সুদানে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে গুলিতে নিহত ৭, আহত ১৪০

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১১:০১:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১
  • / 156
সুদানে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে দেশটির সেনা বাহিনী। এতে কমপক্ষে ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৪০ জনের বেশি। সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন দেশটির সাধারণ মানুষ।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার সুদানে অন্তবর্তী সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা করে সেনা বাহিনী। সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আবদালাহ হামদকসহ কয়েকজন মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হামদককে অজ্ঞাত স্থানে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।

এর পরই সুদানের সেনা কর্মকর্তা আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর উচিৎ দেশের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা অব্যহত রাখতে ভূমিকা রাখা, যা সংবিধানে উল্লেখ আছে। এ সময় তিনি একটি নির্বাচনের ঘোষণাও দেন।

কাতারের দোহাভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জানায়, আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান সুদানের প্রাদেশিক গভর্নরদের বরখাস্ত করেন এবং ২০২৩ সালের জুলাইতে জাতীয় নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

সুদানের সেনা কর্মকর্তা আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। ছবি: ডয়চে ভেলে

আবদালাহ হামদককে গৃহবন্দী করার পর তার অফিস জনগণকে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানোর আহ্বান জানায়। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। রাজধানী খার্তুমের রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে তারা বিক্ষোভ দেখান। এতে অনেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, সামরিক বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৭ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। বিবিসির খবরে বলা হয়, রাজধানী খার্তুমে বিক্ষোভের আয়োজনকারীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালাচ্ছে।

রাজধানী খার্তুমে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা রাস্তা ছেড়ে ঘরে ফিরে যাননি। আরও সহিংসতার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

সুদানে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে নারীরাও অংশ নেন। ছবি: আল জাজিরা

সুদানের এ অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের অনেক দেশ। যুক্তরাষ্ট্র সুদানে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের যে সহযোগিতা দেয়ার কথা ছিল, সেটিও স্থগিত হয়ে গেছে। সুদানের সেনাপ্রধান বুরহার এ অভ্যুত্থানের জন্য দেশটির রাজনৈতিক সহিংসতাকে দায়ী করছেন।

অভ্যুত্থানের পর সুদানের বিদ্রোহী নেতা ইয়াসির আরমান গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি সুদান পিপলস লিবারেশন মুভমেন্ট-নর্থ (এসপিএলএম-এন) এর উপ-চেয়ারম্যান। তাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে বিবিসির খবরে বলা হয়, সোমবার ভোর রাতের দিকে আবদালাহ হামদককে গ্রেপ্তার করা হয়। অনেকটা একই সময়ে আরও কয়েকজন মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে শহরের একজন বাসিন্দা সোমবার জানান, শহরজুড়ে সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সাধারণ জনগণকে বাইরে চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছে। খার্তুম বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।

বছর দুই আগে দেশটির দীর্ঘদিনের শাসক ওমার-আল-বাশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এরপর থেকে বেসামরিক ও সামরিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিবাদ তৈরি হয়। যদিও তারা ক্ষমতা ভাগাভাগি করে আসছিল।

তবে গত মাসে ওমার-আল-বাশিরের সমর্থকরা অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে দেশটিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাতিসংঘ, ইউরোপী ইউনিয়ন (ইইউ),আফ্রিকান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য অজ্ঞাত স্থানে বন্দি রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দাবি করেছে। যাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবদালাহ হামদক ও তার স্ত্রী, মন্ত্রীসভার সদস্যরা ও অন্যান্য বেসামরিক নেতারা রয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সুদানে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে গুলিতে নিহত ৭, আহত ১৪০

আপডেট : ১১:০১:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১
সুদানে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছে দেশটির সেনা বাহিনী। এতে কমপক্ষে ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৪০ জনের বেশি। সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন দেশটির সাধারণ মানুষ।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার সুদানে অন্তবর্তী সরকার বিলুপ্ত ঘোষণা করে সেনা বাহিনী। সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আবদালাহ হামদকসহ কয়েকজন মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী হামদককে অজ্ঞাত স্থানে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।

এর পরই সুদানের সেনা কর্মকর্তা আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান দেশব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর উচিৎ দেশের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা অব্যহত রাখতে ভূমিকা রাখা, যা সংবিধানে উল্লেখ আছে। এ সময় তিনি একটি নির্বাচনের ঘোষণাও দেন।

কাতারের দোহাভিত্তিক সংবাদমাধ্যমটি জানায়, আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান সুদানের প্রাদেশিক গভর্নরদের বরখাস্ত করেন এবং ২০২৩ সালের জুলাইতে জাতীয় নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

সুদানের সেনা কর্মকর্তা আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। ছবি: ডয়চে ভেলে

আবদালাহ হামদককে গৃহবন্দী করার পর তার অফিস জনগণকে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানোর আহ্বান জানায়। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। রাজধানী খার্তুমের রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে তারা বিক্ষোভ দেখান। এতে অনেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

স্থানীয় এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, সামরিক বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ৭ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। বিবিসির খবরে বলা হয়, রাজধানী খার্তুমে বিক্ষোভের আয়োজনকারীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালাচ্ছে।

রাজধানী খার্তুমে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বিক্ষোভকারীরা রাস্তা ছেড়ে ঘরে ফিরে যাননি। আরও সহিংসতার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

সুদানে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে নারীরাও অংশ নেন। ছবি: আল জাজিরা

সুদানের এ অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের অনেক দেশ। যুক্তরাষ্ট্র সুদানে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের যে সহযোগিতা দেয়ার কথা ছিল, সেটিও স্থগিত হয়ে গেছে। সুদানের সেনাপ্রধান বুরহার এ অভ্যুত্থানের জন্য দেশটির রাজনৈতিক সহিংসতাকে দায়ী করছেন।

অভ্যুত্থানের পর সুদানের বিদ্রোহী নেতা ইয়াসির আরমান গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি সুদান পিপলস লিবারেশন মুভমেন্ট-নর্থ (এসপিএলএম-এন) এর উপ-চেয়ারম্যান। তাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর আগে বিবিসির খবরে বলা হয়, সোমবার ভোর রাতের দিকে আবদালাহ হামদককে গ্রেপ্তার করা হয়। অনেকটা একই সময়ে আরও কয়েকজন মন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে শহরের একজন বাসিন্দা সোমবার জানান, শহরজুড়ে সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সাধারণ জনগণকে বাইরে চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছে। খার্তুম বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।

বছর দুই আগে দেশটির দীর্ঘদিনের শাসক ওমার-আল-বাশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। এরপর থেকে বেসামরিক ও সামরিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিবাদ তৈরি হয়। যদিও তারা ক্ষমতা ভাগাভাগি করে আসছিল।

তবে গত মাসে ওমার-আল-বাশিরের সমর্থকরা অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এরপর থেকে দেশটিতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাতিসংঘ, ইউরোপী ইউনিয়ন (ইইউ),আফ্রিকান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য অজ্ঞাত স্থানে বন্দি রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দাবি করেছে। যাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে তাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আবদালাহ হামদক ও তার স্ত্রী, মন্ত্রীসভার সদস্যরা ও অন্যান্য বেসামরিক নেতারা রয়েছেন।