সৌন্দর্য্যরে আড়ালে লুকায়িত মৃত্যুফাঁদ, ঘটছে প্রাণহানি
- আপডেট : ০২:৪৮:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৪
- / 109
পর্যটনের জন্য ইতিমধ্যে দেশজোড়া খ্যাতি লাভ করেছে মিরসরাই। যতই দিন যাচ্ছে ততই পর্যটনপ্রেমীদের অনন্য ঠিকানা হয়ে উঠছে মিরসরাই। এই উপজেলার পাহাড়ে ছোট বড় ২১ টি ঝর্ণায় বর্ষায় ঢল নামে পর্যটকদের। মিরসরাইয়ের ঝর্ণাগুলো সম্পর্কে পর্যটকদের অভিজ্ঞতা না থাকায় এখানে ঘটছে প্রাণহানী। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা ঝর্ণাগুলো যেন এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। গত ৬ বছরে ১৪ জন পর্যটক নিহত ও আহত হয়েছে শতাধিক।
জানা যায়, নজরকাড়া পাহাড়ী প্রাকৃতিক ঝর্ণার কারণে মিরসরাইয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের পর প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঝর্ণা দেখার জন্য পর্যটকরা ছুটে আসছেন। বিশেষ করে ঈদের ছুটি, বর্ষা মৌসুম ও ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের ঢল নামে এসব ঝর্ণায়।
উপজেলার দশস্তর বিশিষ্ট খৈইয়াছরা, নাপিত্তাছড়া, মহামায়া, বাওয়াছড়া, রূপসী ঝর্ণা, বোয়ালিয়া ঝর্ণা, হরিণামারা, সোনাইছড়ি, ছাগলকান্দা, কুপিকাটাকুম, বাঘবিয়ানী, বাউশ্যা, অমরমানিক্য ঝর্ণা, ন হাইত্যে কুম, পালাকাটা খুম, উঠান ঢাল, আন্দারমানিক ঝর্ণা, কলাতলি ঝর্ণা, কেম্বাতলী ঝর্ণা, লতা বায়ানী, মেলখুম নজর কেড়েছে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের।
সর্বশেষ চলতি বছরের ২ জুলাই রূপসী ঝর্ণার কূপে ডুবে দুই পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। দুই পর্যটক হলেন চট্টগ্রাম শহরের ফিরোজশাহ এলাকার জামিলের ছেলে নুরুল আবছার (১৬) ও একই এলাকার জসীম উদ্দিনের ছেলে আরিফুল ইসলাম আরিফ (১৭)। আবছার স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও আরিফ ডেকোরেশান দোকানের কর্মচারী।
খবর পেয়ে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা লাশ দুইটি দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর রাত ৯ টার সময় উদ্ধার করে।
২০২২ সালের ২০ জুন নাপিত্তাছড়া ঝর্নায় ঘুরতে গিয়ে নিখোঁজ হন দুই ভাইসহ ৩ জন। এরপর ঝর্ণার সাথে সংযুক্ত ছড়া থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা।
তারা হলো চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরের বাসিন্দা সাহাব উদ্দিনের দুই পুত্র তৌফিক আহমেদ (১৮) ও তানভীর মাসুদ (২১) এবং একই এলাকার বাসিন্দা জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা জাকারিয়ার পুত্র ইশতিয়াক উর রহমান প্রান্ত (২০)। ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দশস্তর বিশিষ্ট খইয়াছড়া ঝর্ণার উপর থেকে নীচে পড়ে গুরুতর আহন হন ফয়েজ আহমেদ প্রকাশ খাজু (৩৯)। তিনি ফেনী পৌরসভার বড়াইপুর গ্রামে ইদ্রিসের ছেলে।
২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট রূপসী ঝর্ণার কূপে ডুবে নিহত হন মেহেদী হাসান প্রান্ত (২১)। মেহেদী নাটোর জেলার নাটোর উপজেলার জালালাবাদ গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে। তারা চট্টগ্রাম শহরের কর্ণেলহাট প্রশান্তি আবাসিক এলাকায় থাকতো। প্রান্ত চট্টগ্রাম শহরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট টেকনোলজিতে সিভিল ডিপার্টমেন্টের ষষ্ঠ সেমিষ্টারের ছাত্র ছিলেন।
২৬ জুলাই খৈয়াছড়া ঝর্ণা দেখতে এসে ঝর্ণার উপর থেকে পা পিছলে পড়ে আবু আল হোসাইন মেমোরী (২৯) নামে এক পর্যটক নিহত হয়। তার বাড়ি বগুড়া জেলার বগুড়া সদর থানায়। সে ঢাকার টিকাটুলি এলাকায় সেইফটি কনসালটেন্ট বিডি প্রতিষ্ঠানের আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতো। ২৮ জুন খৈয়াছড়া ঝর্ণায় আনোয়ার হোসেন নামে এক পর্যটক উপর থেকে পড়ে নিহত হয়। সে ফেনী সদরের আব্দুল মজিদের পুত্র।
২ এপ্রিল খৈয়াছড়া ঝর্ণার উপর থেকে পা পিছলে পড়ে আশরাফ হোসেন (৩০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। নিহত আশরাফ ফটিকছড়ি উপজেলার জাফতনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত নাজিম উদ্দিনের সন্তান। ১৭ জুলাই মহামায়া লেকের পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয় শাহাদাত হোসেন (২২) নামে এক যুবক। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরী দল শাহদাতকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। তার বাড়ি মিরসরাই উপজেলার ৯ নং মিরসরাই সদর ইউনিয়নে।
২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট নাপিত্তাছড়া ঝর্ণার কূপে ডুবে অনিমেষ দে (২৭) নামে এক পর্যটক নিহত হয়। সে ফটিকছড়ি উপজেলার নিরঞ্জন দে’র ছেলে। একই বছরের ২৪ আগস্ট রূপসী ঝর্ণায় উপর থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায় সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবক। তার বাড়ি সীতাকুন্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া এলাকায়।
ওই বছরের ১৫ জুলাই খৈয়াছরা ঝর্ণার সাতটি স্তরের ৫ম স্তরে উঠার পর স্থানীয় এক পর্যটক পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সময় তাকে ধরতে যায় ওয়াসিম আসগর। ওই পর্যটক সামান্য আঘাত পেলেও ওয়াসিম পাহাড়ের নিচে পড়ে যায়। এতে মারাত্বক আহত হয় সে। ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর নাপিত্তছরা ঝর্ণায় সাঁতার কাটার সময় চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ শিক্ষার্থী শাহাদাত হোসেন মামুন (২২) মৃত্যু হয়।
সে ফেনী জেলার শর্শদী এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে। বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিএমসি) সভাপতি সরওয়ার উদ্দিন বলেন, আমরা পর্যটকদের জন্য সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করেছি। খৈয়াছরা, নাপিত্তাছরা, বাওয়াছড়া, কমলদহছড়া, সোনাইছড়া ঝর্ণা এলাকায় নিরাপদে যাওয়ার জন্য ২০ জন ইকো গাইডকে নিয়োগ দিয়েছি। পর্যটকরা যদি ঝর্ণা এলাকায় যাওয়ার সময় ইকো গাইডদের সাথে নিয়ে যায় তাহলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বারৈয়ারঢালা রেঞ্জ কর্মকর্তা একেএম আলতাফ হোসেন বলেন, ঝর্নাগুলোয় ইজাদারদের মাধ্যমে গাইড সার্ভিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু পর্যটকরা গাইড ছাড়াই অচেনা জায়গায় ঘুরতে যান এবং পরিশেষে বিপদে পড়েন।
বারৈয়ারঢালা রেঞ্জের সব ক’টি ঝরনার ইজারা পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এএইচ এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারী নাজমুল হাসান পিন্টু বলেন, ঝর্না এলাকাগুলোয় সতর্কবার্তা হিসেবে ব্যানার ও সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে। কিন্তু পর্যটকরা কোনো নিয়ম মানেন না।
