অবৈধ পথে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন

রাজউক শ্রমিক কর্মচারী লীগের নেতৃত্বের ওপর আস্থা নেই সিংহভাগ শ্রমিক কর্মচারীর!

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : ০৮:৫১:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • / 368

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের একটি শাখা বা প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিট রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ। এই ইউনিটটির নাম- রাজউক শ্রমিক কর্মচারী লীগ। যার রেজি: নং ঢাকা-৩৮৭৩।

গত ০২/০৩/২০২১ তারিখে বিনা প্রতিদ্বদিন্দ্বতায় এই ইউনিটটির ১১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরি কমিটি অনুমোদন দেয় বিভাগীয় শ্রম দপ্তর ঢাকা। যার স্মারক নম্বর ৪০.২০.০০০০.১০১.৩৪.০০২.৯৯.৩৯৮ তারিখ: ২৯/০৩/২০২১ইং। দুই বছর মেয়াদী এই কমিটির বিভিন্ন পদে যারা রয়েছেন তারা হলেন- রাজউক কর্মচারি আবুল বাশার শরীফ সভাপতি, জাহিদুল ইসলাম সবুজ কার্যকরি সভাপতি, ইউসুফ মিয়া, হাবিবুর রহমান, মোল্লা শরিফুল ইসলাম -সহ-সভাপতি, মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী- সাধারন সম্পাদক, জাহাঙ্গীর আলম যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক, কাবুল হোসেন শেখ যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক, আব্দুল মোমিন সাংগঠনিক সম্পাদক, রোমাজ্ঝেল হোসেন খান প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, মো. দেলোয়ার হোসেন খান কোষাধ্যক্ষ ও দপ্তর সম্পাদক। আগামী ০১/০৩/২০২৩ তারিখে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বিগত দুই বছর ক্ষমতায় থাকা রাজউক শ্রমিক কর্মচারী লীগের এই কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে রাজউক শ্রমিক- কর্মচারিদের অভিযোগের অন্ত নেই। তাদের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করা শর্তে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী এই সব শ্রমিক কর্মচারীরা বলেন, বিগত দুইটি বছরে কমিটির ৪/৫ জন নেতা হেন অপকর্ম নেই যা করেনি। তারা রাজউক শ্রমিক কর্মচারী লীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ঠিকাদারী, চাঁদাবাজী, টেন্ডার বাণিজ্য প্ল্যান পাশ, প্লট জালিয়াতি, প্লটের ফাইল গায়েব, নকশা জালিয়াতি, ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের শাররীক নির্যাতন, এমন কি সাংবাদিকদের সাথেও মাস্তান সুলভ ব্যবহার করে সংগঠনটিকে কলংকিত করে ফেলেছেন।

তারা অবৈধ পথে কোটি কোটি টাকার সম্পদ উপার্জন করেছেন। আর সেসব কালোপথে উপার্জিত টাকায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নামে-বেনামে বাড়ি, গাড়ি, মার্কেটসহ জমি ক্রয় করেছেন। বৈধ আয়ের উৎসবিহীন এসব অর্থ সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এছাড়া ফাইল গায়েরসহ আরো গুরুতর কিছু দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় সভাপতি আবুল বাশার শরীফকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করেছে রাজউক প্রশাসন।

অন্যদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও নানা প্রকার অপকর্মের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন চলমান কার্যকরি কমিটির সভাপতি শরীফ আবুল বাশার শরিফ, সহ-সভাপতি, ইউসুফ মিয়া, সাধারন সম্পাদক- মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক,আব্দুল মোমিন প্রমুখ। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে।

সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো: চলতি কমিটিতে সুস্পষ্ট বিধি বিধান থাকার পরও এক তৃতীয়াংশ মহিলা সদস্য রাখা হয়নি। ২০২১ সালে সভাপতি আবুল বাশার শরীফ ও সাধারন সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী তাদের ইচ্ছে খুশি মত কমিটি তৈরী করে সেটিই শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেন। এবং মোটা অংকের টাকা খরচ করে কমিটি অনুমোদন করিয়ে নেন। যে কারণে এই কমিটির কারো কাছেই গ্রহনযোগ্যতা পায়নি।

রাজউকের সিংহভাগ শ্রমিক-কর্মচারির অভিমতে দেখা গেছে, বাশার শরীফ ও নাছির চৌধুরীর এই কমিটির ২৫% সমর্থনও নেই। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে তাদের শত প্রকার অন্যায় অবিচার ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ রুখে দাঁড়াতে সাহস পান না। তবে এবার তারা কোন ভাবেই পকেট কমিটি করার সুযোগ দেবেন না। সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও শ্রম অধিদপ্তরের বিধি বিধান মেনেই তারা নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে চান।

এ বিষয়ে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর ঢাকা এর পরিচালক মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, ‘শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিধি বিধান সঠিকভাবে পরিপালন করেই কমিটি অনুমোদন বা সত্যায়ন করা হবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

অবৈধ পথে কোটি কোটি টাকার সম্পদ অর্জন

রাজউক শ্রমিক কর্মচারী লীগের নেতৃত্বের ওপর আস্থা নেই সিংহভাগ শ্রমিক কর্মচারীর!

