জাপানি মাকে নিয়ে ভুয়া ভিডিও সরানোর নির্দেশ
- আপডেট : ১০:১৪:৪২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
- / 108
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে আজ জাপানি মায়ের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। অন্যদিকে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফওজিয়া করিম ফিরোজ।
শুনানিতে আইনজীবী শিশির আদালতকে বলেন, এরিকো তার দুই মেয়ের সঙ্গে রাতে থাকতে চান। তিনি কেনাকাটা ও বিনোদনমূলক কাজে অংশ নেয়ার জন্য শিশুদের নিয়ে ইউনিমার্ট যেতে চান।
এছাড়া জাপানি মাকে নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে আপলোড হওয়া ভিডিওর বিষয়ে আইনজীবী বলেন, আরও একটি বিষয় বলতে চাই, কিন্তু লজ্জা লাগছে। এ সময় তিনি আবেদনের পৃষ্ঠা উল্লেখ করে ভিডিও লিংক দেয়া আছে বলে জানান।
এ আইনজীবী বলেন, সেখানে অন্তত ১৭টি লিংক আছে। যেখানে জাপানি নারীকে নিয়ে বিভিন্ন চটকদার ভিডিও ও নারী উপস্থাপকরা তা উপস্থাপন করছেন। এর কোনোটি দুই মিলিয়ন, চার মিলিয়ন, ছয় মিলিয়ন এমনকি সাত মিলিয়ন দর্শক (ভিউয়ার)। অর্থাৎ প্রায় ৭০ লাখ মানুষ ভিডিওগুলো দেখেছেন। এসব ভিডিও সরানোর জন্য নির্দেশনা চাই।
এসময় আদালত বলেন, ‘ভিডিও লাইক-শেয়ারে নাকি আয়-ইনকাম হয়?’ তখন শিশির মনির বলেন, ‘হ্যাঁ, এসব ভিডিও লাইক-শেয়ারে আয়-ইনকাম হয়।’
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি-আমেরিকান শরীফ ইমরানের (৫৮) বিয়ে হয় এবং তারা টোকিওতেই বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে আসে তিন কন্যাসন্তান। তারা তিনজনই টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের শিক্ষার্থী ছিল।
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি তাদের বিয়েবিচ্ছেদ হয়। ২১ জানুয়ারি ইমরান আমেরিকান স্কুল ইন জাপান কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু এতে স্ত্রী এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ ইমরানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। এর পরদিন জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা স্কুল বাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে ইমরান তাদের অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
২৫ জানুয়ারি শরীফ ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছ থেকে মেয়েদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো ওই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে মেয়েদের নিজ জিম্মায় পেতে আদেশ চেয়ে ২৮ জানুয়ারি টোকিওর পারিবারিক আদালতে মামলা করেন।
আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মেয়েদের সঙ্গে এরিকোর সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। কিন্তু ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়েকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন। এরপর ৯ ফেব্রুয়ারি ‘মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে’ ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্ট করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে তিনি দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
এরই মধ্যে ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে তাদের মা এরিকোর জিম্মায় দেয়ার আদেশ দেন। এ নিয়ে এরিকো বাংলাদেশের একজন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। ১৮ জুলাই তিনি শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে আসেন এবং তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ থাকার পরও ইমরান রিপোর্ট অবিশ্বাস করে সন্তানদের সঙ্গে তাকে সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান।
২৭ জুলাই এরিকোর মোবাইল সংযোগ বন্ধ করে চোখ বাঁধা অবস্থায় মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়। এ অবস্থায় দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকো।