শনিবার, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে নতুন উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
অক্টোবর ১৫, ২০২৫ ৩:৪৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জুলাই ২০২৪-এর অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা (এমএইচপিএসএস) জোরদারে ‘ওয়েলবিইং প্রকল্প’ নামে একটি বিশেষ উদ্যোগ শুরু হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (এইচআরডিসি) এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ) যৌথভাবে এই প্রকল্পের উদ্বোধনী কর্মশালা আয়োজন করে। ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (ড্যানিডা) আর্থিক সহায়তায় এবং ডিগনিটির সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এই প্রকল্পের লক্ষ্য- অভ্যুত্থান ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন ও মানসিক পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করা।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকায় এনআইএমএইচ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী কর্মশালার উদ্বোধন করেন শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের পিতা মাহবুবুর রহমান বশির।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের পাশে থাকা শুধু সহানুভূতি নয়, এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

এইচআরডিসির মহাসচিব ও প্রধান নির্বাহী মো. মাহবুল হক স্বাগত বক্তব্যে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান শুধু রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক সংকট নয়, এটি মানসিক ট্রমার এক গভীর অধ্যায়।

তিনি বলেন, আমাদের কাজ সেই আঘাত থেকে মানুষকে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করতে সহায়তা করা। এইচআরডিসির পরিচালক মো. জিয়ানুর কবির কর্মশালায় অভ্যুত্থান-পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির একটি প্রাথমিক তথ্যচিত্র তুলে ধরেন।

ডেনমার্ক দূতাবাসের উপপ্রধান অ্যান্ডার্স কার্লসেন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নিরাময়ের যাত্রায় ডেনমার্ক পাশে থাকবে। আমরা সংঘাত-প্রভাবিত মানুষদের জন্য মানসিক সহায়তা ও পুনর্বাসনকে মানবিক অগ্রাধিকারে রেখেছি।

প্রধান অতিথি স্বাস্থ্য সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, পুনর্বাসন কেবল চিকিৎসা বা সহায়তা নয়, এটি একটি সমন্বিত সামাজিক প্রক্রিয়া।

তিনি বলেন, সরকারি সংস্থা, এনজিও, কর্মসংস্থান ব্যাংকসহ সব অংশীজনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে, যেন ভুক্তভোগীরা অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে টেকসই সহায়তা পান।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবু জাফর জানান, জুলাই অভ্যুত্থান ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪০ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও নিটোরের সহায়তায়।

তিনি বলেন, এইচআরডিসির উদ্যোগ মানবিক সহায়তার নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কামাল আকবর জানান, মোট ১২ হাজার ৪৫৪ জন ভুক্তভোগী বিষণ্নতা ও মানসিক আঘাত থেকে মুক্তির অপেক্ষায়। কার্যকর পুনর্বাসনের জন্য এখন দরকার গভীর গবেষণা ও প্রমাণভিত্তিক হস্তক্ষেপ।

ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সামসি আরা জামান, যিনি শহীদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়র মা, তিনি বলেন, মানসিক অসুস্থতাকে ‘পাগলামি’ বলে হেয় করা বন্ধ করতে হবে। এটি চিকিৎসাযোগ্য একটি রোগ, এবং সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনই পুনর্বাসনের প্রথম ধাপ।

কর্মশালায় ভুক্তভোগীরা তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন এবং চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও মর্যাদা নিশ্চিতের দাবি জানান। এতে অংশ নেন বিভিন্ন সিভিল সোসাইটি ও এনজিও প্রতিনিধিরা, যেমন- জেনা দেরাখশানি হামাদানি (আইসিবিবিআর,ডি), সুমাইয়া তাসনিম (সোচ্চার), ফরহাদ হোসেন (লিডো), মাসুদ রানা সৌরভ (জুলাই যোদ্ধা সংসদ), আমিনুর রসুল (পিএইচএম) ও আনোয়ার হোসেন (এনজিও বিষয়ক ব্যুরো)।

সভাপতিত্ব করেন এনআইএমএইচ পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, ওয়েলবিইং প্রকল্প শুধু চিকিৎসা নয়, মানবিক পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি। এটি জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে মানসিক পুনরুদ্ধারের সূচনা।

কর্মশালার মাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থান ভুক্তভোগীদের জন্য সার্বিক পুনর্বাসন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির পথরেখা নির্ধারিত হলো- যেখানে চিকিৎসা, মানবিক সহায়তা ও মর্যাদার দাবিগুলো একত্রে জায়গা পেয়েছে।