বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
  • আপডেট : ০৬:২১:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
  • / 37

বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মেদ মুঈদ, সাভার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম নুরসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে আদালতের নির্দেশে ঢাকার সাভারের একটি কবরস্থান থেকে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ উত্তোলন করেছে পুলিশ। তার মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে এবং পরবর্তীতে সিলেটে দাফন করা হবে।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের কামালপুর এলাকার ‘জামিনে খাতামুন নবীঈনের জামিয়া খাতামুন’ কবরস্থান থেকে তার মরদেহ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হয়। হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিম চৌধুরীর করা এক রিটের শুনানি শেষে গত ৫ সেপ্টেম্বর তার মরদেহ কবর থেকে তুলে ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হারিছ চৌধুরী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন।

ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম নুরকে মরদেহ উত্তোলনের সময় উপস্থিত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। তিন বছর আগে যখন হারিছ চৌধুরীকে এই কবরস্থানে দাফন করা হয়, সেই সময় তাকে মাহমুদুর রহমান হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল পরিবার। কবরটি তাৎক্ষণিক কিনে নেয় তার স্বজনরা। তার জানাজায় অংশ নিয়েছিল স্থানীয় অনেকেই।

বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আহমেদ মুঈদ বলেন, যে মরদেহ উত্তোলন করা হচ্ছে, আমরা জানতে পেরেছি এটি হারিছ চৌধুরীর মরদেহ। তিনি যখন মারা যান, ওই সময় বিশ্বে দুর্যোগপূর্ণ করোনা চলছিল। তার পরিবার তাকে নিরাপদ ও ভালো জায়গায় কবরস্থ করতে এখানে নিয়ে আসে। তার মেয়ে একটা রিট করেন গত ২৪ সেপ্টেম্বর। ওই পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচটি সংস্থা এখানে আসি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রেজিস্টার্ড জেনারেলের কার্যালয়, জেলা পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাভার থানা পুলিশের প্রতিনিধি উপস্থিত রয়েছে। সবার উপস্থিতিতে কবর খনন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এরপর মরদেহ চিহ্নিত করতে যা যা সংগ্রহ করা দরকার, সেগুলো নেওয়া হবে। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যাবে যে এটিই হারিছ চৌধুরীর মরদেহ কি না। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। পরিবার তাকে রাষ্ট্রীয় যথাযথ সম্মান দেওয়ার দাবি করেছে। এ বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে। আর পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে দাফন করা হবে।

হারিছ চৌধুরীর জানাজা পড়ানো মাওলানা আশিকুর রহমান কাশেমি বলেন, ২০২১ সালের ওইদিন বাদ আছর আমি ওই নামাজে জানাজার ইমামতি করি। জানাজায় অনেকেই অংশ নেয়। তখন করোনার পরিবেশ ছিল। জানাজার নামাজেও অংশ নিতে মানুষ সাহস পেত না। তার শ্যালক যোগাযোগ করে মরদেহ নিয়ে আসেন। আমরা অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান হিসেবে তার মরদেহ দাফন করি। এখন পর্যন্ত আমরা তাকে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান হিসেবেই জানি।

বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সামাদ মোল্লা বলেন, এখানে অনেকেই কবরের জন্য জমি কেনে। এটা অন্যের নামে বরাদ্দ ছিল। মাহমুদুর রহমানের আত্মীয়রা বলেছিলেন, কবরের জায়গা লাগবে। তখন আরেকজনের বরাদ্দ করা কবরের জমি বিক্রি করা হয়। তখন এলাকার বা মাদরাসার কেউ জানতো না যে এটা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ। আমরা জানতাম তার নাম মাহমুদুর রহমান।

হারিছ চৌধুরীর শেষ ইচ্ছা ছিল, তাকে যেন নিজ এলাকা সিলেটে দাফন করা হয়। সে অনুযায়ী, মরদেহ উত্তোলন শেষে দেহাবশেষ সিলেটে দাফন করা হবে বলে জানিয়ে সামিরা তানজিম চৌধুরী বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) মানতে রাজি না যে এটা আমার বাবার মরদেহ। তাই দাদা বাড়ি নিয়ে তাকে দাফন করতে দেয়নি। তারা আমার বাবার মৃত্যুসনদও দেয়নি। মৃত্যুটা তো মীমাংসা করতে হবে। বাবার মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল থাকতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলছেন, হারিছ চৌধুরী মারা যাননি। পালিয়ে আছেন, গা ঢাকা দিয়ে আছেন- যা ইচ্ছে তাই বলা হচ্ছে। একটা ভালো মানুষকে ক্রিমিনাল সাজানো হয়েছে। সত্যি লুকিয়ে রাখা যায় না। এখন এটা একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। তার সম্মান তিনি ফিরে পাচ্ছেন। আব্বুর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার দাফন হবে। আদালত যেভাবে বলবে, সেভাবেই তৎপরতা নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ উত্তোলন

আপডেট : ০৬:২১:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মেদ মুঈদ, সাভার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম নুরসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে আদালতের নির্দেশে ঢাকার সাভারের একটি কবরস্থান থেকে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ উত্তোলন করেছে পুলিশ। তার মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে এবং পরবর্তীতে সিলেটে দাফন করা হবে।

বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের কামালপুর এলাকার ‘জামিনে খাতামুন নবীঈনের জামিয়া খাতামুন’ কবরস্থান থেকে তার মরদেহ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু হয়। হারিছ চৌধুরীর মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিম চৌধুরীর করা এক রিটের শুনানি শেষে গত ৫ সেপ্টেম্বর তার মরদেহ কবর থেকে তুলে ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। হারিছ চৌধুরী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন।

ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম নুরকে মরদেহ উত্তোলনের সময় উপস্থিত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। তিন বছর আগে যখন হারিছ চৌধুরীকে এই কবরস্থানে দাফন করা হয়, সেই সময় তাকে মাহমুদুর রহমান হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল পরিবার। কবরটি তাৎক্ষণিক কিনে নেয় তার স্বজনরা। তার জানাজায় অংশ নিয়েছিল স্থানীয় অনেকেই।

বিষয়ে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আহমেদ মুঈদ বলেন, যে মরদেহ উত্তোলন করা হচ্ছে, আমরা জানতে পেরেছি এটি হারিছ চৌধুরীর মরদেহ। তিনি যখন মারা যান, ওই সময় বিশ্বে দুর্যোগপূর্ণ করোনা চলছিল। তার পরিবার তাকে নিরাপদ ও ভালো জায়গায় কবরস্থ করতে এখানে নিয়ে আসে। তার মেয়ে একটা রিট করেন গত ২৪ সেপ্টেম্বর। ওই পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচটি সংস্থা এখানে আসি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রেজিস্টার্ড জেনারেলের কার্যালয়, জেলা পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাভার থানা পুলিশের প্রতিনিধি উপস্থিত রয়েছে। সবার উপস্থিতিতে কবর খনন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এরপর মরদেহ চিহ্নিত করতে যা যা সংগ্রহ করা দরকার, সেগুলো নেওয়া হবে। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যাবে যে এটিই হারিছ চৌধুরীর মরদেহ কি না। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। পরিবার তাকে রাষ্ট্রীয় যথাযথ সম্মান দেওয়ার দাবি করেছে। এ বিষয়ে সরকার ব্যবস্থা নেবে। আর পরিবারের ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে দাফন করা হবে।

হারিছ চৌধুরীর জানাজা পড়ানো মাওলানা আশিকুর রহমান কাশেমি বলেন, ২০২১ সালের ওইদিন বাদ আছর আমি ওই নামাজে জানাজার ইমামতি করি। জানাজায় অনেকেই অংশ নেয়। তখন করোনার পরিবেশ ছিল। জানাজার নামাজেও অংশ নিতে মানুষ সাহস পেত না। তার শ্যালক যোগাযোগ করে মরদেহ নিয়ে আসেন। আমরা অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান হিসেবে তার মরদেহ দাফন করি। এখন পর্যন্ত আমরা তাকে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান হিসেবেই জানি।

বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য সামাদ মোল্লা বলেন, এখানে অনেকেই কবরের জন্য জমি কেনে। এটা অন্যের নামে বরাদ্দ ছিল। মাহমুদুর রহমানের আত্মীয়রা বলেছিলেন, কবরের জায়গা লাগবে। তখন আরেকজনের বরাদ্দ করা কবরের জমি বিক্রি করা হয়। তখন এলাকার বা মাদরাসার কেউ জানতো না যে এটা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ। আমরা জানতাম তার নাম মাহমুদুর রহমান।

হারিছ চৌধুরীর শেষ ইচ্ছা ছিল, তাকে যেন নিজ এলাকা সিলেটে দাফন করা হয়। সে অনুযায়ী, মরদেহ উত্তোলন শেষে দেহাবশেষ সিলেটে দাফন করা হবে বলে জানিয়ে সামিরা তানজিম চৌধুরী বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) মানতে রাজি না যে এটা আমার বাবার মরদেহ। তাই দাদা বাড়ি নিয়ে তাকে দাফন করতে দেয়নি। তারা আমার বাবার মৃত্যুসনদও দেয়নি। মৃত্যুটা তো মীমাংসা করতে হবে। বাবার মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজাল থাকতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই বলছেন, হারিছ চৌধুরী মারা যাননি। পালিয়ে আছেন, গা ঢাকা দিয়ে আছেন- যা ইচ্ছে তাই বলা হচ্ছে। একটা ভালো মানুষকে ক্রিমিনাল সাজানো হয়েছে। সত্যি লুকিয়ে রাখা যায় না। এখন এটা একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। তার সম্মান তিনি ফিরে পাচ্ছেন। আব্বুর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার দাফন হবে। আদালত যেভাবে বলবে, সেভাবেই তৎপরতা নেওয়া হবে।