প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি শেখ হাসিনার আহ্বান
- আপডেট : ১১:৪৩:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১
- / 179
বিশ্বের স্বল্প আয়ের দেশগুলোর প্রতি সহযোগিতার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (১২ নভেম্বর) প্যারিস পিস ফোরামে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। বিশ্বের স্বল্প আয়ের যে দেশগুলোকে প্রায়ই ‘গ্লোবাল সাউথ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়, সেসব দেশের কোটি কোটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে উত্তর গোলার্ধের ধনী দেশগুলোর ‘ব্যর্থতার’ বিষয়টি তুলে ধরে আন্তর্জাতিকভাবে দেওয়া তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে এ সময় গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এখন বিশ্বায়নের এক অসম প্রভাব দেখতে পাচ্ছি। কোভিড-১৯ মহামারিতে আমরা দেখেছি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গ্লোবাল সাউথের কোটি কোটি মানুষের প্রয়োজনে সাড়া দিতে ব্যর্থ করেছে। টিকা আর চিকিৎসা সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশাল ব্যবধান তেমনই দুটি বিষয়।’ স্বল্প আয়ের দেশগুলোর জন্য অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে উত্তরের ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সাউথ-সাউথ কোঅপারেশনের আওতায় নেওয়া প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা এবং স্বচ্ছতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন শেখ হাসিনা।
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন হলো জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের সহযোগিতায় পরিচালিত স্বল্প আয়ের দেশগুলোর উন্নয়ন সহযোগিতা প্ল্যাটফর্ম। ‘সাউথ-সাউথ অ্যান্ড ট্রায়াঙ্গুলার কো-অপারেশন’ শীর্ষক এ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিপুল পরিমাণে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের মতো কিছু উন্নয়নশীল দেশের রয়েছে। সেসব দেশকে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি দেওয়া হলে টিকাপ্রাপ্তিতে বৈষম্য দূর করতে এসব দেশ ভূমিকা রাখতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, সাউথ-সাউথ উন্নয়ন সহযোগিতা কর্মসূচিতে সহায়তার মাধ্যমে উত্তরের দেশগুলো তাদের নিজেদের সম্মত উন্নয়ন অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘অনেক উন্নত দেশ এখনও তাদের আন্তর্জাতিকভাবে সম্মত উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে রয়েছে। তাদের জন্য সাউথ-সাউথ উন্নয়ন সহযোগিতা কার্যক্রমকে সমর্থন করা তাদের নিজস্ব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের একটি উপায় হতে পারে।’
গ্লোবাল সাউথ-এ অনেক নিজস্ব উন্নয়ন সমাধান রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত অর্থায়নের মাধ্যমে, এই সমাধানগুলোর অনেকগুলো অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে প্রয়োগ করা ও জোরদার করা যেতে পারে। এই প্রয়াস প্রযুক্তিগত সহায়তার নামে পুনরায় সমাধান উদ্ভাবন এড়াতে সাহায্য করতে পারে।’
২০১৯ সালে একটি ‘সাউথ-সাউথ জ্ঞান ও উদ্ভাবন কেন্দ্র’ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি দক্ষিণে উন্নয়ন চ্যালেঞ্জের জন্য প্রযুক্তিগত সমাধান সৃষ্টির জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করবে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি জাতিসংঘ, জি২০ এবং ওইসিডি-কে এই ধরনের দূরদর্শী প্রস্তাবগুলোতে বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাউথ-সাউথ সহযোগিতার ধারণাটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান রয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের জন্য ২০৩০ এজেন্ডায় স্থান পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সাউথ-সাউথ সহযোগিতার উদ্যোগ জোরদার হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের সৃজনশীল উন্নয়ন সমাধানের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।’ তবুও সাউথ-সাউথ সহযোগিতার প্রয়াস আন্তর্জাতিক উন্নয়ন আলোচনায় পেছনে আসন নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়ে প্রচলিত চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করা কঠিন হয়ে পড়েছে কারণ এই ধরনের অনেক সম্ভাব্য সাউথ-সাউথ সহযোগিতা প্রকল্পের অর্থায়ন কম রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ত্রিমুখী সহযোগিতার ধারণাটি সম্ভাবনার অনুরূপ সফল হয়নি এবং এই ঘাটতি দূর করা দরকার।’
বিশ্বব্যাপী বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে অসম প্রতিক্রিয়া লক্ষ্ করা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন আমরা দেখেছি যে,আন্তর্জাতিক শাসন ব্যবস্থা গ্লোবাল সাউথের লাখ লাখ লোককে সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ভ্যাকসিন ও চিকিৎসার সুযোগ লাভের বিশাল ব্যবধানটি খুব বেশি উল্লেখ করার মতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশের ভ্যাকসিনের সমতা ও গুণমান নিশ্চিত করার সক্ষমতা রয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভ্যাকসিন শেয়ার করার লক্ষ্যে বিপুল সংখ্যক ভ্যাকসিন উৎপাদনে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান বা ট্রিপস ছাড় দেওয়াসহ সহায়তা প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ মহামারী চলাকালীন জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ ও অন্যান্য সুবিধা কয়েকটি বন্ধু দেশে পাঠিয়েছে এবং একটি ক্ষেত্রে, ভ্যাকসিন প্রদান জন্য তার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীবাহিনীকে প্রেরণ করেছে।’
বাংলাদেশ অনেক বছর ধরে অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার নিজস্ব উন্নয়ন অভিজ্ঞতা বিনিময় করার জন্য কাজ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষি, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার, অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, প্রজনন স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানে আমাদের অর্জন বিশ্বের অন্যান্য অংশে পৌঁছে গেছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, গত বিশ বছরে আমাদের কাজের উপর ভিত্তি করে, আমরা জাতিসংঘের উদ্যোগে ভ্রাতৃপ্রতিম আফগান জনগণের জন্য মানবিক সহায়তায় নিয়োজিত হওয়ায় প্রস্তাব দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এলডিসি স্ট্যাটাস থেকে উত্তরণ লাভ করায় আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার জন্য কাজ করা।’
‘প্ল্যাটফর্মটি আমাদের মূল্য-ভিত্তিক কূটনীতির কাজকে সমন্বয় ও সম্প্রসারিত করবে এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, শান্তিরক্ষা ও মানবিক প্রচেষ্টায় অবদান রাখার ক্ষেত্রে একাধিক উপায়ে সাহায্য করবে’ যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সবসময়ই বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) স্বার্থ তুলে ধরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করছি এবং গ্লোবাল সাউথের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি দীর্ঘদিনের এবং প্রমাণিত।’