সাধারণত কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিরা জানেন সময় কত বেশি মূল্যবান। একটি প্রবাদ আছে ‘সময় হলো সোনার মতো দামি’। অনেকেই এ কথা বিশ্বাস করেন। আর ইসলামে সময় স্বর্ণ কিংবা বিশ্বের যেকোনো মূল্যবান বস্তুর চেয়ে বেশি দামি। সময়ের মূল্য কী, ইসলাম শুধু তা-ই শেখায় না। বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে ইসলাম মানবজাতিকে বিশেষভাবে শেখায়, সময়ের মূল্য দিতে হবে কীভাবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালা ও তার রাসুল মুহাম্মদ (সা.) খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন, সময়ের মূল্য, আমরা অবশ্যই সময় নষ্ট করব না এবং কীভাবে আমরা সময়ের সদ্ব্যবহার করতে পারি এসব সম্পর্কে। আল্লাহ ও রাসুল (সা.) বলেছেন,আমরা ঈমান বৃদ্ধি করে সাফল্য অর্জনের জন্য প্রজ্ঞাপূর্ণ উপায়ে সময়কে কাজে লাগাতে পারি। আর এই সাফল্য হলো বিশেষ করে পরকালের চিরন্তন সফলতা।
সত্যিই, যখন আমরা সময় নষ্ট করি, তখন আমরা মহান আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করি। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, সময়কে অবশ্যই ব্যয় করতে হবে আমাদের জীবনের মূল লক্ষ্য পূরণের জন্য। তার অর্থ হচ্ছে, পুরো জীবনভর আল্লাহর ইবাদত করা। আল্লাহতায়ালা আল-কোরআনে এটাকে খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন, আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করিনি (শুধু) আমার ইবাদত ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে। আমি তাদের কাছ থেকে কোনো জীবিকা চাই না কিংবা বলি না যে, তারা আমাকে খাওয়ানো উচিত। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালাই তো জীবিকাদাতা, শক্তির আধার ও পরাক্রান্ত। (আল-কোরআন, সুরা আজ জারিয়াত, আয়াত ৫৬-৫৮)
তিনি আরো বলছেন, অতএব আপনি আপনার পালনকর্তার প্রশংসাগুলো মহিমান্বিত করুন এবং সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। আর প্রতিপালকের ইবাদত করুন, যে পর্যন্ত না আপনার কাছে নিশ্চিত কথা আসে। (আল-কোরআন, সুরা হিজর, আয়াত ৯৮-৯৯)
আমরা যা কিছুই কোরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক করি না কেন, তা-ই ইবাদত। আর ইবাদত অবশ্যই করতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে; শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই। আমরা আমাদের সময় ব্যবহার করা উচিত কল্যাণকর কাজে। বিশেষত ওইসব কাজই আমাদের করা উচিত, যেগুলো আমাদের আল্লাহতালার আরো ঘনিষ্ঠ করবে এবং অর্জন করবে তার করুণা ও ক্ষমা।
পরম মর্যাদাবান আল্লাহ এটাকে খুবই স্পষ্ট করে এভাবে বলেছেন, ‘হে বিশ্ববাসীরা! আল্লাহকে মেনে চলো আর মান্য করো বাণীবাহককে (মুহাম্মদ) এবং তোমাদের কাজকর্ম বৃথা যেতে দিয়ো না।’ (আল-কোরআন, সুরা মুহাম্মদ, আয়াত : ৩৩)
ওপরে উল্লিখিত ঐশী নির্দেশের স্বাভাবিক অনুসিদ্ধান্ত হচ্ছেÑআমাদের নিজেদের অবশ্যই প্রশ্ন করা উচিত : আমরা কি আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-কে মেনে চলছি? সঠিক ঈমানের সন্ধান লাভ, সৎ কাজ করা, সত্যের নির্দেশদান কিংবা দ্বীনের দাওয়াতের জন্য এবং ধৈর্যশীল ও অবিচল হওয়ার প্রয়োজনে আল-কোরআন এবং সুন্নাহ সম্পর্কে জানতে আমরা সময় দিয়েছি কতটুকু? সময় পার হতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কি নিশ্চিত যে, মহান আল্লাহর ইবাদত ও সন্তোষের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে সময়কে নিয়োজিত করছি? আমরা কি কোরআন শরিফের এই আয়াতগুলো থেকে পথনির্দেশনা গ্রহণ করছি, যেগুলো আমাদের জন্য জ্ঞানের উৎস?
‘কালের কসম, নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতির মধ্যে, তারা ছাড়াÑযারা ঈমানদার, সৎ কর্মশীল, পরস্পরকে সত্যনিষ্ঠার নির্দেশ প্রদানকারী এবং ধৈর্য ধারণকারী ও অবিচল। (আল-কোরআন, সুরা আসর, আয়াত ১-৩)
কোরআনের ওপরে বর্ণিত নির্দেশ মোতাবেক, সময়ের মূল্যকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের নিজেদের সুশৃঙ্খল করে তুলতে হবে। সৎকাজে আমাদের অবশ্যই দ্রুত গতি থাকতে হবে। এতে আমাদের ঈমান বাড়বে। ফলে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি ও ক্ষমা অর্জনের যোগ্যতা আমরা পারব হাসিল করতে। আমাদের মনে রাখা উচিত, শেষ বিচারের দিনে আমাদের জিজ্ঞেস করা হবেÑআমরা আমাদের জীবন, সম্পদ ও জ্ঞান কীভাবে ব্যয় করেছি, সে ব্যাপারে। অন্য কথায়, আল্লাহ যা আমাদের দিয়েছেন, তার প্রতিটি জিনিস আমরা কীভাবে খরচ করলাম, সে সম্পর্কে আমাদের প্রশ্ন করা হবে। নিম্নের হাদিস থেকে তা জানা যায়।
আবু কারজাহ নাদলাহ ইবনে উবাইদ আল আসলামি বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শেষ বিচারের দিনে আল্লাহর বান্দাকে দাঁড়িয়েই থাকতে হবে, যে পর্যন্ত না তাকে প্রশ্ন করা হয় : তার বয়স সম্পর্কে আর কীভাবে তা ব্যয় করেছে এবং তার জ্ঞান সম্পর্কে, সে তা ব্যবহার করেছে কীভাবে; তার সম্পদ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে, কোত্থেকে এটা অর্জন করল এবং কোন কোন কাজে তা ব্যয় হয়েছে; আর তার দেহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে, কীভাবে এটা ব্যবহার করা হয়েছে।’
যদি আমরা নিজেদের বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন করি, তাহলে বলতে হয়, আমরা কি সর্বশক্তির অধিকারী আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার জন্য আমাদের সময়কে বুদ্ধিমত্তাসহকারে ব্যয় করে আসছি? আমরা কি কোরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে আমাদের জীবনটা ব্যয় করছি? আমরা কি বাস্তব জীবনে ইসলামের অনুসারী? আমাদের কজনই বা মুমিন বা ঈমানদার কিংবা মুত্তাকি, অর্থাৎ আল্লাহর ভয় পোষণকারী? আল-কোরআন ও সুন্নাহর কতটুকু আমরা জানি? যা আমরা জানি, তা কী কাজে পরিণত করি এবং সে জ্ঞান অন্যদেরও দিই; অন্তত আমাদের পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কি সেই জ্ঞান বিতরণ করি? যা সত্য ও ন্যায়, অন্যদের আমরা কি কখনো তার নির্দেশ দিয়েছি এবং অসৎ কাজ করতে তাদের কি নিষেধ করেছি?
সফল হতে হলে, আমাদের সময়কে আমরা যেন প্রজ্ঞার সঙ্গে কাজে লাগাই। সর্বশক্তিমান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে, এমন সৎকাজের পরিকল্পনার মাধ্যমে তা করতে হবে। আমাদের অবশ্যই ইসলাম সম্পর্কে জেনে সময় ব্যয় করতে হবে। সে জ্ঞান হবে কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক।
ভাষান্তর : মীযানুল করীম
