শনিবার, ১৮ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুলিশ-জুলাই যোদ্ধা সংঘর্ষে আহত ২০

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
অক্টোবর ১৭, ২০২৫ ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

​জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে শুক্রবার দুপুরে সংসদ ভবন সংলগ্ন মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকায় ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের সকলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে সংসদ ভবনের একটি গেট ভাঙচুর, পুলিশের গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর এবং সড়কে অস্থায়ী স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

​​সংঘর্ষে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২০ জন হলেন—আতিকুল গাজী (২০), সাইফুল ইসলাম (২৬), লাইলী আক্তার (২৫), কামরুল হাসান (২৯), শরিফুল ইসলাম (২৯), সিনথিয়া (২১), আশরাফুল (২০), হাবিবউল্লাহ (৩০), শফিউল্লাহ (৩২), শাকিব (২৫), মো. লিটন (৩২), তানভীর (২২), দুলাল (৩০), কামাল (৩২), ওমর ফারুক (২৭), নুরুল হুদা (২৫), আখের উদ্দিন (২৮), মিজান (২৮), মোস্তাক বিপ্লব (২৭) এবং আল আমিন (৩৪)।

​আহতরা অভিযোগ করেন সনদের প্রতিবাদ জানাতে তারা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ তাদের ওপর বিনা প্ররোচনায় লাঠিচার্জ করে। তবে পুলিশ বলছে, জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী উপেক্ষা করে সংসদ ভবন এলাকার দেয়াল টপকে বেলা ১১ টার দিকে তারা ভেতরে ঢুকে পড়েন। দুই ঘন্টা ধরে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বল প্রয়োগ করতে হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১০ টার পর থেকে​ইষ ‘জুলাই যোদ্ধারা’ তিন দফা দাবিতে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এক পর্যায়ে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের মূল দাবিগুলো ছিল— জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতাকে ‘জুলাই আহত বীর’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সুরক্ষা আইনের মাধ্যমে দায়মুক্তি নিশ্চিত করা এবং জুলাই সনদে তাদের স্বীকৃতি নিশ্চিত করা।

​বেলা সোয়া ১টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভরত ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ অনুষ্ঠানস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে লাঠিচার্জ ও ধাওয়া দিলে আন্দোলনকারীরাও পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।

সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সংসদ ভবনের ১২ নম্বর গেট ভেঙে বাইরে মানিক মিয়া এভিনিউতে বেরিয়ে আসেন। এসময় তারা সড়কে থাকা পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এছাড়া, সড়কে ব্যবহৃত পুলিশের ব্যারিকেড ও সেচ ভবনের সামনে তৈরি করা অস্থায়ী অভ্যর্থনা কক্ষ, কন্ট্রোল রুম এবং আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে ওই এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

​পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পুলিশের ধাওয়া ও লাঠিচার্জের মুখে আন্দোলনকারীরা আসাদ গেট ও খামারবাড়ির দিকে সরে যেতে বাধ্য হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে মানিক মিয়া এভিনিউ এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে সংসদ ভবনের আশেপাশে অতিরিক্ত পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনী, এপিবিএন, সোয়াট, বিজিবি ও আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে।