ঢাকা ০৬:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘শিক্ষকের মর্যাদা নষ্ট হলে সম্মিলিত আন্দোলন গড়ে তোলা হবে’

গাজীপুর প্রতিনিধি
  • আপডেট : ০৮:০৩:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২
  • / 193
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘কেউ যেন শিক্ষকের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি নষ্ট হবার মতো ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয় কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত না করে। ভবিষ্যতে এরূপ কোনো কাজে কেউ নিজেকে সম্পৃক্ত করলে প্রয়োজনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গোটা পরিবারকে সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলবে। একটি আদর্শনিষ্ঠ সমাজব্যবস্থায় এরূপ অন্যায্য ও রুচিবহির্ভূত কাজ কোনোরূপেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪তম বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান এসব কথা বলেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান।

সিনেট চেয়ারম্যানের বক্তব্যে ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সত্যিকার অর্থেই এক চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে একইসঙ্গে এ কথাও সত্য যে, এ কাজটি সুচারুরূপে করা সম্ভব হলে দেশ ও সমাজে প্রকৃত এক পরিবর্তন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট একটি কার্যকর পর্ষদ। যার মাধ্যমে আপনাদের পরামর্শ, সহযোগিতা, দিকনির্দেশনা পাওয়া সম্ভব। নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যদিয়ে কাজ করা আমাদের জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু কতগুলো বিষয় হয়ে ওঠে দুঃখজনক এবং অতীব পরিতাপের। যেমনটি সম্প্রতি ঘটেছে নড়াইল, সাভার এবং রাজশাহীর তিনটি কলেজে। আমি অত্যন্ত বেদনা, দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে আপনাদের সকলকে সাথে নিয়ে এই অভিব্যক্তিই প্রকাশ করতে চাই- রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক আইন এবং আমাদের সমাজের প্রচলিত আদর্শকে লঙ্ঘন করে কেউ যেন শিক্ষকদের মর্যাদা নষ্ট না করে।’

উপাচার্য বলেন, ‘সার্কভুক্ত দেশ শ্রীলংকা যখন কোভিড ভয়াবহতার নতুন পৃথিবীতে সংকটে নিমজ্জিত এবং এক অকার্যকরতা ও অনিশ্চয়তার পথে হাঁটছে, বাংলাদেশ তখন আস্থার সেতুর উদ্বোধনসহ নানা মেগা প্রজেক্ট নিয়ে এগিয়ে চলছে। তবু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কৃচ্ছ্র সাধন নিশ্চিত করে সকলকে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এগুতে হবে, যেন বাংলাদেশকে অন্য কোনো পক্ষ ব্যর্থতার গ্লানিতে ফেলতে না পারে।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিতভাবে সতর্ক থেকে দেশমাতৃকাকে নিয়ে যেতে হবে এক অনন্য নতুন উচ্চতায়। আমরা মাতৃভূমিকে গড়ে তুলতে চাই-বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত এক নতুন প্রবাহে। মানুষে মানুষে বৈষম্য কমিয়ে এনে এখানে গড়ে উঠুক সমতা প্রতিষ্ঠার এক নতুন সমাজ। প্রয়োজনে গড়ে উঠুক নতুন এক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক লড়াই। আর সে লড়াই হোক বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠার। পৃথিবীর বঞ্চিত মানুষের মুক্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের আগামী প্রজন্ম হোক মুক্তির দিশারী।’

এ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, সাবেক চিফ হুইপ ও সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পিএসসির সাবেক সদস্য প্রফেসর ড. শরীফ এনামুল কবির, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য স্থপতি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নূরসহ ২২ জন সিনেট সদস্য। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষসহ ৬০ জন সম্মানিত সিনেট সদস্য অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। সিনেট অধিবেশন সঞ্চালনা করেন সিনেট সচিব।

সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এই অর্থবছরে ৭৫ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত সম্বলিত রাজস্ব ও উন্নয়নসহ সর্বমোট ৯৭৬ কোটি ১৪ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকার বাজেট পেশ করা হয়। এর মধ্যে পৌনঃপুনিক (রাজস্ব) বাজেট ৪৮৫ কোটি ৮৭ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য ৪৯০ কোটি ২৬ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এছাড়া ২০২১-২০২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও সিনেটে অনুমোদিত হয়।

কোভিড-১৯ এর কারণে গত দুই বছর সিনেট অধিবেশন অনলাইন প্লাটফর্ম জুমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারই সকল ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

‘শিক্ষকের মর্যাদা নষ্ট হলে সম্মিলিত আন্দোলন গড়ে তোলা হবে’

আপডেট : ০৮:০৩:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘কেউ যেন শিক্ষকের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি নষ্ট হবার মতো ন্যাক্কারজনক ও নিন্দনীয় কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত না করে। ভবিষ্যতে এরূপ কোনো কাজে কেউ নিজেকে সম্পৃক্ত করলে প্রয়োজনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গোটা পরিবারকে সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলবে। একটি আদর্শনিষ্ঠ সমাজব্যবস্থায় এরূপ অন্যায্য ও রুচিবহির্ভূত কাজ কোনোরূপেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪তম বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান এসব কথা বলেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকারও আহ্বান জানান।

সিনেট চেয়ারম্যানের বক্তব্যে ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সত্যিকার অর্থেই এক চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে একইসঙ্গে এ কথাও সত্য যে, এ কাজটি সুচারুরূপে করা সম্ভব হলে দেশ ও সমাজে প্রকৃত এক পরিবর্তন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট একটি কার্যকর পর্ষদ। যার মাধ্যমে আপনাদের পরামর্শ, সহযোগিতা, দিকনির্দেশনা পাওয়া সম্ভব। নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যদিয়ে কাজ করা আমাদের জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু কতগুলো বিষয় হয়ে ওঠে দুঃখজনক এবং অতীব পরিতাপের। যেমনটি সম্প্রতি ঘটেছে নড়াইল, সাভার এবং রাজশাহীর তিনটি কলেজে। আমি অত্যন্ত বেদনা, দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে আপনাদের সকলকে সাথে নিয়ে এই অভিব্যক্তিই প্রকাশ করতে চাই- রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক আইন এবং আমাদের সমাজের প্রচলিত আদর্শকে লঙ্ঘন করে কেউ যেন শিক্ষকদের মর্যাদা নষ্ট না করে।’

উপাচার্য বলেন, ‘সার্কভুক্ত দেশ শ্রীলংকা যখন কোভিড ভয়াবহতার নতুন পৃথিবীতে সংকটে নিমজ্জিত এবং এক অকার্যকরতা ও অনিশ্চয়তার পথে হাঁটছে, বাংলাদেশ তখন আস্থার সেতুর উদ্বোধনসহ নানা মেগা প্রজেক্ট নিয়ে এগিয়ে চলছে। তবু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। কৃচ্ছ্র সাধন নিশ্চিত করে সকলকে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে এগুতে হবে, যেন বাংলাদেশকে অন্য কোনো পক্ষ ব্যর্থতার গ্লানিতে ফেলতে না পারে।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমাদের সম্মিলিতভাবে সতর্ক থেকে দেশমাতৃকাকে নিয়ে যেতে হবে এক অনন্য নতুন উচ্চতায়। আমরা মাতৃভূমিকে গড়ে তুলতে চাই-বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত এক নতুন প্রবাহে। মানুষে মানুষে বৈষম্য কমিয়ে এনে এখানে গড়ে উঠুক সমতা প্রতিষ্ঠার এক নতুন সমাজ। প্রয়োজনে গড়ে উঠুক নতুন এক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক লড়াই। আর সে লড়াই হোক বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠার। পৃথিবীর বঞ্চিত মানুষের মুক্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের আগামী প্রজন্ম হোক মুক্তির দিশারী।’

এ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি, সাবেক চিফ হুইপ ও সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও পিএসসির সাবেক সদস্য প্রফেসর ড. শরীফ এনামুল কবির, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য স্থপতি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মুনাজ আহমেদ নূরসহ ২২ জন সিনেট সদস্য। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষসহ ৬০ জন সম্মানিত সিনেট সদস্য অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। সিনেট অধিবেশন সঞ্চালনা করেন সিনেট সচিব।

সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন। এই অর্থবছরে ৭৫ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত সম্বলিত রাজস্ব ও উন্নয়নসহ সর্বমোট ৯৭৬ কোটি ১৪ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকার বাজেট পেশ করা হয়। এর মধ্যে পৌনঃপুনিক (রাজস্ব) বাজেট ৪৮৫ কোটি ৮৭ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য ৪৯০ কোটি ২৬ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়। এছাড়া ২০২১-২০২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও সিনেটে অনুমোদিত হয়।

কোভিড-১৯ এর কারণে গত দুই বছর সিনেট অধিবেশন অনলাইন প্লাটফর্ম জুমের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারই সকল ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।