ক্যান্সার হাসপাতালে হয়রানি বন্ধ ও সুচিকিৎসার দাবিতে মানববন্ধন
- আপডেট : ০৭:২১:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ মে ২০২৩
- / 241
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রোগী হয়রানি ও চিকিৎসাসেবা বঞ্চিতের প্রতিবাদ’ সহ ৫ দফা দাবিতে ‘নিরাপদ হাসপাতাল চাই’ (নিহাচ) আজকের মানবন্ধন আয়োজন করেছে। সারাদেশে সুচিকিৎসা, রোগী, ডাক্তারদের নিরাপত্তাসহ, টেস্ট-মেডিসিনের মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে, চিকিৎসাক্ষেত্রে দালাল নির্মূলের দাবি জানান তাদের ৫ দফা দাবির মাধ্যমে।
শনিবার ( ২৭ মে) বেলা ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। সমন্বয়ক, ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবন ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’-কে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় নিরাপদ হাসপাতাল চাই (নিহাচ) এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাই। একই সাথে বলতে চাই, দেশে এত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বিদেশে চিকিৎসার জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, এ দায় কার?
সরকারি হাসপাতাল গুলোতে সঠিক চিকিৎসা প্রদানে ব্যর্থ হওয়াতেই বিদেশে ঝুকছে মানুষ।
তিনি বলেন, পুঁজিবাদের কারণে স্বাস্থ্যখাতে গড়ে উঠেছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায়, কিন্তু দালাল, অসাধু ডাক্তার-নার্স দিয়ে আদৌ সেটা সম্ভব? প্রায় এক দশক ধরেই স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকে জাতীয় বাজেটের ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে। স্বাস্থ্য সেবা পেতে নিজেদের ৬৮ শতাংশ ব্যয় করতে হয়। এটা যদি কমানো না হয়, তবে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিতে গিয়ে মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ছে এবং পড়বে। আমরা আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে অন্তত ১০% বরাদ্দ চাই। সঠিক স্মার্ট স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হলেই হবে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ।
সদস্য সচিব, এফ এ শাহেদ বলেন, সব সেক্টরগুলো চাটার দলে ভরে গেছে, ভন্ডামি আর লুটপাটে ব্যস্ত তারা। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। সরকারি হাসপাতালে যেখানে একদফা রেডিওথেরাপির জন্য ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা লাগে, সেখানে বেসরকারিতে প্রতি দফা ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা প্রয়োজন হয়।
ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যাক্তির জন্য একবারে ২০ থেকে ৩০ দফা থেরাপি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে এক টার্ম থেরাপি সরকারি হাসপাতালে ৪ থেকে ১০ হাজার টাকায় শেষ হলেও, বেসরকারিতে একটার্মে খরচ হয় ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা।
এ অবস্থায়, প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। দেশে ১৭০টি ক্যন্সার হাসপাতাল দরকার থাকলেও আছে ৩৪টি, সে গুলোতে চিকিৎসার পরিবর্তে হয়রানি আর ভোগান্তিই বেশি।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাত ইতোমধ্যে রুপপুরের বালিশ-কান্ড কে হারিয়ে “চোর চ্যাম্পিয়ন ট্রফি“ তুলেছে নিজের ঘরে । ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে পর্দার দাম ছিল ৩৭ লাখ টাকা, চিকিৎসার মান কেমন ছিল তা জানা যায়নি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘যেদিকে তাকাই, সেদিকেই দেখি শুধু চাটার দল’।
স্বাস্থ্যখাতে সেবার নামে চলছে হরিলুট, আর প্রচার হচ্ছে হরিহরি। এই শিক্ষিত চোর গুলো চুরির পর টুনটুনি বাজিয়ে মিডিয়াতে জানান দেয়, স্বাস্থ্য খাত এখন সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া হয়ে গেছে। ছি ছি .. স্থাস্থ্যখাত, এ লজ্জা আজ বাংলার কোটি মানুষের।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, সারাদেশের উপজেলা, জেলা হাসপাতালগুলোর শোচনীয় অবস্থা।
নেই নুন্যতম পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবার নিশ্চয়তা। সংবিধানে জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলে অভিহিত করা হয়েছে। কিন্তু সত্য হলো এত বছর পরও সাধারণ জনগণের সঠিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারেনি দেশের সরকার। জনস্বাস্থ্যে উন্নতিসাধন রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য, তা নিশ্চিতে “নিরাপদ হাসপাতাল চাই” ৫ দফা দাবি নিয়ে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে। এই সেবা নিশ্চিত হবার আগ পর্যন্ত এ আন্দোলন চালিয়ে যাবার হুশিয়ারি দেন সংগঠনের নেতা কর্মীরা।
৫ দফা দাবি হলো:
১। দালাল মুক্ত ও রোগীবান্ধব হাসপাতাল গড়তে হবে।
২। জেলা সদরে আইসিইউ, সিসিইউসহ সকল পরীক্ষা নিশ্চিত ও আসন বাড়াতে হবে।
৩। রোগী ও চিকিৎসকদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪। হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৫। টেস্ট ফি এবং ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
সমন্বয়ক, ইঞ্জিনিয়ার ফকর উদ্দিন মানিকের সভাপত্ত্বিতে, এফ এ শাহেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
আরো উপস্থিত ছিলেন, সালেকুজ্জামান রাজিব, অসিম আল ইমরান, মোঃ আবু মুসা আশ’য়ারী মনির, শাহরিয়ার সোহাগ (যুগ্ম-সদস্য সচিব), এম আর এফ আবির, রেজয়ান সিমান্ত, মাহবুবুর রহমান, নোমান বিল্লাহ, নিরোধ কুমার বর্মন, সৈয়দ মোহাম্মদ আজম, খতিব আসলাম, শারমীন আক্তার মিস্ট, আবদুল্লাহ কাফি, তারেক মনোয়ার, মাহমুদুল হাসান, কে এম সবুজ, এঞ্জেল নুসরাত, বিথী কর্মকার, তুষার সাহা অর্নব প্রমূখ।