সীমান্তে হত্যা দেশের জন্য দুঃখের, ভারতের জন্য লজ্জার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১১:২০:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমাবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / 158

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি: বিবিসি

ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, সীমান্তে হত্যা ‘বাংলাদেশের জন্য দুঃখের, ভারতের জন্য লজ্জার’।

লন্ডনে বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সোমবার সাক্ষাৎকারটি বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক, কোভিডের কারণে বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে ভ্রমণে অসুবিধা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, আফগানিস্তানের তালেবান ইস্যুসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।

তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রশ্নে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, তালেবানের নীতি এবং আচরণের ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশ তাদের স্বীকৃতি দেবে কিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাস করে, জনগণের সরকার হওয়া উচিৎ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যে সরকারই আসে, আমরা তাদের সমর্থন দেই।’

তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে যদি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে, তাহলে আমরা তাদের সমর্থন দেবো। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা ঠিক জানি না এবং বুঝতেও পারছি না। তাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘তাদের কর্ম ও নীতি দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।’ বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী নেই বলেও সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ সময় বিবিসির উপস্থাপক বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে ছায়া যুদ্ধ চলছে, আপনি জানেন যে, তার একটি বড় ক্ষেত্র আফগানিস্তান। বলা হচ্ছে, সেই যুদ্ধে আপাতত পাকিস্তান জিতেছে।’ উপস্থাপক বলেন, ‘এখন সামনের আফগান সরকার সম্পর্কে বাংলাদেশ কি দৃষ্টিভঙ্গি নেবে, কি পদক্ষেপ নেবে – সে ক্ষেত্রে কি ভারতের সঙ্গে এখন বাংলাদেশের যে ধরনের সম্পর্ক, সেই স্পর্শকাতরতাকে কি বিবেচনায় নেবে?’

জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সব সময় তার পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে দেশের নিজের স্বার্থে এবং খুব স্বাধীনভাবে। বাংলাদেশ কোনো লোকের বা দেশের লেজুড় নয়। আমরা দেশের ও বিশ্বের মঙ্গলের কথা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিই। সূতরাং পাকিস্তান কী করলো বা ভারত কী করলো, সেটা আমাদের কাছে এতো মুখ্য নয়।’

সীমান্তে হত্যার কথা উল্লেখ করে বিবিসি বাংলার উপস্থাপক জানান, গত বছরও সীমান্তে ৫১ জন মারা গেছে। এটা আগের কয়েক বছরের চেয়ে বেশি। এটা কেনো বন্ধ করা যাচ্ছে না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি সত্য যে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশিরা মারা যায়। আমরা এটা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।’

ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ে, এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছেও বিষয়টি আমাদের প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন। দুই দেশে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, একটি লোকও মারা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য দুঃখের বিষয়, আর ওদের জন্য লজ্জার বিষয়। কারণ, এতো বড় দেশ (ভারত), তারা আমাদের অঙ্গীকার করেছে যে, কোনো প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না; একটা লোকও মারা যাবে না। তারপরও হয়।’

সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে করোনার টিকা প্রয়োগ ও ব্রিটেনে ভ্রমণ নিয়ে কথা বলেন। কম টিকা নেয়া দেশের তালিকায় রেখে ব্রিটেন বর্তমানে বাংলাদেশকে ভ্রমণের ক্ষেত্রে লাল তালিকায় রেখেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশে ১৮ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় এসেছেন। এর চেয়ে কম টিকা নেয়া দেশ অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে ব্রিটেন বেশ নমনীয়। ব্রিটেন বাংলাদেশকে একটিও টিকা দেয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিটেনের বিরুদ্ধে তাদের নাগরিকদের অবহেলা করার অভিযোগও তুলেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ব্যর্থতা স্বীকার করে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এটা সত্যি যে গত চার বছরে একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যায়নি।’ এর জন্য তিনি মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক কোনো চাপ না থাকাকেই প্রধানত দায়ী করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

সীমান্তে হত্যা দেশের জন্য দুঃখের, ভারতের জন্য লজ্জার

আপডেট : ১১:২০:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমাবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, সীমান্তে হত্যা ‘বাংলাদেশের জন্য দুঃখের, ভারতের জন্য লজ্জার’।

লন্ডনে বিবিসি বাংলার সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সোমবার সাক্ষাৎকারটি বিবিসি বাংলার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক, কোভিডের কারণে বাংলাদেশ থেকে ব্রিটেনে ভ্রমণে অসুবিধা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, আফগানিস্তানের তালেবান ইস্যুসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।

তালেবানকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রশ্নে এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, তালেবানের নীতি এবং আচরণের ওপর নির্ভর করবে বাংলাদেশ তাদের স্বীকৃতি দেবে কিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার বিশ্বাস করে, জনগণের সরকার হওয়া উচিৎ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যে সরকারই আসে, আমরা তাদের সমর্থন দেই।’

তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে যদি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে, তাহলে আমরা তাদের সমর্থন দেবো। কিন্তু এই মুহূর্তে আমরা ঠিক জানি না এবং বুঝতেও পারছি না। তাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’ তিনি বলেন, ‘তাদের কর্ম ও নীতি দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।’ বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী নেই বলেও সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ সময় বিবিসির উপস্থাপক বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে ছায়া যুদ্ধ চলছে, আপনি জানেন যে, তার একটি বড় ক্ষেত্র আফগানিস্তান। বলা হচ্ছে, সেই যুদ্ধে আপাতত পাকিস্তান জিতেছে।’ উপস্থাপক বলেন, ‘এখন সামনের আফগান সরকার সম্পর্কে বাংলাদেশ কি দৃষ্টিভঙ্গি নেবে, কি পদক্ষেপ নেবে – সে ক্ষেত্রে কি ভারতের সঙ্গে এখন বাংলাদেশের যে ধরনের সম্পর্ক, সেই স্পর্শকাতরতাকে কি বিবেচনায় নেবে?’

জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সব সময় তার পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করে দেশের নিজের স্বার্থে এবং খুব স্বাধীনভাবে। বাংলাদেশ কোনো লোকের বা দেশের লেজুড় নয়। আমরা দেশের ও বিশ্বের মঙ্গলের কথা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিই। সূতরাং পাকিস্তান কী করলো বা ভারত কী করলো, সেটা আমাদের কাছে এতো মুখ্য নয়।’

সীমান্তে হত্যার কথা উল্লেখ করে বিবিসি বাংলার উপস্থাপক জানান, গত বছরও সীমান্তে ৫১ জন মারা গেছে। এটা আগের কয়েক বছরের চেয়ে বেশি। এটা কেনো বন্ধ করা যাচ্ছে না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটি সত্য যে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশিরা মারা যায়। আমরা এটা নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন।’

ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমরা ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ে, এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছেও বিষয়টি আমাদের প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেন। দুই দেশে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, একটি লোকও মারা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য দুঃখের বিষয়, আর ওদের জন্য লজ্জার বিষয়। কারণ, এতো বড় দেশ (ভারত), তারা আমাদের অঙ্গীকার করেছে যে, কোনো প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না; একটা লোকও মারা যাবে না। তারপরও হয়।’

সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশে করোনার টিকা প্রয়োগ ও ব্রিটেনে ভ্রমণ নিয়ে কথা বলেন। কম টিকা নেয়া দেশের তালিকায় রেখে ব্রিটেন বর্তমানে বাংলাদেশকে ভ্রমণের ক্ষেত্রে লাল তালিকায় রেখেছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর সমালোচনা করে বলেন, বাংলাদেশে ১৮ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় এসেছেন। এর চেয়ে কম টিকা নেয়া দেশ অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে ব্রিটেন বেশ নমনীয়। ব্রিটেন বাংলাদেশকে একটিও টিকা দেয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিটেনের বিরুদ্ধে তাদের নাগরিকদের অবহেলা করার অভিযোগও তুলেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ব্যর্থতা স্বীকার করে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘এটা সত্যি যে গত চার বছরে একজন রোহিঙ্গাও ফিরে যায়নি।’ এর জন্য তিনি মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক কোনো চাপ না থাকাকেই প্রধানত দায়ী করেন।