‘কোভিডে উন্নয়ন-অগ্রগতি সাময়িক বাধাগ্রস্ত হলেও থেমে যায়নি’

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:৫৩:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ নভেম্বর ২০২১
  • / 179

কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে দেওয়া স্মারক বক্তৃতায় এ মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে, বিকেল তিনটায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীরর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

তিনি বলেন, ‘বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার হতে বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে এবং জিডিপির আকার ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লক্ষ ৮২ হাজার কোটি টাকা হতে ২৭ লক্ষ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। রফতানি প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে প্রায় ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে আজ ৪৮ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাজেটের আকার ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা থেকে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ২ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা থেকে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এডিপির আকার প্রায় ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হতে ২ লক্ষ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে এবং কিছু কিছু সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এমডিজি অর্জনে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন বিশেষভাবে শিশুমৃত্যু হ্রাসের কারণে বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক এমডিজি পুরস্কারে ভূষিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় আমাদের গড় আয়ু ছিল ৪৭, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ বছরের উপরে। প্রাথমিক স্কুলে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় শতভাগ। স্বাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে। আমাদের উৎপাদিত পোশাক, সিমেন্ট, ওষুধ, ফুল, সবজি, মাছসহ অসংখ্য পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। পোশাক রফতানিতে এবং ইন্টারনেটভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ার পরও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য উৎপাদনে আজ আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে ২০০৫ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ সেখানে ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।’

তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার আধুনিক রূপ ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ কোনো স্বপ্ন নয়, বরং বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ’র পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন শুধু দেশে নয়, বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যখন গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত তখন সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল উদ্যোগ মানুষকে দেখিয়েছে নতুন পথ, যুগিয়েছে প্রেরণা। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে নেতৃত্বদান ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘উইটসা এমিনেন্ট পারসনস অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছেন। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও অবদানের জন্য ‘অ্যাসোসিও লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার সুযোগ্য পুত্রের এ অর্জন বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করেছে।”

তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’। কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি। সরকারের সময়োচিত ও দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এবং সংক্রমণজনিত মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত কম। ইতোমধ্যে ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৯১ হাজার ৫৭৮ জনকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়েছে। করোনার সংকট মোকাবিলায় অর্থনীতিকে দ্রুত পুনর্গঠন এবং এর গতি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে। এ সব প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন কর্মসৃজন ও কর্মসুরক্ষা, অভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা প্রদান সহায়তাসহ স্বল্প সুদে বিভিন্ন প্রকার সুবিধা প্রদান করায় বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-প্রতিষ্ঠানসমূহ দ্রুত উৎপাদনে ফিরতে সক্ষম হয়েছে। ফলে দেশের রফতানি আগের গতি ফিরে পেয়েছে। করোনাকালীন বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ওএমএস কার্যক্রম এবং নগদ অর্থ বিতরণ ইত্যাদি নানামুখী জনকল্যাণকর কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের একটি মানুষও না খেয়ে থাকেনি।”

তিনি আরও বলেন, “জাতি হিসাবে আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত অতিক্রম করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সোপান বেয়ে আমরা পৌঁছে গিয়েছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর স্বর্ণ তোরণে। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণ এখন সমাপ্তির পথে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোবল, বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ‘পদ্মাসেতু’ বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সেতুর বাস্তবায়ন জাতি হিসাবে আমাদের স্বকীয়তা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা, সক্ষমতা, জবাবদিহি, দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতীকস্বরূপ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস দিয়েছে। পদ্মা সেতুর নেগোসিয়েশন-এর পর অন্যান্য মেগা প্রকল্পে নেগোসিয়েশন দক্ষতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুলেন টানেলের দ্বিতীয় টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সমগ্র দেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ডিসেম্বর ২০২২ সালে বিজয় দিবসের উপহার হিসাবে দেশের জনগণ প্রথম মেট্রো রেলে চলাচল করতে পারবে। ৫৭তম দেশ হিসাবে বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এমডিজির সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত এসডিজি’র বিভিন্ন সূচকে অনন্য অগ্রগতির স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি বাংলাদেশ ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেণ্ট সল্যুশন নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন কৌশলবিদ অধ্যাপক জেফরি ডেভিড স্যাকস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভার্চুয়ালি ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেন। এ প্রাপ্তি আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের এক বিশাল অর্জন। এ সম্মান বাংলাদেশের, এ সম্মান সমগ্র বাঙালি জাতির।”

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনেস্কো কর্তৃক প্রবর্তিত ‘UNESCO-Bangladesh Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman International Prize for the Creative Economy’র আওতায় প্রথমবারের মতো উগাণ্ডার মোটিভ ক্রিয়েশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামে এ আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন জাতি হিসাবে আমাদের আরেকটি অসাধারণ প্রাপ্তি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

‘কোভিডে উন্নয়ন-অগ্রগতি সাময়িক বাধাগ্রস্ত হলেও থেমে যায়নি’

আপডেট : ০১:৫৩:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ নভেম্বর ২০২১

কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে দেওয়া স্মারক বক্তৃতায় এ মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে, বিকেল তিনটায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীরর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

তিনি বলেন, ‘বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ৫৪৩ মার্কিন ডলার হতে বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে এবং জিডিপির আকার ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লক্ষ ৮২ হাজার কোটি টাকা হতে ২৭ লক্ষ ৯৬ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। রফতানি প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে প্রায় ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে আজ ৪৮ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাজেটের আকার ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা থেকে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ২ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা থেকে ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এডিপির আকার প্রায় ৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হতে ২ লক্ষ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে এবং কিছু কিছু সূচকে বাংলাদেশ প্রতিবেশি দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। এমডিজি অর্জনে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন বিশেষভাবে শিশুমৃত্যু হ্রাসের কারণে বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক এমডিজি পুরস্কারে ভূষিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় আমাদের গড় আয়ু ছিল ৪৭, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ বছরের উপরে। প্রাথমিক স্কুলে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় শতভাগ। স্বাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস পেয়েছে। আমাদের উৎপাদিত পোশাক, সিমেন্ট, ওষুধ, ফুল, সবজি, মাছসহ অসংখ্য পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। পোশাক রফতানিতে এবং ইন্টারনেটভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কৃষি জমির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাওয়ার পরও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় খাদ্য উৎপাদনে আজ আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলে ২০০৫ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ সেখানে ২০১৯ সালে দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।’

তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার আধুনিক রূপ ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ কোনো স্বপ্ন নয়, বরং বাস্তবতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ’র পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনায় ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন শুধু দেশে নয়, বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যখন গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত তখন সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল উদ্যোগ মানুষকে দেখিয়েছে নতুন পথ, যুগিয়েছে প্রেরণা। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে নেতৃত্বদান ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘উইটসা এমিনেন্ট পারসনস অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়েছেন। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও অবদানের জন্য ‘অ্যাসোসিও লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং তার সুযোগ্য পুত্রের এ অর্জন বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি করেছে।”

তিনি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, ‘৭ কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’। কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত করলেও থামিয়ে দিতে পারেনি। সরকারের সময়োচিত ও দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে অনেক উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ এবং সংক্রমণজনিত মৃত্যুর হার অপেক্ষাকৃত কম। ইতোমধ্যে ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৯১ হাজার ৫৭৮ জনকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়েছে। করোনার সংকট মোকাবিলায় অর্থনীতিকে দ্রুত পুনর্গঠন এবং এর গতি পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে। এ সব প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন কর্মসৃজন ও কর্মসুরক্ষা, অভ্যন্তরীণ চাহিদা সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা প্রদান সহায়তাসহ স্বল্প সুদে বিভিন্ন প্রকার সুবিধা প্রদান করায় বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-প্রতিষ্ঠানসমূহ দ্রুত উৎপাদনে ফিরতে সক্ষম হয়েছে। ফলে দেশের রফতানি আগের গতি ফিরে পেয়েছে। করোনাকালীন বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ওএমএস কার্যক্রম এবং নগদ অর্থ বিতরণ ইত্যাদি নানামুখী জনকল্যাণকর কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের একটি মানুষও না খেয়ে থাকেনি।”

তিনি আরও বলেন, “জাতি হিসাবে আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত অতিক্রম করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সোপান বেয়ে আমরা পৌঁছে গিয়েছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর স্বর্ণ তোরণে। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মাসেতুর নির্মাণ এখন সমাপ্তির পথে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় মনোবল, বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে ‘পদ্মাসেতু’ বাস্তবায়ন হয়েছে। এ সেতুর বাস্তবায়ন জাতি হিসাবে আমাদের স্বকীয়তা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা, সক্ষমতা, জবাবদিহি, দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের প্রতীকস্বরূপ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস দিয়েছে। পদ্মা সেতুর নেগোসিয়েশন-এর পর অন্যান্য মেগা প্রকল্পে নেগোসিয়েশন দক্ষতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বহুলেন টানেলের দ্বিতীয় টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সমগ্র দেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ডিসেম্বর ২০২২ সালে বিজয় দিবসের উপহার হিসাবে দেশের জনগণ প্রথম মেট্রো রেলে চলাচল করতে পারবে। ৫৭তম দেশ হিসাবে বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এমডিজির সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ হতে ২০২০ সাল পর্যন্ত এসডিজি’র বিভিন্ন সূচকে অনন্য অগ্রগতির স্বীকৃতিস্বরূপ সম্প্রতি বাংলাদেশ ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত হয়। সাসটেইনেবল ডেভেলপমেণ্ট সল্যুশন নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন কৌশলবিদ অধ্যাপক জেফরি ডেভিড স্যাকস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভার্চুয়ালি ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেন। এ প্রাপ্তি আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের এক বিশাল অর্জন। এ সম্মান বাংলাদেশের, এ সম্মান সমগ্র বাঙালি জাতির।”

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনেস্কো কর্তৃক প্রবর্তিত ‘UNESCO-Bangladesh Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman International Prize for the Creative Economy’র আওতায় প্রথমবারের মতো উগাণ্ডার মোটিভ ক্রিয়েশন নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামে এ আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন জাতি হিসাবে আমাদের আরেকটি অসাধারণ প্রাপ্তি।