গুলিতেই আবু সাঈদের মৃত্যু: ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক
- আপডেট : ০৩:৪৩:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / 29
তবে তার ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম বলছেন, গুলির কারণে মাল্টিপল অর্গান হেমারেজে তার মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ গুলির কারণে শরীরের অনেকগুলো অঙ্গে রক্তক্ষরণ থেকে তার মৃত্যু হয়েছে।
এই চিকিৎসক আরও বলছেন, এখন তো ভিউয়ের যুগ, ভিউ পেতে অনেকে অপতথ্য ছড়াচ্ছেন।
যে কোনো অপমৃত্যুর ঘটনার পর পুলিশ লাশ পাঠায় সংশ্লিষ্ট এলাকার হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ মর্গে। যেখানে মর্গ সহকারী বা ডোমদের সহায়তায় লাশটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন একজন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এরপর নির্ধারিত ছকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
কোনো কোনো মৃত্যুর ক্ষেত্রে লাশের কিছু অভ্যন্তরীণ অঙ্গ (ভিসেরা) রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য গবেষণাগারে পাঠানো হয়। আবু সাঈদের ক্ষেত্রে ভিসেরা পাঠানো হয়নি। গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে ময়নাতদন্ত বলে সুস্পষ্ট মতামত দেন চিকিৎসক।
মৃত্যুর আড়াই মাস পর সম্প্রতি সামনে আসে তার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনটি। এ প্রতিবেদন ঘিরে আবারও আলোচনা শুরু হয়। প্রতিবেদনটি সামনে এনে অনেকেই বলতে চাইছিলেন, এখানে মাথায় আঘাতের কথা বলা আছে, যার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এই মাথায় আঘাত কে করেছে তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা।
তবে আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত পরিচালনাকারী রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
ওই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ঘিরে সম্প্রতি তৈরি হওয়া আলোচনা প্রসঙ্গে এই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এটা তো আসলে বাইরের যারা নন-মেডিকেল তারা তো ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে।
“যারা নন-মেডিকেল পারসন তারা আসলে বুঝে নাই। গুলির ফলে তার মাল্টিপল পিলেট ইনজুরি থেকে মাল্টিপল অর্গানে ইন্টারনাল হেমারেজ (রক্তক্ষরণ) হয়েছে। সেটার কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। অনেকে না বুঝে ভিউ বাড়াতে উল্টাপাল্টা তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিক না।”
চিকিৎসক বলেন, গুলির কারণে আবু সাঈদের যে মাল্টিপল পিলেট (ছররা) ইনজুরি হয়েছে সেটা আমরা উল্লেখ করেছি। মাথায় পিলেটের একটা আঘাত আছে। কোথাও কিন্তু হেড ইনজুরির কথা উল্লেখ করা হয়নি। হেড ইনজুরি হলে ব্রেইনে ইন্ট্রাকটেনিয়াল হেমারেজ হয় এবং বোন (হাঁড় বা খুলি) ফ্রাকচার থাকে। এটা হচ্ছে হেড ইনজুরির প্রধান কারণ যে, ইন্ট্রাকটেনিয়াল হেমারেজ হবে। যাদেরই হেড ইনজুরিতে মৃত্যু হয় তাদের সাধারণত বোনও ফ্রাকচার থাকে। আবু সাঈদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কিছু কিন্তু কোথাও রিপোর্টে উল্লেখ নেই। পিলেটগুলো তার (আবু সাঈদের) শরীরের বিভিন্ন অংশে ঢুকছে, মাল্টিপল অর্গানে তার ইন্টারনাল হেমারেজ করছে। যার কারণে শক এবং হেমারেজে সে মারা গেছে।
এখানে কোনো অস্পষ্টতা নেই জানিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, আবার আমাদের প্রতিবেদনে আরেকটা লাইন যোগ করা হয়েছে যে, ‘প্লিজ কনসিডার দ্যা সারকামস্টেনসিয়াল এভিডেন্স’। আপনাকে অবশ্যই পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে। মানে তাকে গুলি করা হয়েছে, এরপর উদ্ধার করে আনা হয়েছে এগুলো।
আবু সাঈদ রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কও ছিলেন তিনি। আবু সাঈদের এমন মৃত্যু আন্দোলনকে আরও বেগবান করে। আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৮ অগাস্ট আবু সাঈদকে হত্যার অভিযোগে রংপুর মহানগর আমলি আদালতে মামলা করেন তার বড় ভাই রমজান আলী। ওই মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- তৎকালীন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, রংপুরের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, উপপুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুজ্জামান, সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরান হোসেন, থানার ওসি রবিউল ইসলাম, পুলিশের এএসআই সৈয়দ আমীর আলী ও সুজন চন্দ্র রায়।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামিম মাহফুজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মণ্ডল, গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান রাসেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতিভূষণ, বেরোবি ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেনকেও আসামি করা হয়েছে।
এ মামলায় পুলিশ সদস্য এএসআই মো. আমীর আলী ও সুজন চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করে রংপুর মহানগর পুলিশ। পরে তাদের রংপুর জেলা পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।