আপডেট : ০৮:৫১:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের একটি শাখা বা প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিট রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ। এই ইউনিটটির নাম- রাজউক শ্রমিক কর্মচারী লীগ। যার রেজি: নং ঢাকা-৩৮৭৩।

গত ০২/০৩/২০২১ তারিখে বিনা প্রতিদ্বদিন্দ্বতায় এই ইউনিটটির ১১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যকরি কমিটি অনুমোদন দেয় বিভাগীয় শ্রম দপ্তর ঢাকা। যার স্মারক নম্বর ৪০.২০.০০০০.১০১.৩৪.০০২.৯৯.৩৯৮ তারিখ: ২৯/০৩/২০২১ইং। দুই বছর মেয়াদী এই কমিটির বিভিন্ন পদে যারা রয়েছেন তারা হলেন- রাজউক কর্মচারি আবুল বাশার শরীফ সভাপতি, জাহিদুল ইসলাম সবুজ কার্যকরি সভাপতি, ইউসুফ মিয়া, হাবিবুর রহমান, মোল্লা শরিফুল ইসলাম -সহ-সভাপতি, মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী- সাধারন সম্পাদক, জাহাঙ্গীর আলম যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক, কাবুল হোসেন শেখ যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক, আব্দুল মোমিন সাংগঠনিক সম্পাদক, রোমাজ্ঝেল হোসেন খান প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, মো. দেলোয়ার হোসেন খান কোষাধ্যক্ষ ও দপ্তর সম্পাদক। আগামী ০১/০৩/২০২৩ তারিখে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বিগত দুই বছর ক্ষমতায় থাকা রাজউক শ্রমিক কর্মচারী লীগের এই কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে রাজউক শ্রমিক- কর্মচারিদের অভিযোগের অন্ত নেই। তাদের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করা শর্তে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী এই সব শ্রমিক কর্মচারীরা বলেন, বিগত দুইটি বছরে কমিটির ৪/৫ জন নেতা হেন অপকর্ম নেই যা করেনি। তারা রাজউক শ্রমিক কর্মচারী লীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে ঠিকাদারী, চাঁদাবাজী, টেন্ডার বাণিজ্য প্ল্যান পাশ, প্লট জালিয়াতি, প্লটের ফাইল গায়েব, নকশা জালিয়াতি, ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের শাররীক নির্যাতন, এমন কি সাংবাদিকদের সাথেও মাস্তান সুলভ ব্যবহার করে সংগঠনটিকে কলংকিত করে ফেলেছেন।

তারা অবৈধ পথে কোটি কোটি টাকার সম্পদ উপার্জন করেছেন। আর সেসব কালোপথে উপার্জিত টাকায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নামে-বেনামে বাড়ি, গাড়ি, মার্কেটসহ জমি ক্রয় করেছেন। বৈধ আয়ের উৎসবিহীন এসব অর্থ সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এছাড়া ফাইল গায়েরসহ আরো গুরুতর কিছু দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় সভাপতি আবুল বাশার শরীফকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করেছে রাজউক প্রশাসন।

অন্যদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও নানা প্রকার অপকর্মের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন চলমান কার্যকরি কমিটির সভাপতি শরীফ আবুল বাশার শরিফ, সহ-সভাপতি, ইউসুফ মিয়া, সাধারন সম্পাদক- মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক,আব্দুল মোমিন প্রমুখ। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে।

সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলো: চলতি কমিটিতে সুস্পষ্ট বিধি বিধান থাকার পরও এক তৃতীয়াংশ মহিলা সদস্য রাখা হয়নি। ২০২১ সালে সভাপতি আবুল বাশার শরীফ ও সাধারন সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিন চৌধুরী তাদের ইচ্ছে খুশি মত কমিটি তৈরী করে সেটিই শ্রম অধিদপ্তরে জমা দেন। এবং মোটা অংকের টাকা খরচ করে কমিটি অনুমোদন করিয়ে নেন। যে কারণে এই কমিটির কারো কাছেই গ্রহনযোগ্যতা পায়নি।

রাজউকের সিংহভাগ শ্রমিক-কর্মচারির অভিমতে দেখা গেছে, বাশার শরীফ ও নাছির চৌধুরীর এই কমিটির ২৫% সমর্থনও নেই। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে তাদের শত প্রকার অন্যায় অবিচার ও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ রুখে দাঁড়াতে সাহস পান না। তবে এবার তারা কোন ভাবেই পকেট কমিটি করার সুযোগ দেবেন না। সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও শ্রম অধিদপ্তরের বিধি বিধান মেনেই তারা নেতৃত্ব নির্বাচিত করতে চান।

এ বিষয়ে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর ঢাকা এর পরিচালক মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, ‘শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিধি বিধান সঠিকভাবে পরিপালন করেই কমিটি অনুমোদন বা সত্যায়ন করা হবে।’