দেশজুড়ে বেড়েছে জ্বর-সর্দি-কাশি

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:১৩:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / 229
করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলেও ডেঙ্গুর পাশাপাশি সারাদেশে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতেও জ্বর, সর্দি, কাশি, গায়ে-হাতে ব্যথা নিয়ে রোগীরা আসছেন।

পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কিছু মানুষের করোনা ও ডেঙ্গু ধরা পড়লেও অধিকাংশই ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জায় ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। শিশু ও গর্ভবতী মা’সহ সব বয়সিকে কাবু করছে ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জা। এই রোদ এই বৃষ্টি এ ধরণের আবহাওয়ার কারণে বাড়ছে সর্দি-কাশির সঙ্গে জ্বরের প্রকোপ। এছাড়াও ঘরে-বাইরে অনেকেই খুকখুক করে কাশছে। কেউবা নাক টানছে। দিনের তাপমাত্রা বাড়লে-কমলেও গভীর রাত কিংবা ভোরের দিকে বেশ ঠাণ্ডা পড়ে। রাতে ঘুমের মধ্যে আলসেমি করে গায়ে চাদড় দেওয়া এবং ফ্যান বা এসি না কমানোর কারণে ঠাণ্ডা লেগে যায়। সব মিলিয়ে এ আবহাওয়া মানুষকে ঠাণ্ডাজনিত রোগে অনেকটা কাবু করে ফেলছে।

এ প্রসঙ্গে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বর-সর্দি-কাশির তীব্রতা থাকছে চার থেকে ১০ দিন। জ্বর সেরে গেলেও শুকনো কাশি ও দুর্বলতায় ভুগছেন অনেকে। অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই এ ক্ষেত্রেও একসঙ্গে পরিবারের একাধিক সদস্য জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। অনেকের গলাব্যথাও হচ্ছে। তাই রোগটি না কমা পর্যন্ত নিজেকে আলাদা করে অন্তত ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে ঘরে ও বাইরে অবশ্যই মাস্ক পরার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন তারা।

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, প্রায় এক মাস ধরে জ্বর-সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে প্রচুর রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। কেউ আবার বাসায় বসে ঘরোয়া চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে এ উপসর্গগুলো ব্যাপক হারে দেখা দিচ্ছে। শুধু শিশু নয়, গর্ভবতী মা’সহ সব বয়সি এতে কাবু হচ্ছেন। ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে করোনা-ডেঙ্গু ও ফুসফুসের রোগীদের অবস্থা জটিল হতে পারে। এসব রোগীর বুকের এক্সরে-সিটি স্ক্যান দেখে করোনার মতো মনে হলেও পরে দেখা যাচ্ছে তারা ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত। এখন হাসপাতালের আউটডোরে বেশির ভাগ শিশুদের জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে আসছেন অভিভাবকরা। হাঁচি-কাশির সঙ্গে শরীরে তীব্র ব্যথাও হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসার সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি, ফলমূল, শাক-সবজি খেতে হবে। নিজে থেকে কোনও ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া একেবারেই ঠিক হবে না। এতে সমস্যা বাড়তে পারে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান শিশুবিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা জানান, শিশুদের জ্বর-কাশি, হাঁচি-সর্দি বেশি হচ্ছে। তবে সব বয়সির মধ্যেই এ উপসর্গগুলো দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে আসা অনেক শিশুর ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে। এছাড়া অনেক রোগী ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে আসছেন। তবে এটা নিয়ে ভয়ের তেমন কোনও কারণ নেই।

সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে শিশু সার্জন ডা. শামছুজ্জামান বলেন, এ সময়ে বিশেষ করে শূন্য থেকে দেড়-দুই বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে উপসর্গগুলো বেশি দেখা দিচ্ছে। তবে যেসব শিশু মায়ের দুধ খায় তাদের খুব বেশি কাবু করতে পারে না। অনেক শিশু চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে বুকের ভেতর এক ধরনের কোনও ধরণের আওয়াজ হলে ও অক্সিজেন কমে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। শিশুর প্রতি যত্ন নিতে হবে। শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

চিকিৎসকরা জানান, গলাব্যথা, খুসখুস ভাব, নাক বন্ধ বা অনবরত হাঁচি, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ, দুর্বল লাগা ও ক্ষুধামন্দা দেখা দিলে চিকিৎসা করাতে হবে। সতেজ ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে আদা-লং-এলাচ-লেবু চা, তুলসী পাতা, মধু ও লেবুর রসসহ দেশীয় ফলের রস পান করার জন্যও বলা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

দেশজুড়ে বেড়েছে জ্বর-সর্দি-কাশি

আপডেট : ০১:১৩:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলেও ডেঙ্গুর পাশাপাশি সারাদেশে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতেও জ্বর, সর্দি, কাশি, গায়ে-হাতে ব্যথা নিয়ে রোগীরা আসছেন।

পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কিছু মানুষের করোনা ও ডেঙ্গু ধরা পড়লেও অধিকাংশই ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জায় ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। শিশু ও গর্ভবতী মা’সহ সব বয়সিকে কাবু করছে ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জা। এই রোদ এই বৃষ্টি এ ধরণের আবহাওয়ার কারণে বাড়ছে সর্দি-কাশির সঙ্গে জ্বরের প্রকোপ। এছাড়াও ঘরে-বাইরে অনেকেই খুকখুক করে কাশছে। কেউবা নাক টানছে। দিনের তাপমাত্রা বাড়লে-কমলেও গভীর রাত কিংবা ভোরের দিকে বেশ ঠাণ্ডা পড়ে। রাতে ঘুমের মধ্যে আলসেমি করে গায়ে চাদড় দেওয়া এবং ফ্যান বা এসি না কমানোর কারণে ঠাণ্ডা লেগে যায়। সব মিলিয়ে এ আবহাওয়া মানুষকে ঠাণ্ডাজনিত রোগে অনেকটা কাবু করে ফেলছে।

এ প্রসঙ্গে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জ্বর-সর্দি-কাশির তীব্রতা থাকছে চার থেকে ১০ দিন। জ্বর সেরে গেলেও শুকনো কাশি ও দুর্বলতায় ভুগছেন অনেকে। অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জার মতোই এ ক্ষেত্রেও একসঙ্গে পরিবারের একাধিক সদস্য জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছেন। অনেকের গলাব্যথাও হচ্ছে। তাই রোগটি না কমা পর্যন্ত নিজেকে আলাদা করে অন্তত ৬ ফুট দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে ঘরে ও বাইরে অবশ্যই মাস্ক পরার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন তারা।

প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, প্রায় এক মাস ধরে জ্বর-সর্দি-কাশির উপসর্গ নিয়ে প্রচুর রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। কেউ আবার বাসায় বসে ঘরোয়া চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে এ উপসর্গগুলো ব্যাপক হারে দেখা দিচ্ছে। শুধু শিশু নয়, গর্ভবতী মা’সহ সব বয়সি এতে কাবু হচ্ছেন। ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে করোনা-ডেঙ্গু ও ফুসফুসের রোগীদের অবস্থা জটিল হতে পারে। এসব রোগীর বুকের এক্সরে-সিটি স্ক্যান দেখে করোনার মতো মনে হলেও পরে দেখা যাচ্ছে তারা ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত। এখন হাসপাতালের আউটডোরে বেশির ভাগ শিশুদের জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে আসছেন অভিভাবকরা। হাঁচি-কাশির সঙ্গে শরীরে তীব্র ব্যথাও হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে যথাযথ চিকিৎসার সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি, ফলমূল, শাক-সবজি খেতে হবে। নিজে থেকে কোনও ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া একেবারেই ঠিক হবে না। এতে সমস্যা বাড়তে পারে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নবজাতক ইউনিটের সাবেক বিভাগীয় প্রধান শিশুবিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা জানান, শিশুদের জ্বর-কাশি, হাঁচি-সর্দি বেশি হচ্ছে। তবে সব বয়সির মধ্যেই এ উপসর্গগুলো দেখা যাচ্ছে। এ ধরনের উপসর্গ নিয়ে আসা অনেক শিশুর ডেঙ্গু শনাক্ত হচ্ছে। এছাড়া অনেক রোগী ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে আসছেন। তবে এটা নিয়ে ভয়ের তেমন কোনও কারণ নেই।

সোহরাওয়ার্দি হাসপাতালে শিশু সার্জন ডা. শামছুজ্জামান বলেন, এ সময়ে বিশেষ করে শূন্য থেকে দেড়-দুই বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে উপসর্গগুলো বেশি দেখা দিচ্ছে। তবে যেসব শিশু মায়ের দুধ খায় তাদের খুব বেশি কাবু করতে পারে না। অনেক শিশু চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে। তবে বুকের ভেতর এক ধরনের কোনও ধরণের আওয়াজ হলে ও অক্সিজেন কমে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। শিশুর প্রতি যত্ন নিতে হবে। শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

চিকিৎসকরা জানান, গলাব্যথা, খুসখুস ভাব, নাক বন্ধ বা অনবরত হাঁচি, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ, দুর্বল লাগা ও ক্ষুধামন্দা দেখা দিলে চিকিৎসা করাতে হবে। সতেজ ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ এবং পর্যাপ্ত পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। একই সঙ্গে আদা-লং-এলাচ-লেবু চা, তুলসী পাতা, মধু ও লেবুর রসসহ দেশীয় ফলের রস পান করার জন্যও বলা হয়েছে।