ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ২৩ বিশিষ্টজনের প্রতিক্রিয়া

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : ০১:৪০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • / 129
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় আবারও দেশের বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ছে। এছাড়া পাঁচ লিটারে ৩৫ টাকা এবং পাম তেলে ১৫ টাকা বাড়ছে। সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ২৩ বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও কষ্টকর করে তুলবে।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা ভোজ্যতেলসহ খাদ্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দুই বছর যাবৎ করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সীমাহীন আর্থিক দুরবস্থায় নিমজ্জিত। করোনাকালে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছে, আয় কমেছে অনেকের। এ রকম পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রীর দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। নতুন করে ভোজ্যতেল বিশেষত সাধারণ মানুষ যে তেল ব্যবহার করে, সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও কষ্টকর করে তুলবে।’

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘পরিসংখ্যান বলছে, করোনা মহামারিকালে বিপুল জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেলেও কোটিপটির সংখ্যা বেড়েছে। ফলে রাষ্ট্র-সমাজ সর্বত্র বৈষম্য ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষণীয়। সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সহিংসতায় শতাধিক প্রাণাহানির ঘটনা এই সংকটের বহিঃপ্রকাশ।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বাজারব্যবস্থায় সিন্ডিকেট বিভিন্ন সময়ে মজুত, কৃত্রিম সংকট তৈরি ও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে মূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ ভোক্তার কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নেয়। এ ধরনের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠলেও এদের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকারি সংস্থাগুলো আবারও বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।’

ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি করা হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধূরী, রামেন্দু মজুমদার, ডা. সারওয়ার আলী, ডা. ফওজিয়া মোসলেম, নুর মোহাম্মদ তালুকদার, ডা. রশিদ-ই-মাহাবুব, খুশী কবির, অধ্যাপক এম এম আকাশ, রোবায়েত ফেরদৌস, সেলু বাসিত, ডা. লেনিন চৌধুরী, জাহিদুল বারী, মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিম রেজা, সালেহ আহমেদ, পারভেজ হাসেম, লতিফুল বারী হামিম, আব্দুর রাজ্জাক, এ কে আজাদ, অলক দাস গুপ্ত ও দীপায়ন খীসা।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা নির্ধারিত ছিল। বোতলজাত সয়াবিনের ৫ লিটারের দাম ৭৬০ ও পাম তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১১৮ টাকা।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮ টাকা বেড়ে ১৬৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বেড়ে ১৪৩ টাকা, বোতলজাত সয়াবিনের ৫ লিটারের দাম ৩৫ টাকা বেড়ে ৭৯৫ ও পাম তেলের দাম ১৫ টাকা বেড়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, গত ১৯ জানুয়ারি তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেছিলাম। তখন দেখা গেলো আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার ফলে এটা অ্যাডজাস্ট করা দরকার। তাদেরও কথা ছিল যে এটা অ্যাডজাস্ট না করলে তারা এলসি খুলতে পারবে না, তাদের লস হচ্ছে। তাদের হিসাবে ১৯ তারিখই বলেছে ২০০ কোটি টাকা লস হয়েছে। জানুয়ারি মাসের যে ফিগার সেটাসহ ক্যালকুলেট করে আমরা এই দাম ঠিক করলাম। কিছু অ্যাডজাস্ট করা হলো, যেটা ছিল সেটার সঙ্গে।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, নতুন যে দাম নির্ধারিত হয়েছে সেটি তারা তাদের প্যাডে ডিক্লেয়ার করছে, মাঝে যেটি করেছে সেটি ডিক্লেয়ারড ছিল না। তাদের প্যাডে তারা এবার ডিক্লেয়ার করবে। তাই এই দামটা আমরা রাখতে পারব। আমরা এটি মনিটরিং করব।

এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার কথা উল্লেখ করে নতুন দাম কার্যকরের দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। পরে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ২৩ বিশিষ্টজনের প্রতিক্রিয়া

আপডেট : ০১:৪০:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ায় আবারও দেশের বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা এবং বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা বাড়ছে। এছাড়া পাঁচ লিটারে ৩৫ টাকা এবং পাম তেলে ১৫ টাকা বাড়ছে। সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ২৩ বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও কষ্টকর করে তুলবে।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা ভোজ্যতেলসহ খাদ্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দুই বছর যাবৎ করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সীমাহীন আর্থিক দুরবস্থায় নিমজ্জিত। করোনাকালে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছে, আয় কমেছে অনেকের। এ রকম পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রীর দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। নতুন করে ভোজ্যতেল বিশেষত সাধারণ মানুষ যে তেল ব্যবহার করে, সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে আরও কষ্টকর করে তুলবে।’

বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘পরিসংখ্যান বলছে, করোনা মহামারিকালে বিপুল জনগোষ্ঠীর ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেলেও কোটিপটির সংখ্যা বেড়েছে। ফলে রাষ্ট্র-সমাজ সর্বত্র বৈষম্য ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষণীয়। সাম্প্রতিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সহিংসতায় শতাধিক প্রাণাহানির ঘটনা এই সংকটের বহিঃপ্রকাশ।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বাজারব্যবস্থায় সিন্ডিকেট বিভিন্ন সময়ে মজুত, কৃত্রিম সংকট তৈরি ও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে মূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ ভোক্তার কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নেয়। এ ধরনের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠলেও এদের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সরকারি সংস্থাগুলো আবারও বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।’

ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম না বাড়ানোর দাবি করা হয়।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধূরী, রামেন্দু মজুমদার, ডা. সারওয়ার আলী, ডা. ফওজিয়া মোসলেম, নুর মোহাম্মদ তালুকদার, ডা. রশিদ-ই-মাহাবুব, খুশী কবির, অধ্যাপক এম এম আকাশ, রোবায়েত ফেরদৌস, সেলু বাসিত, ডা. লেনিন চৌধুরী, জাহিদুল বারী, মেসবাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিম রেজা, সালেহ আহমেদ, পারভেজ হাসেম, লতিফুল বারী হামিম, আব্দুর রাজ্জাক, এ কে আজাদ, অলক দাস গুপ্ত ও দীপায়ন খীসা।

সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৯ অক্টোবর সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩৬ টাকা নির্ধারিত ছিল। বোতলজাত সয়াবিনের ৫ লিটারের দাম ৭৬০ ও পাম তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১১৮ টাকা।

নতুন দাম অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৮ টাকা বেড়ে ১৬৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বেড়ে ১৪৩ টাকা, বোতলজাত সয়াবিনের ৫ লিটারের দাম ৩৫ টাকা বেড়ে ৭৯৫ ও পাম তেলের দাম ১৫ টাকা বেড়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব বলেন, গত ১৯ জানুয়ারি তেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেছিলাম। তখন দেখা গেলো আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার ফলে এটা অ্যাডজাস্ট করা দরকার। তাদেরও কথা ছিল যে এটা অ্যাডজাস্ট না করলে তারা এলসি খুলতে পারবে না, তাদের লস হচ্ছে। তাদের হিসাবে ১৯ তারিখই বলেছে ২০০ কোটি টাকা লস হয়েছে। জানুয়ারি মাসের যে ফিগার সেটাসহ ক্যালকুলেট করে আমরা এই দাম ঠিক করলাম। কিছু অ্যাডজাস্ট করা হলো, যেটা ছিল সেটার সঙ্গে।

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, নতুন যে দাম নির্ধারিত হয়েছে সেটি তারা তাদের প্যাডে ডিক্লেয়ার করছে, মাঝে যেটি করেছে সেটি ডিক্লেয়ারড ছিল না। তাদের প্যাডে তারা এবার ডিক্লেয়ার করবে। তাই এই দামটা আমরা রাখতে পারব। আমরা এটি মনিটরিং করব।

এর আগে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার কথা উল্লেখ করে নতুন দাম কার্যকরের দাবি জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। পরে মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।