ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’: জরুরী সতর্কতা, প্রস্তুত বাহিনীর ২২ দল
- আপডেট : ০১:১৭:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / 123
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ এরই মধ্যে তাদের ওয়েবসাইটে একটি সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়ের আগমন সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছে।
এ সংক্রান্ত তাদের একটি আবহাওয়ার বুলেটিনে বলা হয়েছে, শনিবারের মধ্যেই নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টির গতি-প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে, রোববার রাতে এটি অন্ধ্র প্রদেশের উত্তরাঞ্চল এবং উড়িষ্যা দক্ষিণাঞ্চল অতিক্রম করবে। মোট তিনদিন এটি তাণ্ডব চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এপিবি আনন্দের খবরে বলা হয়, উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে বৃষ্টি বাড়বে। সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আজ থেকেই দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে পারে। অতি বৃষ্টিতে নদীগুলির জলস্তর বাড়ায় নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও শহরাঞ্চলেও ফের পানি জমার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া দফতর ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি করার পরই তৎপর কলকাতা রাজ্য প্রশাসন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষ দল গড়ল কলকাতা পুলিশ। দলে থাকছেন কলকাতা পৌরসভা, পূর্ত দফতর, দমকল ও সিইএসসি-র প্রতিনিধিরা।
জানা যায়, কলকাতার ভবানীপুর, কালীঘাট, আলিপুর, ওয়াটগঞ্জ, একবালপুর, এই পাঁচটি এলাকায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ২২টি দলকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। দুর্গতদের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা, বিপজ্জনক বাড়ির তালিকা প্রস্তুত, ত্রাণ শিবিরের জন্য পোশাক ও খাবার মজুত রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ভারতের আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়, গভীর নিম্নচাপটি আগামী ১২ ঘণ্টায় পরিণত হবে ঘূর্ণিঝড়ে। আগামীকাল বিকালে এই ঘূর্ণিঝড় ওড়িশার গোপালপুর ও অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের মাঝে কলিঙ্গপত্তনমের কাছে স্থলভাগে আছড়ে পড়বে। অতি বৃষ্টিতে নদীগুলির পানি বাড়ায় নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা আবহাওয়া দপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, তারা মোটামুটি নিশ্চিত যে নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে যাচ্ছে। এটি আজ সন্ধ্যা অথবা রাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে।
তবে তিনি সবাইকে আতঙ্কগ্রস্থ না হওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, এটা হবে একটি স্বল্প শক্তির ঘূর্ণিঝড়, যার গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এটি মূলত ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত হানবে। আর বাংলাদেশে এর প্রভাব কিছুটা পরবে। উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বৃষ্টি হতে পারে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি একেকটি ঝড়ের নামকরণ করে। যেমন ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার আটটি দেশ। যেগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান, যাদের প্যানেলকে বলা হয় WMO/ESCAP।
এর সময় ঝড়গুলোকে নানা নম্বর দিয়ে শনাক্ত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য হতো। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন মনে হতো।
এ কারণে ২০০৪ সাল থেকে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরের উপকূলবর্তী দেশগুলোয় ঝড়ের নামকরণ শুরু হয়। এবারকার ‘গুলাব’ নামটি পাকিস্তানের প্রস্তাব করা।
নিম্নচাপের প্রভাবে এরই মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। দুপুরে ঢাকাতেও বৃষ্টি হয়েছে।
গভীর নিম্নচাপের কারণে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে।
গভীর নিম্নচাপটি সর্বশেষ চট্টগ্রাম থেকে ৪৮০ কিলোমিটার, কক্সবাজার থেকে ৪১৫ কিলোমিটার এবং ভারতের উড়িষ্যা উপকূল থেকে ৫১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল।
এর আগে বঙ্গোপসাগরে সবশেষ যে ঘূর্ণিঝড়টি তৈরি হয়েছিল, সেটির নাম ‘ইয়াস’। গত মে মাসে এটি ভারতের ওডিশায় আঘাত হেনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল।