ঢাকা ০৮:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পর্দা করা নিয়ে হেনস্তা,নোবিপ্রবিতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন 

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি 
  • আপডেট : ০৩:৩২:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / 10
পর্দা করে ক্লাস করা ও পরীক্ষা দেওয়ায় এক ছাত্রীকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে। আইন বিভাগের ২০১৯—২০ সেশনের শিক্ষার্থী নিপা আক্তার পর্দা করায় নিজের সাথে ঘটা হেনস্থার এমন অভিযোগ তোলেন।  মঙ্গলবার ১০ সেপ্টেম্বর নোবিপ্রবির শহীদ মিনারের সামনে দুপুর ২ টার সময় পর্দা করা নিয়ে হেনস্থা করায় বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে মানব বন্ধন করেছে।
আছিস যত চাটুকার, শিক্ষা গুরুর পোশাক ছাড়। স্বৈরাচারের আস্তানা এই ক্যাম্পাসে হবে না। স্বৈরাচারের আস্তানা আইন বিভাগে হবে না। এমন নানা প্রকার স্লোগান ও বিভিন্ন প্রকার প্লেকার্ড—পেস্টুন নিয়ে শিক্ষীর্রা মানববন্ধনে অংশ গ্রহণ করে।
মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি গ্রুপে এবং নিজের টাইমলাইনে ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, উনি আমাকে আমার পর্দা নিয়ে অনেক হ্যারাস করছে। শুরুতে বলে রাখি, ভার্সিটির প্রথমদিকে আমি শুধু হিজাব পরতাম। পরে আল্লাহ হেদায়েত দেন। আমি নিকাব পড়া শুরু করি। তারপর একদিন আমি তাঁর কাছে গিয়েছিলাম আমার হলের সিটের ব্যাপারে কথা বলতে। কিন্তু তিনি আমাকে আমার পর্দা নিয়ে অনেক কথা শোনায়। আমার এই অবস্থা কেন? আমার কি বিয়ে হয়েছে কিনা? আমাকে কিন্তু এইভাবে কোর্টে এলাউ করবে না। এভাবে বিভিন্ন ধরণের কথা শোনান।
আরো অভিযোগ করে ওই ভুক্তভোগী বলেন, আমি এক্সাম হলে যখন এক্সাম দিচ্ছিলাম তখন তিনি আমাকে অনেক অপমান করেন। তোমার প্রবেশপত্রে যে ছবি দেখা যাচ্ছে এখন লজ্জা করে না? মুখ খুলতে কীসের লজ্জা। আরো অনেক কথা বলে আমাকে অপমান করেন এবং তিনি আমার খাতায় সাইনও করতে চাননি।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী নোবিপ্রবি বিএমএস বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ বিন খলিল বলেন, পরীক্ষার হলে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া একটি মেয়েকে পর্দা করায় নাম জিজ্ঞেস করে বলে, এভাবে আমি সাইন দিবো না। তুমি নেকাফ না খুললে আমি কিভাবে বুঝবো তুমি আমার বিভাগের মেয়ে। পরবর্তীতে এ নিয়ে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে বাদশা মিয়া আমাকে কল দিয়ে পোস্ট ডিলিট করতে বাধ্য করে।
মানববন্ধনে ভুক্তোভুগী ছাত্রীর সহপাঠী অর্পিতা দাস বলেন, নিপার সাথে ২য় বর্ষ থেকেই বাদশা স্যার অস্বাভাবিক আচরণ করতো। এর কারণ হচ্ছে সে মুসলিম ধর্ম অনুযায়ী পর্দা করতে শুরু করে। পরীক্ষার হলে এবং ভাইবা বোর্ডেও সে ধর্ম অনুযায়ী পর্দা করতো। কিন্তু বাদশা স্যার সেখানে তাকে মানসিক যন্ত্রণা দিতো শুধু পর্দা করার কারণেই।
২০২১—২২ সেশনের শিক্ষার্থী নৌরিই ত্বহা বলেন, কেউ ধর্ম পালন করবে কি করবে না এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু যে করতেছে তাকে প্রশ্ন করার অধিকার অন্য একজন রাখেনা যে তুমি কেনো ধর্ম পালন করতেছে কিংবা ধর্মের বিধি নিষেধ পালন করতেছো। যদি কেউ করে তাহলে তাকে অবশ্যই জবাব দিহি করতে হবে।
অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সংবিধানে বলা আছে কাউকে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। অর্থাৎ সে জায়গায় হিন্দু -বৌদ্ধ -মুসলিম -খ্রিস্টান প্রত্যেক ব্যক্তি সে তার স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। কারো কোনো অধিকার নেই সে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার। সে জায়গায় আমাদের নিপা আপু যদি চায় সে তার ধর্মীয় মোতাবেক চলাফেরা করবে,  সে জায়গায় কোন শিক্ষকই কোনোভাবেই কোন অধিকার নেই তাকে হেনস্তা করার। আমরা চাই না এমন কোন ঘটনা নোবিপ্রবিতে হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে বলেন, আমি পরীক্ষার হলে খাতায় স্বাক্ষর করার সময় শুধুমাত্র তার নাম জিজ্ঞেস করেছি। ব্যাক্তিগতভাবে তাকে আমি ভালো করে চিনি না এবং তাকে পর্দা নিয়ে কোন কথা বলিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

পর্দা করা নিয়ে হেনস্তা,নোবিপ্রবিতে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন 

আপডেট : ০৩:৩২:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
পর্দা করে ক্লাস করা ও পরীক্ষা দেওয়ায় এক ছাত্রীকে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে। আইন বিভাগের ২০১৯—২০ সেশনের শিক্ষার্থী নিপা আক্তার পর্দা করায় নিজের সাথে ঘটা হেনস্থার এমন অভিযোগ তোলেন।  মঙ্গলবার ১০ সেপ্টেম্বর নোবিপ্রবির শহীদ মিনারের সামনে দুপুর ২ টার সময় পর্দা করা নিয়ে হেনস্থা করায় বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়ার বিরুদ্ধে মানব বন্ধন করেছে।
আছিস যত চাটুকার, শিক্ষা গুরুর পোশাক ছাড়। স্বৈরাচারের আস্তানা এই ক্যাম্পাসে হবে না। স্বৈরাচারের আস্তানা আইন বিভাগে হবে না। এমন নানা প্রকার স্লোগান ও বিভিন্ন প্রকার প্লেকার্ড—পেস্টুন নিয়ে শিক্ষীর্রা মানববন্ধনে অংশ গ্রহণ করে।
মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি গ্রুপে এবং নিজের টাইমলাইনে ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, উনি আমাকে আমার পর্দা নিয়ে অনেক হ্যারাস করছে। শুরুতে বলে রাখি, ভার্সিটির প্রথমদিকে আমি শুধু হিজাব পরতাম। পরে আল্লাহ হেদায়েত দেন। আমি নিকাব পড়া শুরু করি। তারপর একদিন আমি তাঁর কাছে গিয়েছিলাম আমার হলের সিটের ব্যাপারে কথা বলতে। কিন্তু তিনি আমাকে আমার পর্দা নিয়ে অনেক কথা শোনায়। আমার এই অবস্থা কেন? আমার কি বিয়ে হয়েছে কিনা? আমাকে কিন্তু এইভাবে কোর্টে এলাউ করবে না। এভাবে বিভিন্ন ধরণের কথা শোনান।
আরো অভিযোগ করে ওই ভুক্তভোগী বলেন, আমি এক্সাম হলে যখন এক্সাম দিচ্ছিলাম তখন তিনি আমাকে অনেক অপমান করেন। তোমার প্রবেশপত্রে যে ছবি দেখা যাচ্ছে এখন লজ্জা করে না? মুখ খুলতে কীসের লজ্জা। আরো অনেক কথা বলে আমাকে অপমান করেন এবং তিনি আমার খাতায় সাইনও করতে চাননি।
এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী নোবিপ্রবি বিএমএস বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ বিন খলিল বলেন, পরীক্ষার হলে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া একটি মেয়েকে পর্দা করায় নাম জিজ্ঞেস করে বলে, এভাবে আমি সাইন দিবো না। তুমি নেকাফ না খুললে আমি কিভাবে বুঝবো তুমি আমার বিভাগের মেয়ে। পরবর্তীতে এ নিয়ে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে বাদশা মিয়া আমাকে কল দিয়ে পোস্ট ডিলিট করতে বাধ্য করে।
মানববন্ধনে ভুক্তোভুগী ছাত্রীর সহপাঠী অর্পিতা দাস বলেন, নিপার সাথে ২য় বর্ষ থেকেই বাদশা স্যার অস্বাভাবিক আচরণ করতো। এর কারণ হচ্ছে সে মুসলিম ধর্ম অনুযায়ী পর্দা করতে শুরু করে। পরীক্ষার হলে এবং ভাইবা বোর্ডেও সে ধর্ম অনুযায়ী পর্দা করতো। কিন্তু বাদশা স্যার সেখানে তাকে মানসিক যন্ত্রণা দিতো শুধু পর্দা করার কারণেই।
২০২১—২২ সেশনের শিক্ষার্থী নৌরিই ত্বহা বলেন, কেউ ধর্ম পালন করবে কি করবে না এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু যে করতেছে তাকে প্রশ্ন করার অধিকার অন্য একজন রাখেনা যে তুমি কেনো ধর্ম পালন করতেছে কিংবা ধর্মের বিধি নিষেধ পালন করতেছো। যদি কেউ করে তাহলে তাকে অবশ্যই জবাব দিহি করতে হবে।
অন্য এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের সংবিধানে বলা আছে কাউকে ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। অর্থাৎ সে জায়গায় হিন্দু -বৌদ্ধ -মুসলিম -খ্রিস্টান প্রত্যেক ব্যক্তি সে তার স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। কারো কোনো অধিকার নেই সে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার। সে জায়গায় আমাদের নিপা আপু যদি চায় সে তার ধর্মীয় মোতাবেক চলাফেরা করবে,  সে জায়গায় কোন শিক্ষকই কোনোভাবেই কোন অধিকার নেই তাকে হেনস্তা করার। আমরা চাই না এমন কোন ঘটনা নোবিপ্রবিতে হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক বিষয়টি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করে বলেন, আমি পরীক্ষার হলে খাতায় স্বাক্ষর করার সময় শুধুমাত্র তার নাম জিজ্ঞেস করেছি। ব্যাক্তিগতভাবে তাকে আমি ভালো করে চিনি না এবং তাকে পর্দা নিয়ে কোন কথা বলিনি।