‘পৃথিবী ও এর মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’
- আপডেট : ১১:৪৫:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২১
- / 160
অনেক দরকষাকষি, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে অতিরিক্ত সময়ে পৌঁছে দৌড়ঝাঁপ- সবশেষে একটি চুক্তি। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে এভাবেই শেষ হয়েছে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন।
সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে যে চুক্তিটি হয়েছে, তাকে অনেকে বলছেন ‘মন্দের ভালো’। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে বিশ্বব্যাপী আন্দোলনকারীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, এ চুক্তি ‘পৃথিবীর ও এর মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’
বিশ্বের প্রায় ২০০ দেশ এ চুক্তিতে সই করেছে। তাদেরকে করতালি দেয়া হচ্ছে এ কারণে যে তারা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার প্রাক শিল্পায়ন যুগের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখতে কার্বন গ্যাসের নির্গমন কমিয়ে রাখার সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
চুক্তির আগে বিবাদ বাধে এ কয়লা নিয়েই। ভারত, চীনের মতো দেশগুলো কয়লার ব্যবহার কমানোর পক্ষে সম্মতি দিয়েছে; কয়লার ব্যবহার বাদ দিতে রাজি হয়নি তারা।
বলা বাহুল্য, কয়লা এবং জ্বীবাশ্ম জ্বালানী থেকে নিসৃত কার্বন ডাই অক্সাইডই প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস, যা দ্রুত গতিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়িয়ে চলেছে।
এ চুক্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বিষয়ে কি আছে? কাতারের দোহাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, উন্নত দেশগুলো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো অনুন্নত দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সে বিষয়ে চুক্তিতে সামন্যই উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাবাচক ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা অনুন্নত দেশগুলোকে জলবায়ু ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো আর্থিক ঘোষণা চুক্তিতে উল্লেখে বিরত রাখতে তদবির করেছে।
তবে এ নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনার সুযোগ রেখেছে তারা। জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী কার্বন, মিথেনসহ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে চীন, যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশগুলোই। কিন্তু গুরুতর সমস্যায় পড়ছে সমুদ্র উপকূলের স্বল্প আয়ের দেশগুলো।
এসব দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ার কারণে বাড়ছে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগও। সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বেড়ে তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল।
তবে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস এ চুক্তির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘অনুমোদিত খসড়াটি একটি আপোষ।’ তিনি বলেন, ‘এটাই যথেষ্ট নয়। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের এক্ষুণি সময়।’
এ ছাড়া বিশ্বের কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। চুক্তি প্রসঙ্গে মালদ্বীপের পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী অমিনাথ সাউনা বলেন, ‘অন্যদের জন্য যা ভারসাম্যপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ, তা মালদ্বীপের জন্য কোনো কাজের নাও হতে পারে।’
জলবায়ু পরিবর্তন ও উন্নয়ন বিষয়ক আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের পরিচালক সলিমুল হক গ্লাসগো চুক্তি নিয়ে সরাসরি তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু বুঝি, তাতে এটা ব্যর্থ।’
জলবায়ু আন্দোলনকারীরা এ চুক্তির বিরোধিতা করছেন। পরিবেশবাদী কর্মী গ্রিটা থুনবার্গ বলছেন, ‘ব্লাহ! ব্লাহ! ব্লাহ! ছাড়া আর কোনো অর্জন নেই।’
ওয়ার অন ওয়ান্ট নামের একটি সংগঠনের কর্মী আসাদ রহমান বলেন, এ চুক্তিটি ‘পৃথিবী ও এর মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।’