অগ্নিগর্ভ নাগাল্যান্ডে গুলি-সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ১৬
- আপডেট : ১২:৩৮:২৮ অপরাহ্ন, সোমাবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২১
- / 117
কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রথমে শনিবার রাতে ভুল বোঝাবুঝির জেরে নিরস্ত্র ৬ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তারপর দেহ নিতে আসা গ্রামবাসীদের ওপর আরও এক দফা গুলি চালানো হয়। এতে আরও কয়েকজনের প্রাণহানী ঘটে। গ্রামবাসীদের আক্রমণে ভারতীয় সেনার এক প্যারা কমান্ডোও নিহত হয়েছেন।
এ পরিস্থিতির মধ্যে রোববার বিকেলে উত্তেজিত জনতা আসাম রাইফেলসের শিবিরে হানা দিলে তৃতীয় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ২ জন নিহত হন। অগ্নিগর্ভ নাগাল্যান্ডের মন জেলায় এখনও পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৬।
উত্তেজনা এড়াতে নাগাল্যান্ড রাজ্য সরকার মন জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট, ডেটা পরিষেবা, এসএমএস পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও দিল্লি সফর ও নাগা শান্তি আলোচনা সংক্রান্ত বৈঠক অসমাপ্ত রেখেই বিকেলে কোহিমা পৌঁছান। কাল রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বন্ধ ডাকা হয়েছে। মন জেলায় জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।
ঠিক কী ঘটেছিল শনিবার রাতে টিরু এলাকায়? জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় কয়লা খনির কাজ সেরে দিনমজুরেরা একটি পিক আপ ভ্যানে চেপে নিজেদের গ্রামে ফিরছিলেন। প্রতি সপ্তাহেই রোববার পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে সোমবার আবার খনির কাজে যোগ দেন তারা।
প্যারা কমান্ডোদের কাছে খবর ছিল, অরুণাচলের দিক থেকে জঙ্গিরা নাগাল্যান্ডে ঢুকবে। ওটিং গ্রামের কাছে খনিমজুরদের গাড়ি আসতে দেখেই কমান্ডোরা গুলি চালাতে থাকেন। পিক আপ ভ্যানে ছিলেন আটজন। ঘটনাস্থলে ৬ জনের মৃত্যু হয়। ২ জন জখম হন।
স্থানীয় কন্যাক সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, খবর পেয়ে গ্রামের মানুষ সেখানে হাজির হলে কমান্ডোদের সঙ্গে তাদের আরও এক দফা সংঘর্ষ হয়।
কমান্ডোদের দু’টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় জনতা। এক কমান্ডোকে ঘিরে ফেলেন গ্রামবাসীরা। তার গুলিতে মারা যান আরও কয়েক জন গ্রামবাসী। গুলি শেষ হলে তাকে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
কমান্ডোরা দুই জখম গ্রামবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালিয়ে ডিব্রুগড় পৌঁছান। সেখানে মেডিক্যাল কলেজে তাদের ভর্তি করে সেনাবাহিনী। দু’জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। বাকি জখম গ্রামবাসীদের মন ও ডিমাপুরের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মন জেলার বিজেপি সভাপতি ন্যাওয়াং কন্যাক দাবি করেন, বিজেপির পতাকা লাগানো গাড়িকেও রেয়াত করেনি সেনা। তার দাবি, গুলিচালনার কথা জেনে ভাইপো, প্রতিবেশী ও চালককে নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু কাছাকাছি আসতেই তাদের গাড়ি আটকানো হয়।
পরিচয় দেওয়ার পরও গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালান জওয়ানরা। কন্যাকের এক প্রতিবেশী মারা যান। বাকিরা আহত হন। তার কথায়, ‘হিন্দুস্তানি আর্মি খুশি খুশি গোলি মার রহা থা। গাড়িতে বিজেপির পতাকা দেখে ও আমার পরিচয় জেনেও ওরা আমাদের মারার জন্য গুলি চালাতে থাকে।’
ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে মৌন প্রার্থনা পালিত হয়। বাতিল করা হয়েছে হর্নবিল উৎসব। প্রতিবাদ চলাকালীনই মনের বাসিন্দারা মিছিল করে আসাম রাইফেলস শিবিরের দিকে এগোন। বাধা পেতেই উত্তেজিত জনতা আসাম রাইফেলস শিবির ভাঙচুর শুরু করেন। জওয়ানরা শূন্যে গুলি চালান। কাজ হয়নি। শিবিরের বেশ কিছু পোস্টে আগুন লাগানোর পর গুলি চলতে থাকে। বেশ কয়েক জন প্রতিবাদকারী হতাহত হন।
শনিবার রাতের ঘটনা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও বলেন, ‘ওটিং গ্রামে ভুল করে সাধারণ গ্রামবাসীদের হত্যা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। সরকার নিহতদের পরিবারের পাশে রয়েছে। ঘটনার তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষ তদন্ত দল (সিট) গঠন করা হয়েছে। ন্যায়বিচার মিলবেই।’
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে টুইটে লেখেন, ‘উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। নিহতদের পরিবার অবশ্যই ন্যায়বিচার পাবে।’
নাগাল্যান্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সর্বদলীয় সরকারের অন্যতম শীর্ষ নেতা টি আর জেলিয়াংয়ের মতে, ‘মন জেলার ওটিংয়ে নিরীহদের যে গণহত্যা হয়েছে, তার কোনও ক্ষমা বা অজুহাত হয় না। সভ্য সমাজে নিরাপত্তা বাহিনীর তরফে এমন নৃশংসতা অকল্পনীয়।’
ঘটনা প্রসঙ্গে বিবৃতি দিয়ে নাগাল্যান্ডের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এনএসসিএন আইএম বলেছে, ‘এটি নাগাল্যান্ডের ইতিহাসে আরও এক কালো দিবস। সূত্রের ভুল খবরের অজুহাতে এতোজনের হত্যার দায় এড়াতে পারবে না ভারতীয় বাহিনী। একদিকে শান্তি প্রক্রিয়া চালিয়ে অন্যদিকে নিরীহ নাগাদের রক্তপাত মেনে নেয়া যায় না।’