আমরা সবাইকে বিকেল ৫ টার মধ্যে ঝর্না এলাকা থেকে চলে আসতে বলি। কিন্তু অনেকে সন্ধ্যা করেও ফিরেন। ঝর্নার স্থানে নিরাপদে যাওয়ার জন্য ২০ জন ইকো গাইডকে নিয়োগ দিয়েছি। অনেক পর্যটক ঝর্নাগুলোতে টিকিট না কেটে বিকল্প পথেও প্রবেশ করেন। এছাড়া পর্যটকরা গাইড সঙ্গে না নেওয়া, গাইডের নির্দেশনা না মানায় ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনা এড়াতে আমি ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়োগের জোর দাবি জানাচ্ছি।
মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারি বলেন, ঝর্নাগুলোর নিচে যে কূপ রয়েছে, তা কলসি আকৃতির। মুখের অংশ অপেক্ষাকৃত ছোট, ভেতরে বড় ও গভীর। অগভীর মনে করে অনেক পর্যটক সাঁতার না জেনেই কূপে নেমে যান, এতে বিপদে পড়েন।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেন, প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি ঝর্নাগুলো দেখতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো পর্যটক ভিড় জমায় মিরসরাইয়ে। ঝর্নাগুলো দেখতে এসে প্রায়ই আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
ঝর্ণাগুলোকে পর্যটকবান্ধব করতে প্রাথমিকভাবে তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো ঝর্নাগুলোতে যেতে পর্যটকদের অবশ্যই গাইড সঙ্গে নিয়ে যাওয়া, ঝর্ণার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে স্থায়ী লোকবল নিয়োগ এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলোর প্রবেশমুখে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য ইজারাদারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া পর্যটন এলাকায় টুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন এবং ইজারা নীতিমালা পরিবর্তনের বিষয়েও জেলা সমন্বয় মিটিংয়ে আলোচনা করা হবে।
মেলখুম গিরিপথে পর্যটক নিষেধাজ্ঞা: সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে মেলখুম গিরিপথ। অনেক পর্যটক পথ হারিয়েছে এই গিরিপথে গিয়ে। পরে ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু এই গিরিপথ খুবই বিপদজনক হওয়ায় পর্যটক প্রবেশ না করতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয় বনবিভাগ।
গত ১৫ মে বন বিভাগ থেকে পর্যটক নিষেধাজ্ঞা সংবলিত সতর্কীকরণ ব্যানার পেস্টুনও টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়। এসময় বন বিভাগের কর্মকর্তারা পর্যটকদের গিরিপথে যাওয়ার জন্য নিষেধ করলেও কেউ কেউ বাধা মানলেও অনেক পর্যটক অন্য সড়ক ব্যবহার করে মেলখুম গিরিপথে পৌঁছাচ্ছে।
মিরসরাই বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ নওশাদ বলেন, ‘এটি বন বিভাগের রিজার্ভ জায়গা। যাহা জনসাধারণ প্রবেশ নিষেধ থাকলেও কেউ কেউ তা মানতেছে না। আমরা বিভিন্ন সময় ব্যানার পেষ্টুন সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি লেখা দিয়ে সর্তক করছি। বিট কর্মকর্তারা সবসময় পর্যটকদের মেলখুম গিরিপথে যাওয়ার জন্য নিষেধ করতেছে।’
পথ হারান পর্যটকরা: চলতি বছরে মিরসরাইয়ের দুইটি ঝর্নার গহিন জঙ্গলে গিয়ে তিনটি পর্যটক দলের ১৫ জন পর্যটক পথ হারিয়ে ফেলেন। পরে তাদেরকে উদ্ধার করা গেলেও এসব ঘটনায় চিন্তিত বন বিভাগ, ইজারাদার, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন।
প্রতিদিন মিরসরাইয়ের ঝর্নাগুলো দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমণপ্রিয় পর্যটকরা। তারা এখানে এসে স্থানীয় কোনো গাইড সাথে রাখেন না। ফলে অনেক পর্যটকই পথ হারিয়ে ফেলেন। দুর্ঘটনায়ও পড়েন অনেকে। সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে আসা পাঁচ জন পর্যটক খৈয়াছড়া ঝর্নার ওপরে উঠেন।
সেখানে দীর্ঘক্ষণ থাকার পর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে তারা দিক ভুল করে হারিয়ে যান। ভুলক্রমে তারা চলে যান বনের গভীরে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে ৯৯৯ খবর পেয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে রাত সাড়ে ৯ টায় তাদের উদ্ধার করে মিরসরাই থানার পুলিশ।
এর আগে উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের মেলখুম গিরিপথে গত ১৪ মার্চ ও ২৪ এপ্রিল কয়েকজন পর্যটক পথ হারিয়ে ফেলেন। দুই দফায় হারিয়ে যাওয়া পর্যটকদের পরে উদ্ধার করে আনে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। এদিকে ২০১৭ সালের ১২ জুলাই বোয়ালিয়া ঝর্না দেখতে গিয়ে আটকা পড়ে ১৫ পর্যটক। চার ঘণ্টা চেষ্টার পর তাদের উদ্ধার করে মিরসরাই ফায়ার সার্ভিসের একটি দল।
যেসব কারণে দুর্ঘটনা: বর্ষা মৌসুমে এখানকার পাহাড়ি মাটি ও শ্যাওলাযুক্ত পাথরগুলো অনেক বেশি পিচ্ছিল হয়ে যায়। তবে বর্ষায় জলের স্তর অনেক বেড়ে যায় বলে ঝর্নাগুলো দেখতে ভারি সুন্দর দেখায়। মূল ঝর্নাস্থলে যাওয়ার রাস্তা অধিকাংশই গিরিপথ। তাই অনেক সময় দেখা যায় ঝর্নায় পৌঁছানোর সেই পুরো ঝিরিপথটাই হাঁটু সমান পানিতে ডুবে থাকে। লাঠি নিয়ে যেতে হয় ঝর্নায়। আবার ভারী বর্ষণে পানি বেড়ে কোমর পরিমাণ হয়ে যায়। পথগুলো হয়ে যায় পর্যটক চলাচলে কণ্টকাকীর্ণ। এ ছাড়া ঝর্নার দৃশ্য দেখতে চূড়ায় ওঠার সময় পা পিছলে কূপে পাথরের ওপর পড়ে অথবা কূপের পানিতে ডুবে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সাতার না জানাও পর্যটক হতাহতের অন্যতম কারণ।
দুর্ঘটনা এড়াতে করণীয়: বর্ষায় প্রাণ ফিরে পায় মিরসরাইয়ের ঝর্ণাগুলো, ঝর্ণা বয়ে যাওয়ার ছন্দে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে যায় পর্যটকরা। আর পর্যটক বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে দুর্ঘটনা, ঘটে প্রাণহানি। দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যটকরা কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করলে দুর্ঘটনা এড়াতে পারে।
গাইড নেওয়া: মিরসরাইয়ের ঝর্ণাগুলোর প্রবেশপথে টিকিট কাউন্টারে ইজারাদার ও বন বিভাগ অনুমোদিত গাইড পাওয়া যায়, খরচ হয় ৪-৫ শত টাকা। গাইডরাই পাহাড়ি পথে দুর্ঘটনা এড়িয়ে পথ চলতে সহায়তা কওে এবং নিরাপদে থাকতে পরামর্শ দেন।
ঝর্ণার গভীর কূপ: মিরসরাইয়ের ঝর্ণাগুলোতে এক বা একাধিক কূপ রয়েছে। এসব কূপ কলসি আকৃতির। ওপরে ছোট মুখ আর ভেতরটা বড় ও গভীর। এসব কূপে কোনোভাবেই না নামাই উত্তম।সাঁতার না জানলে: ঝর্ণার নিচের অগভীর কূপগুলো অনেকটাই নিরাপদ। ঝর্ণার জলে ভিজে আনন্দ করেন পর্যটকরা। তবে বিপদ এড়াতে সাঁতার না জানলে এসব অগভীর কূপেও নামবেন না।ঢাল বেয়ে ওপরে উঠবেন না: পাহাড়ি ঝর্ণার ঢালগুলো পিচ্ছিল হয়ে থাকে। রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকরা এসব ঢাল বেয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করেন। সামন্য ভুলে পা পিছলে পড়ে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হন। তাই জলপ্রপাতের খাড়া ঢাল বেয়ে ওপরে উঠবেন না।
ছবি তুলতে সতর্ক থাকুন: ঝর্ণার খাড়া ঢালে বা চূড়ায় দাঁড়িয়ে অনেকের মধ্যে ছবি তোলার প্রবণতা আছে। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে পা পিছলে পড়েন অনেকে। এতে দুর্ঘটনায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যায়। তাই ঢালে বা চূড়ায় দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে যাবেন না।
অতি বৃষ্টির সময়: মিরসরাইয়ের বিভিন্ন ঝর্ণায় যাওয়ার পথ উঁচু-নিচু। অতিবৃষ্টির সময় এসব পথ খুব পিচ্ছিল হয়ে যায়। আর ভারী বর্ষণের সময় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে তীব্র স্রোত তৈরি হয়। এ সময় জলপ্রপাত ভ্রমণ খুব বিপজ্জনক। তাই অতিবৃষ্টির সময়টায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকাই ভালো। নিরাপদ জায়গায় অবস্থান নিন: স্বাভাবিক আবহাওয়ায় ঝর্ণা এলাকায় যাওয়ার পর অনেক সময় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। আর এতে মুহুর্তেই ছড়া ও ঝিরিতে প্রচুর পানি প্রবাহের সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় পর্যটকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকে তীব্র স্রোতের মধ্যে এক পাশ থেকে অন্য পাশে পার হওয়ার চেষ্টা করেন। এতে স্রোতে ভেসে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এমন অবস্থায় আতঙ্কিত না হয়ে নিরাপদ উঁচু স্থানে অবস্থান নিন। পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে সাহায্য চাইতে পারেন।
জুতসই জুতা: পাহাড়ে ভ্রমণে গেলে পানি ও পাথুরে পথে হাঁটার উপযোগী জুতা পরুন। এতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা এড়িয়ে পথ চলতে পারবেন। দূরত্ব মেনে সৌন্দর্য উপভোগ করুন: ঝর্ণা দেখতে গিয়ে কূপে নেমে পড়া, ঢালে বা ছড়ায় হাঁটাহাঁটি ও সেলফি তোলা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তাই নিরাপদ দূরত্বে থেকেও ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
নির্দেশনা মানুন: ঝর্ণা এলাকায় পর্যটকদের করণীয়-সংক্রান্ত বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া আছে। বন বিভাগ ও ইজারাদারদের দেওয়া এসব নির্দেশনা মেনে চলুন।
দুর্ঘটনারোধে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ: মিরসরাইয়ের ঝর্ণাগুলোতে দুর্ঘটনারোধে চলতি বছরের ৫ জুলাই পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ, ইজারাদার ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ঝর্নাগুলোতে যেতে পর্যটকদের অবশ্যই গাইড সঙ্গে নিয়ে যাওয়া এবং একই সঙ্গে ঝর্ণার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে স্থায়ী লোকবল নিয়োগ এবং পর্যটনকেন্দ্রগুলোর প্রবেশমুখে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য ইজারাদারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ঝর্ণাগুলোতে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঠেকাতে এসব সিদ্ধান্ত নেয় মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন।