার দিতে জাতিসংঘ আহ্বান জানানোর পর বিশ্ব নেতারা একটি ভার্চুয়াল সম্মেলনে অংশ নেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জোর দিয়ে বলেছেন, সেখানে যেসব সাহায্য দেয়া হবে, তা দিতে হবে স্বাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে, সরাসরি তালেবানের হাতে নয়। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু অর্থ সহায়তা পাওয়া গেছে, তা কয়েক মিলিয়ন ডলার হতে পারে, যা জরুরি খাদ্য ও ওষুধের জন্য দেয়া হচ্ছে।

আফগানিস্তান নিয়ে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে- এমন সময় যখন দাতব্য কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, দেশটিতে বড় ধরনের মানবিক সংকট হতে পারে।

নতুন প্রতিশ্রুতির মধ্যে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন বলেছেন, আফগানিস্তান এবং প্রতিবেশি যেসব দেশ শরণার্থীদের গ্রহণ করছে, তাদের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হবে।

চ্যান্সেলার ম্যার্কেল গত মাসের নির্বাচনে অংশ নেননি। ফলে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর তাকে সরে যেতে হবে। কিন্তু তিনি আফগানিস্তানের জন্য ৬০০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুরো আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা আর্থিক পদ্ধতি যদি ভেঙ্গে পড়ে, তাহলে আমাদের কারও কোন উপকারই হবে না।’

তিনি বলেন, ‘তখন আর মানবিক সহায়তাও দেয়া যাবে না। আসলে সীমারেখা টানা সহজ নয়। কিন্তু চার কোটি মানুষ যদি বিদ্যুৎ না থাকা বা আর্থিক পদ্ধতি ভেঙ্গে পড়ার কারণে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে, সেটা তো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের লক্ষ্য হতে পারে না।’

তিনি বলেন, জাতিসংঘের সহায়তা দেয়া সব প্রতিষ্ঠানে তালেবানের অংশগ্রহণ থাকা উচিত। সেই সঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এক্ষেত্রে মেয়ে ও নারীদের অধিকারের বিষয়েও সম্মান দিতে হবে।

ম্যার্কেলের বক্তব্যের সঙ্গে একমত জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি, যিনি এই ভার্চুয়াল সামিটের আয়োজন করেছিলেন। তিনি বলেন, তালেবানের সঙ্গে জি-২০ দেশগুলোর যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু তার মানেই এটা ইসলামপন্থী তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া নয়।

তবে এই ভার্চুয়াল সামিটে জি-২০ দেশগুলোর সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে প্রতিনিধি ছিলেন। তবে দ্রাঘি বলেছেন, বৈঠকে অংশ নেয়া সব সদস্যই আরও বেশি সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছেন।

আফগানিস্তান যাতে আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেট গ্রুপের মতো জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত না হয়, সেটা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও আলোচনা করেছেন বিশ্বনেতারা। সেই সঙ্গে বিদেশি নাগরিক এবং দেশ ছাড়তে আগ্রহী আফগানদের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

শীর্ষ নেতাদের এ বৈঠক এমন সময়ে হলো যখন দাতব্য সহায়তা, সন্ত্রাস প্রতিরোধ এবং বিদেশিদের সরিয়ে আনার কাতারে আলোচনায় বসেছেন পশ্চিমা এবং আফগান কর্মকর্তারা।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ও তালেবানের ক্ষমতা নেয়ার পর এই প্রথম দুই পক্ষের সরাসরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

আফগানিস্তানে আর্থিক সহায়তার অঙ্গীকার বিশ্ব নেতাদের

আপডেট : ১২:১৫:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অক্টোবর ২০২১
আফগানিস্তানকে চরম অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে আর্থিক সহায়তার অঙ্গীকার করেছেন উন্নত দেশগুলোর জোট জি-২০-এর নেতারা। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, দেশটিকে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে দেয়া ঠিক হবে না।

বুধবার বিবিসির খবরে বলা হয়, আফগান অর্থনীতি রক্ষায় শত কোটি ডলার দিতে জাতিসংঘ আহ্বান জানানোর পর বিশ্ব নেতারা একটি ভার্চুয়াল সম্মেলনে অংশ নেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জোর দিয়ে বলেছেন, সেখানে যেসব সাহায্য দেয়া হবে, তা দিতে হবে স্বাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে, সরাসরি তালেবানের হাতে নয়। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু অর্থ সহায়তা পাওয়া গেছে, তা কয়েক মিলিয়ন ডলার হতে পারে, যা জরুরি খাদ্য ও ওষুধের জন্য দেয়া হচ্ছে।

আফগানিস্তান নিয়ে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে- এমন সময় যখন দাতব্য কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, দেশটিতে বড় ধরনের মানবিক সংকট হতে পারে।

নতুন প্রতিশ্রুতির মধ্যে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন বলেছেন, আফগানিস্তান এবং প্রতিবেশি যেসব দেশ শরণার্থীদের গ্রহণ করছে, তাদের জন্য ১০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হবে।

চ্যান্সেলার ম্যার্কেল গত মাসের নির্বাচনে অংশ নেননি। ফলে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর তাকে সরে যেতে হবে। কিন্তু তিনি আফগানিস্তানের জন্য ৬০০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুরো আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা আর্থিক পদ্ধতি যদি ভেঙ্গে পড়ে, তাহলে আমাদের কারও কোন উপকারই হবে না।’

তিনি বলেন, ‘তখন আর মানবিক সহায়তাও দেয়া যাবে না। আসলে সীমারেখা টানা সহজ নয়। কিন্তু চার কোটি মানুষ যদি বিদ্যুৎ না থাকা বা আর্থিক পদ্ধতি ভেঙ্গে পড়ার কারণে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে, সেটা তো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের লক্ষ্য হতে পারে না।’

তিনি বলেন, জাতিসংঘের সহায়তা দেয়া সব প্রতিষ্ঠানে তালেবানের অংশগ্রহণ থাকা উচিত। সেই সঙ্গে তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এক্ষেত্রে মেয়ে ও নারীদের অধিকারের বিষয়েও সম্মান দিতে হবে।

ম্যার্কেলের বক্তব্যের সঙ্গে একমত জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি, যিনি এই ভার্চুয়াল সামিটের আয়োজন করেছিলেন। তিনি বলেন, তালেবানের সঙ্গে জি-২০ দেশগুলোর যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু তার মানেই এটা ইসলামপন্থী তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া নয়।

তবে এই ভার্চুয়াল সামিটে জি-২০ দেশগুলোর সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে প্রতিনিধি ছিলেন। তবে দ্রাঘি বলেছেন, বৈঠকে অংশ নেয়া সব সদস্যই আরও বেশি সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছেন।

আফগানিস্তান যাতে আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেট গ্রুপের মতো জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত না হয়, সেটা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও আলোচনা করেছেন বিশ্বনেতারা। সেই সঙ্গে বিদেশি নাগরিক এবং দেশ ছাড়তে আগ্রহী আফগানদের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

শীর্ষ নেতাদের এ বৈঠক এমন সময়ে হলো যখন দাতব্য সহায়তা, সন্ত্রাস প্রতিরোধ এবং বিদেশিদের সরিয়ে আনার কাতারে আলোচনায় বসেছেন পশ্চিমা এবং আফগান কর্মকর্তারা।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার ও তালেবানের ক্ষমতা নেয়ার পর এই প্রথম দুই পক্ষের সরাসরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।