বিদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে না চীন

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ০১:০৬:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • / 145
চীন অন্য কোনো দেশে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় চীনের এ সিদ্ধান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার সময় এ প্রতিশ্রুতি দেন। খবর বিবিসির।

চীন ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নামের বিশাল অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে কয়লা প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছিল। জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে করা আন্তর্জাতিক প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এ অর্থায়ন বন্ধ করতে চীনের ওপর চাপ ক্রমশই বাড়ছিল।

জাতিসংঘের বার্ষিক অধিবেশনে ভিডিওতে রেকর্ড করা ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি করে না এবং অল্প পরিমাণে কার্বন নির্গত হয়- এ ধরনের জ্বালানীর ব্যাপারে চীন অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করবে এবং অন্য কোনো দেশে কয়লাভিত্তিক নতুন কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রও নির্মাণ করবে না।’

এ বিষয়ে এর বাইরে বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় উন্নয়নশীল অনেক দেশে যেসব কয়লা-ভিত্তিক প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছিল, বেইজিং-এর এ সিদ্ধান্তের ফলে সেগুলো সীমিত হয়ে পড়বে।

বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের আওতায় চীন বিভিন্ন দেশকে রেল, সড়ক, বন্দর ও কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছিল। এসব দেশের মধ্যে অনেকগুলোই উন্নয়নশীল দেশ।

এ বছরের প্রথম ছয় মাসে চীন কোনো কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থ সহযোগিতা দেয়নি, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে বিরল ঘটনা।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন বিশ্বের এক নম্বর পরিবেশ দূষণকারী দেশ। পৃথিবীতে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত করে তাদের শীর্ষে রয়েছে চীন। নিজেদের দেশের জ্বালানী চাহিদা মেটানোর জন্য তারা কয়লার উপর ব্যাপক নির্ভরশীল। চীন ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু বিষয়ক দূত জন কেরি বিদেশে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থ যোগান না দেওয়ার ব্যাপারে চীনের নতুন এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট শি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা জেনে আমরা খুব খুশি।’

আগামী মাসে স্কটল্যান্ডে জাতিসংঘের উদ্যোগে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তার প্রধানও চীনের এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। অলোক শর্মা টুইটারে বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শি-এর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমার চীন সফরের সময় যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে এটা একটা মুখ্য বিষয়।’

সাংহাই থেকে বিবিসির সংবাদদাতা রবিন ব্র্যান্ট বলেন, চীনের কাছ থেকে এ রকম একটি ঘোষণা অনেক দিন ধরেই আশা করা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক দশক ধরে শি জিনপিং-এর বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এ ধরনের প্রকল্পের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।’

চীনের এ ঘোষণায় এখনও যেসব বিষয় পরিষ্কার নয় তার মধ্যে রয়েছে – এ সিদ্ধান্ত কবে থেকে কার্যকর হবে এবং নতুন যেসব প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে, কিন্তু এখনও নির্মাণ করা হয়নি সেগুলোর ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে কীনা।

কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র।

সারা বিশ্বে যে পরিমাণে কয়লা পোড়ানো হয় তার অর্ধেকই হয় চীনে। দেশটি এখনও নিজেদের দেশে নতুন নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে যেগুলোর আয়ু হতে পারে ৪০ থেকে ৫০ বছর। চীনের ভেতরে এসব কেন্দ্রের ব্যাপারে বেইজিং কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটাও অনেক বড় একটি প্রশ্ন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় একত্রে কাজ করার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহবান জানানোর পর শি জিন পিং এ ঘোষণা দিয়েছেন। জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে বাইডেন চীনের নাম উল্লেখ না করেই বলেছেন, কর্তৃত্ববাদের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পরাজিত করা যাবে না।

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ হবে তাদের যারা তাদের জনগণকে স্বাধীনভাবে শ্বাস গ্রহণ করতে দেয়, যারা লোহার হাত দিয়ে তাদের জনগণের শ্বাসরোধ করে তাদের নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বিভিন্ন ইস্যুতে এখন সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে। এসব বিষয়ে মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, মানবাধিকার এবং কোভিড-১৯। তবে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, সারা বিশ্বের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক শান্তিপূর্ণ।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে না চীন

আপডেট : ০১:০৬:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১
চীন অন্য কোনো দেশে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় চীনের এ সিদ্ধান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার সময় এ প্রতিশ্রুতি দেন। খবর বিবিসির।

চীন ‘বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ নামের বিশাল অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় ইন্দোনেশিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে কয়লা প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছিল। জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে করা আন্তর্জাতিক প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এ অর্থায়ন বন্ধ করতে চীনের ওপর চাপ ক্রমশই বাড়ছিল।

জাতিসংঘের বার্ষিক অধিবেশনে ভিডিওতে রেকর্ড করা ভাষণে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি করে না এবং অল্প পরিমাণে কার্বন নির্গত হয়- এ ধরনের জ্বালানীর ব্যাপারে চীন অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য করবে এবং অন্য কোনো দেশে কয়লাভিত্তিক নতুন কোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রও নির্মাণ করবে না।’

এ বিষয়ে এর বাইরে বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় উন্নয়নশীল অনেক দেশে যেসব কয়লা-ভিত্তিক প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছিল, বেইজিং-এর এ সিদ্ধান্তের ফলে সেগুলো সীমিত হয়ে পড়বে।

বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পের আওতায় চীন বিভিন্ন দেশকে রেল, সড়ক, বন্দর ও কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছিল। এসব দেশের মধ্যে অনেকগুলোই উন্নয়নশীল দেশ।

এ বছরের প্রথম ছয় মাসে চীন কোনো কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থ সহযোগিতা দেয়নি, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে বিরল ঘটনা।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন বিশ্বের এক নম্বর পরিবেশ দূষণকারী দেশ। পৃথিবীতে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গত করে তাদের শীর্ষে রয়েছে চীন। নিজেদের দেশের জ্বালানী চাহিদা মেটানোর জন্য তারা কয়লার উপর ব্যাপক নির্ভরশীল। চীন ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমনের মাত্রা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু বিষয়ক দূত জন কেরি বিদেশে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থ যোগান না দেওয়ার ব্যাপারে চীনের নতুন এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট শি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা জেনে আমরা খুব খুশি।’

আগামী মাসে স্কটল্যান্ডে জাতিসংঘের উদ্যোগে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তার প্রধানও চীনের এ সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। অলোক শর্মা টুইটারে বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শি-এর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমার চীন সফরের সময় যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে এটা একটা মুখ্য বিষয়।’

সাংহাই থেকে বিবিসির সংবাদদাতা রবিন ব্র্যান্ট বলেন, চীনের কাছ থেকে এ রকম একটি ঘোষণা অনেক দিন ধরেই আশা করা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক দশক ধরে শি জিনপিং-এর বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ প্রকল্পে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে এ ধরনের প্রকল্পের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।’

চীনের এ ঘোষণায় এখনও যেসব বিষয় পরিষ্কার নয় তার মধ্যে রয়েছে – এ সিদ্ধান্ত কবে থেকে কার্যকর হবে এবং নতুন যেসব প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে, কিন্তু এখনও নির্মাণ করা হয়নি সেগুলোর ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে কীনা।

কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র।

সারা বিশ্বে যে পরিমাণে কয়লা পোড়ানো হয় তার অর্ধেকই হয় চীনে। দেশটি এখনও নিজেদের দেশে নতুন নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে যেগুলোর আয়ু হতে পারে ৪০ থেকে ৫০ বছর। চীনের ভেতরে এসব কেন্দ্রের ব্যাপারে বেইজিং কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটাও অনেক বড় একটি প্রশ্ন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবেলায় একত্রে কাজ করার জন্য দেশগুলোর প্রতি আহবান জানানোর পর শি জিন পিং এ ঘোষণা দিয়েছেন। জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে বাইডেন চীনের নাম উল্লেখ না করেই বলেছেন, কর্তৃত্ববাদের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে পরাজিত করা যাবে না।

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ হবে তাদের যারা তাদের জনগণকে স্বাধীনভাবে শ্বাস গ্রহণ করতে দেয়, যারা লোহার হাত দিয়ে তাদের জনগণের শ্বাসরোধ করে তাদের নয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বিভিন্ন ইস্যুতে এখন সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে। এসব বিষয়ে মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, মানবাধিকার এবং কোভিড-১৯। তবে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, সারা বিশ্বের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক শান্তিপূর্ণ।