পেশায় শিক্ষক হলেও প্রতারণায় বিজ্ঞ জামান মিয়া
- আপডেট : ১১:৫৬:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০২৪
- / 44
সম্প্রতি, ছাত্র জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তৎকালীন আওয়ামী সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে বেরিয়ে আসছে সেই সময় সরকারের মদতে থাকা দুর্নীতিবাজদের তালিকা। যারা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। সেই তালিকায় সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে রয়েছে অফিস সহকারীর নামও। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার কিছু দুর্নীতিবাজদের নামেও উঠেছে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র জীবনে নিজের পকেট চালাতেন টিউশনি করে। আস্তে আস্তে ছাত্র জীবন থেকে হয়ে গেলেন শিক্ষক। সমাজে নাম বিস্তার হতে থাকে ‘স্যার’ হিসেবে। আর সেই নাম (স্যার) পুঁজি করেই হয়ে যায় ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’। বলছি রাজধানীর লালমাটিয়ায় অবস্থিত ‘উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ ও গুলশানের ‘গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ এর প্রধান শিক্ষক মো.আবদুল্লাহ জামান ওরফে জামান মিয়া’র কথা। পেশায় শিক্ষক হলেও তার বিরুদ্ধে রয়েছে প্রতারণা ও দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তার কাছ থেকে প্রতারিত হয়েছেন খোদ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ‘উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ ও ‘গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ এর প্রধান শিক্ষক জামান মিয়ার প্রতারণা ও ছলচাতুরির ফাঁদে পা দিয়েছেন অনেকেই। এ ছাড়া তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
অনেকের মতো জামান মিয়া’র প্রতারণার ফাঁদে পা দেন তারই ‘উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে’র এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মাহবুবা আক্তার। মাহবুবা একজন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগের ফাঁদ পেতে মাহবুবা আক্তার এর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন স্কুলটির বর্তমান প্রধান শিক্ষক জামান মিয়া।
এসব বিষয়ে মাহবুবা আক্তার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার মেয়ের স্কুলের ‘প্রধান শিক্ষক’ জামান মিয়া। সেই সূত্রে তার সাথে কয়েক বছর আগে আমার ও আমার স্বামীর পরিচয় হয়। তিনি আমাদেরকে তার স্কুলে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেন। আমাদের বিভিন্ন কৌশলে প্রতিষ্ঠান থেকে মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে ২৮ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। বিনিময়ে আমাদেরকে তার স্কুলের দুটি শেয়ার দেওয়ার কথা। পরবর্তিতে একটি শেয়ার বুঝিয়ে দিলেও অন্য আরেকটি শেয়ার দেয়নি। আমাদের সাথে তিনি (জামান মিয়া) প্রতারণা করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরবর্তীতে টাকা ফেরত চাইলে জামান মিয়া বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির ভয় দেখিয়ে আমাদের চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। যাদের মধ্যে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলের বিভিন্ন নেতা ও তৎকালীন পুলিশের ঢাকায় কর্মরত উচ্চপদস্থ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও ছিলেন। সেই সাথে তিনি গত সরকারের আমলের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের নাম ভাঙ্গিয়েও আমাদেরকে হুমকি প্রদান করেন।’
মাহবুবা আক্তার বলেন, ‘এই ঘটনার কিছুদিন পর জামান মিয়া আবার আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং নতুন করে প্রতারণার কৌশল অবলম্বন করেন। কিন্তু আমরা সেটা বুঝতে পারিনি। তিনি আমার স্বামীকে নিয়ে মালয়শিয়া ও থাইল্যান্ডে ভ্রমণের আয়োজন করেন এবং সেখানে তাকে ব্ল্যাকমেইল করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মেয়ের সাথে ছবি তোলেন। এরপর বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানি ও সেকেন্ড হোমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের কাছ থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। সেই টাকা ফেরত চাইলে আবারও আমাদেরকে পূর্বের ন্যায় হুমকি ধামকি দিতে থাকেন এবং আমার স্বামীর ব্ল্যাকমেইলের উদ্দেশ্যে তোলা বিভিন্ন নোংরা ছবি দিয়ে আমাদেরকে ব্লাকমেইল করেন।’
মাহবুবা বলেন, ‘কৌশলে তোলা আমার স্বামীর বিভিন্ন নোংরা ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আমাদেরকে পূর্বাচলের কাছে জমি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৫৩ লাখ টাকা নেন জামান মিয়া। তবে এখনো জমির কোনো কাগজপত্র আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। একইভাবে, গুলশানে অবস্থিত ‘গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ এর শেয়ার বাবদ ৩০ লাখ টাকা নিয়েও তিনি শেয়ার বুঝিয়ে দেননি। এসব বিষয়ে আমি থানায় সাধারণ ডায়রি করলে জামান মিয়ার অদৃশ্য শক্তির কারণে কোন প্রতিকার পাইনি।
তিনি বলেন, ‘আমি (মাহবুবা আক্তার) ছাড়াও আরও অনেকের সাথে জামান মিয়া প্রতারণা করেছেন। তাদের মধ্যে একজন পুলিশের ডিআইজি আওয়ামী লীগের আমলে (ওএসডি) কাজী ফজলুল করিম। তিনি উইটন স্কুলের ডিরেক্টর ছিলেন। তার সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে তার পদ থেকে তাকে সরিয়ে দিয়েছেন জামান মিয়া। দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নিয়ে প্রতারণার বিষয়টি উল্লেখ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর একটি অভিযোগ পত্র দাখিল করি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ‘উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ ও ‘গাইডেন্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ এর প্রধান শিক্ষক জামান মিয়ার সাথে তার অফিসে গিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সূত্র: ভোরের পাতা