আবার শুরু হচ্ছে ৯/১১ হামলার ‘মূল পরিকল্পনাকারীর’ বিচার

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১১:৫৫:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / 144

ছবি- সংগৃহীত

২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর টুইন-টাওয়ার হামলার সাথে জড়িত কারো নাম এলে প্রথমেই আসে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের নাম। কিন্তু এই হামলার ব্যাপারে তদন্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের যে কমিশন সেই ‘৯/১১ কমিশনের’ মতে, খালিদ শেখ মোহাম্মদ, যিনি সংক্ষেপে কেএসএম নামে পরিচিত, তিনিই ছিলেন হামলার ‘মূল পরিকল্পনাকারী।’

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে তিনিই সেই ব্যক্তি – যিনি বিমান দিয়ে এভাবে হামলার ধারণা দিয়েছিলেন এবং সেটা আল-কায়দার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন।

‘মূল পরিকল্পনাকারী’ খালিদ শেখ মোহাম্মদসহ পাঁচজনের বিচার আবার শুরু হচ্ছে। স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার এই বিচার আবার শুরু হওয়ার কথা। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

১১ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ এ সন্ত্রাসী হামলার ২০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। তার আগে এ হামলার বিচার আবার শুরু হতে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটি কিউবার গুয়ানতানামো বের কারাগারে রয়েছেন খালিদসহ অন্য আসামিরা। প্রায় ১৫ বছর ধরে সেখানে আছেন তারা। সামরিক ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার শুরু হয়েছিল। সবশেষ ২০১৯ সালের শুরুর দিকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এই বিচার প্রায় ১৭ মাস ধরে স্থগিত থাকে। এখন এই বিচার আবার শুরু হচ্ছে।

গত রোববার ট্রাইব্যুনালের নতুন বিচারক বিমানবাহিনীর কর্নেল ম্যাথিউ ম্যাককল এ মামলার বিচারকাজ ধীরে শুরু করার ইঙ্গিত দেন। শুরুর দিনের শুনানিতে বিচারকের যোগ্যতার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। শুনানিতে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা অংশ নেবেন। তারা বিচারককে প্রশ্ন করারও সুযোগ পাবেন। পরে ১৭ মাস আগে বিচারকাজ যেখানে স্থগিত হয়েছিল, সেখান থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

খালিদ শেখ মোহাম্মদের আইনজীবী মনে করেন এখন যেসব শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেগুলো আসলে করা হয়েছে হামলার ২০তম বার্ষিকীতে কিছু একটা যে হচ্ছে সেটা মিডিয়াকে দেখানোর জন্য। ডেভিড নেভিন বিবিসিকে বলেন – তিনি আশা করছেন, ‘২০ বছরের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ব্যাপারে কাজ হবে।’

এই আইনজীবী ২০০৮ সালে মামলাটি শুরু হওয়ার পর থেকেই এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আসল পরিকল্পনা ছিল সাথে সাথেই বিচারকার্য শুরু করা। কিন্তু তিনি বলেন যে তারা এখনও সেটা শুরুই করতে পারেন নি। তিনি বলেন, নতুন একজন বিচারকও নিয়োগ করা হয়েছে, ‘এই বিচারে যিনি সম্ভবত হবেন অষ্টম কী নবম বিচারক।’

বিচারককে প্রথমে আগের শুনানিগুলোর ৩৫,০০০ পাতার বিবরণ পড়ে দেখতে হবে। এর সঙ্গে রয়েছে হাজার হাজার নির্দেশনা। নেভিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটাই ফৌজদারি অপরাধের সবচেয়ে বড় বিচার।’ এবং সবচেয়ে বিতর্কিত।

‘নাইন-ইলেভেন’ (৯/১১) নামে পরিচিত এ হামলায় তিন হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। এ হামলার জেরে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে নামে যুক্তরাষ্ট্র। আল-কায়েদার জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ২০০১ সালে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায়। হামলায় ক্ষমতাচ্যুত হয় তালেবান। পরে মার্কিন বিশেষ বাহিনী পাকিস্তানের গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে। অন্যদিকে, প্রায় ২০ বছর ধরে আফগানে যুদ্ধ চালায় যুক্তরাষ্ট্র। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসের দীর্ঘতম এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানে। অবশ্য তার আগেই গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতা ফের তালেবানের হাতে যায়।

সন্ত্রাসের মূল উৎপাটনের লক্ষ্যে আফগানিস্তান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্র। সন্ত্রাসবিরোধী এসব অভিযানে খালিদ ছাড়াও আম্মার আল-বালুচি, ওয়ালিদ বিন আত্তাশ, রামজি বিন আল-শিভ ও মুস্তাফা আল-হাওসাই গ্রেপ্তার হন। ২০০২ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

আবার শুরু হচ্ছে ৯/১১ হামলার ‘মূল পরিকল্পনাকারীর’ বিচার

আপডেট : ১১:৫৫:০৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর টুইন-টাওয়ার হামলার সাথে জড়িত কারো নাম এলে প্রথমেই আসে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের নাম। কিন্তু এই হামলার ব্যাপারে তদন্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের যে কমিশন সেই ‘৯/১১ কমিশনের’ মতে, খালিদ শেখ মোহাম্মদ, যিনি সংক্ষেপে কেএসএম নামে পরিচিত, তিনিই ছিলেন হামলার ‘মূল পরিকল্পনাকারী।’

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে তিনিই সেই ব্যক্তি – যিনি বিমান দিয়ে এভাবে হামলার ধারণা দিয়েছিলেন এবং সেটা আল-কায়দার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন।

‘মূল পরিকল্পনাকারী’ খালিদ শেখ মোহাম্মদসহ পাঁচজনের বিচার আবার শুরু হচ্ছে। স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার এই বিচার আবার শুরু হওয়ার কথা। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

১১ সেপ্টেম্বর ভয়াবহ এ সন্ত্রাসী হামলার ২০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। তার আগে এ হামলার বিচার আবার শুরু হতে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটি কিউবার গুয়ানতানামো বের কারাগারে রয়েছেন খালিদসহ অন্য আসামিরা। প্রায় ১৫ বছর ধরে সেখানে আছেন তারা। সামরিক ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার শুরু হয়েছিল। সবশেষ ২০১৯ সালের শুরুর দিকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এই বিচার প্রায় ১৭ মাস ধরে স্থগিত থাকে। এখন এই বিচার আবার শুরু হচ্ছে।

গত রোববার ট্রাইব্যুনালের নতুন বিচারক বিমানবাহিনীর কর্নেল ম্যাথিউ ম্যাককল এ মামলার বিচারকাজ ধীরে শুরু করার ইঙ্গিত দেন। শুরুর দিনের শুনানিতে বিচারকের যোগ্যতার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। শুনানিতে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা অংশ নেবেন। তারা বিচারককে প্রশ্ন করারও সুযোগ পাবেন। পরে ১৭ মাস আগে বিচারকাজ যেখানে স্থগিত হয়েছিল, সেখান থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

খালিদ শেখ মোহাম্মদের আইনজীবী মনে করেন এখন যেসব শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেগুলো আসলে করা হয়েছে হামলার ২০তম বার্ষিকীতে কিছু একটা যে হচ্ছে সেটা মিডিয়াকে দেখানোর জন্য। ডেভিড নেভিন বিবিসিকে বলেন – তিনি আশা করছেন, ‘২০ বছরের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ব্যাপারে কাজ হবে।’

এই আইনজীবী ২০০৮ সালে মামলাটি শুরু হওয়ার পর থেকেই এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আসল পরিকল্পনা ছিল সাথে সাথেই বিচারকার্য শুরু করা। কিন্তু তিনি বলেন যে তারা এখনও সেটা শুরুই করতে পারেন নি। তিনি বলেন, নতুন একজন বিচারকও নিয়োগ করা হয়েছে, ‘এই বিচারে যিনি সম্ভবত হবেন অষ্টম কী নবম বিচারক।’

বিচারককে প্রথমে আগের শুনানিগুলোর ৩৫,০০০ পাতার বিবরণ পড়ে দেখতে হবে। এর সঙ্গে রয়েছে হাজার হাজার নির্দেশনা। নেভিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটাই ফৌজদারি অপরাধের সবচেয়ে বড় বিচার।’ এবং সবচেয়ে বিতর্কিত।

‘নাইন-ইলেভেন’ (৯/১১) নামে পরিচিত এ হামলায় তিন হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। এ হামলার জেরে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে নামে যুক্তরাষ্ট্র। আল-কায়েদার জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ২০০১ সালে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায়। হামলায় ক্ষমতাচ্যুত হয় তালেবান। পরে মার্কিন বিশেষ বাহিনী পাকিস্তানের গোপন আস্তানায় অভিযান চালিয়ে আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে। অন্যদিকে, প্রায় ২০ বছর ধরে আফগানে যুদ্ধ চালায় যুক্তরাষ্ট্র। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসের দীর্ঘতম এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানে। অবশ্য তার আগেই গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতা ফের তালেবানের হাতে যায়।

সন্ত্রাসের মূল উৎপাটনের লক্ষ্যে আফগানিস্তান ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্র। সন্ত্রাসবিরোধী এসব অভিযানে খালিদ ছাড়াও আম্মার আল-বালুচি, ওয়ালিদ বিন আত্তাশ, রামজি বিন আল-শিভ ও মুস্তাফা আল-হাওসাই গ্রেপ্তার হন। ২০০২ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।