হেমন্তে ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত নওগাঁর গাছীরা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১২:২৯:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১
  • / 398

ষড়রিতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এক একটি রিতুর রয়েছে এক একরকমের বৈশিষ্ট। তেমনি এক রিতু হেমন্ত। শীতের আমেজ শুরু এই হেমন্তেই। শীতকালিন বিভিন্ন সবজি যেমন আমরা পেয়ে থাকি তেমনি হেমন্তকালে খেজুর গাছের মিষ্টি ঐতিহ্যবাহী রসও পাওয়া যায়। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুর গাছের এ রস।

শতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে মিষ্টি খেজুর রস,সেই সাথে মুড়ি মিশিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা।তবে আগের মত তেমন আর খেজুর গাছ না থাকায় ও গাছীরাও গাছ থেকে রস সংগ্রহ না করায় দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে মজা দায়ক খেজুর রস খাওয়ার ধুম।তারপরও নওগাঁর কিছু এলাকায় এখনো গাছীরা তার আগের পেশায় খেজুর রস সংগ্রহ করেন।

যা আগের তুলনায় নামমাত্র বললেই চলে।এরই ধারাবাহিকতায় শরতের আগমনের সাথে সাথেই নওগাঁয় আত্রাইয়ে খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রস সংগ্রহকারী হাবিবুর রহমান গাছীরা।

এখনো রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি খেজুর গাছের পরিচযা বা চাচ কাজেই ব্যস্ত সময় পার কেরছেনগাছীরা। আবার কেউ কেউ ইতিমধ্যেই রস সংগ্রহ শুরু করেছেন।এক সময় এ পেশার উপর অনেক পরিবার নির্ভরশীল হলেও খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ায় বর্তমানে রস সংগ্রহকারী গাছীর সংখ্যাও কমেছে।

তারপরও যারা খেজুর রসের উপর নির্ভরশীল,মূলত তারাই এখন কেউ গাছের পরির্চযা বা কেউ রস সংগ্রহে ব্যস্ত। খেজুর গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় খেজুর রসের ঐতিহ্যও দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে।খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের উপরিভাগে মাথার অংশকে ভালো করে পরিস্কার করতে হয়।

সেই সাদা অংশ থেকে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় কলসি বা হাঁড়ি হিসেবে পরিচিত মাটির পাত্রে রস সংগ্রহ করা হয়।তবে কালের ভেদে এখন অনেক গাছী সেই মাটির পাত্রের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিকের জার্কিনও ব্যবহার করছেন।ছোট ও মাঝারিসহ এমনকি বিশাল বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই গাছীদের কোমড়ে মোটা রশির দঁড়ি বেঁধেগাছে ঝুলে খেজুর গাছের পরিচযা ও রস সংগ্রহ করতে হয়।

প্রতিদিন বিকালে খেজুর খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিস্কার করে ছোট-বড় মাটির কলসি খেজুর গাছে বাঁধেন রসের জন্য। সাতসকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তারা।

রসের মান ভালো পাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন রস সংগ্রহে বিরতি দেন।ফলে রসের স্বাদ আরো বেশি মিষ্টি হয় বলেই গাছীরা জানিয়েছেন।রস সংগ্রহকারীরা কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাট বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রয় করেন।

আবার কেউ কেউ রস দিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রয় করেন। গ্রামের অনেক মানুষ শীতের সকালে সু-স্বাদু এই খেজুর রস ও খেজুর রসের তৈরি গুড় কেনার জন্য অপেক্ষায় থাকেন খেজুর রসের তৈরি বিভিন্ন রকমের পাটালিও লালী গুড়এর চাহিদাও অনেক।এ রস থেকেতৈরি গুড় দিয়ে মুখরোচক খাবার,পায়েসসহ হরেক রকমের লোভনীয় পিঠাও তৈরির ধুম পড়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি।

বলতে গেলে বাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্যের একটি অংশ এই রস।খেজুর রসের ঐতিহ্য ধরে রাখতে খেজুর গাছ রক্ষাসহ নতুনভাবে রোপনের উদ্যেগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

হেমন্তে ঐতিহ্যবাহী খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত নওগাঁর গাছীরা

আপডেট : ১২:২৯:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অক্টোবর ২০২১

ষড়রিতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এক একটি রিতুর রয়েছে এক একরকমের বৈশিষ্ট। তেমনি এক রিতু হেমন্ত। শীতের আমেজ শুরু এই হেমন্তেই। শীতকালিন বিভিন্ন সবজি যেমন আমরা পেয়ে থাকি তেমনি হেমন্তকালে খেজুর গাছের মিষ্টি ঐতিহ্যবাহী রসও পাওয়া যায়। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খেজুর গাছের এ রস।

শতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে মিষ্টি খেজুর রস,সেই সাথে মুড়ি মিশিয়ে খাওয়ার মজাই আলাদা।তবে আগের মত তেমন আর খেজুর গাছ না থাকায় ও গাছীরাও গাছ থেকে রস সংগ্রহ না করায় দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে মজা দায়ক খেজুর রস খাওয়ার ধুম।তারপরও নওগাঁর কিছু এলাকায় এখনো গাছীরা তার আগের পেশায় খেজুর রস সংগ্রহ করেন।

যা আগের তুলনায় নামমাত্র বললেই চলে।এরই ধারাবাহিকতায় শরতের আগমনের সাথে সাথেই নওগাঁয় আত্রাইয়ে খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রস সংগ্রহকারী হাবিবুর রহমান গাছীরা।

এখনো রস সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি খেজুর গাছের পরিচযা বা চাচ কাজেই ব্যস্ত সময় পার কেরছেনগাছীরা। আবার কেউ কেউ ইতিমধ্যেই রস সংগ্রহ শুরু করেছেন।এক সময় এ পেশার উপর অনেক পরিবার নির্ভরশীল হলেও খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ায় বর্তমানে রস সংগ্রহকারী গাছীর সংখ্যাও কমেছে।

তারপরও যারা খেজুর রসের উপর নির্ভরশীল,মূলত তারাই এখন কেউ গাছের পরির্চযা বা কেউ রস সংগ্রহে ব্যস্ত। খেজুর গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ায় খেজুর রসের ঐতিহ্যও দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে।খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে হলে প্রথমে খেজুর গাছের উপরিভাগে মাথার অংশকে ভালো করে পরিস্কার করতে হয়।

সেই সাদা অংশ থেকে বিশেষ কায়দায় ছোট-বড় কলসি বা হাঁড়ি হিসেবে পরিচিত মাটির পাত্রে রস সংগ্রহ করা হয়।তবে কালের ভেদে এখন অনেক গাছী সেই মাটির পাত্রের বিকল্প হিসেবে প্লাস্টিকের জার্কিনও ব্যবহার করছেন।ছোট ও মাঝারিসহ এমনকি বিশাল বড় বিভিন্ন রকমের খেজুর গাছে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েই গাছীদের কোমড়ে মোটা রশির দঁড়ি বেঁধেগাছে ঝুলে খেজুর গাছের পরিচযা ও রস সংগ্রহ করতে হয়।

প্রতিদিন বিকালে খেজুর খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিস্কার করে ছোট-বড় মাটির কলসি খেজুর গাছে বাঁধেন রসের জন্য। সাতসকালে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তারা।

রসের মান ভালো পাওয়ার জন্য প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন রস সংগ্রহে বিরতি দেন।ফলে রসের স্বাদ আরো বেশি মিষ্টি হয় বলেই গাছীরা জানিয়েছেন।রস সংগ্রহকারীরা কাঁচা রস এলাকার বিভিন্ন স্থানে ও হাট বাজারে খাওয়ার জন্য বিক্রয় করেন।

আবার কেউ কেউ রস দিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রয় করেন। গ্রামের অনেক মানুষ শীতের সকালে সু-স্বাদু এই খেজুর রস ও খেজুর রসের তৈরি গুড় কেনার জন্য অপেক্ষায় থাকেন খেজুর রসের তৈরি বিভিন্ন রকমের পাটালিও লালী গুড়এর চাহিদাও অনেক।এ রস থেকেতৈরি গুড় দিয়ে মুখরোচক খাবার,পায়েসসহ হরেক রকমের লোভনীয় পিঠাও তৈরির ধুম পড়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি।

বলতে গেলে বাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্যের একটি অংশ এই রস।খেজুর রসের ঐতিহ্য ধরে রাখতে খেজুর গাছ রক্ষাসহ নতুনভাবে রোপনের উদ্যেগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল।