ঢাকা ০৬:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিল জুড়ে সৌন্দর্যের আভা ছড়াচ্ছে রাশি রাশি গোলাপী পদ্ম

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট : ১১:৩৪:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১
  • / 96
বিল জুড়ে অনিন্দ্য সৌন্দয্যের আভা ছড়াচ্ছে রাশি রাশি ফুটে থাকা গোলাপী পদ্ম। এসব পদ্ম ফুল শুধু বিল নয় সৌন্দয্য বাড়িয়ে তুলেছে প্রকৃতির। প্রষ্ফুটিত এসব পদ্ম ফুলের সৌন্দয্য উপভোগ করতে বিলে এলাকায় ছুটে আসছে দর্শনার্থীরা। প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে দর্শনার্থীরা। এমন পদ্ম ফুলের দেখা মেলে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বলাকইড় পদ্ম বিলে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বিলবেষ্টিত গ্রাম বলাকইড়। জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত এ বিল। ইতোমধ্যে ‘পদ্ম বিল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯৮৮ সালের পর থেকে বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মে।

পুরো বিল গোলাপী রঙের পদ্ম ভরে ওঠে। চারিদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। ৬৪টি পাপড়ি মেলে প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বাগত জানায় জলজ ফুলের রানী পদ্ম। এ যেন বিধাতার এক অপরূপ সৃষ্টি-যা দেখলে যে কারো মন জুড়িয়ে যায়। এমন অপরূপ দৃশ্য যেন ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিচ্ছে।

পদ্ম ফুলের সৌন্দয্য উপভোগ করতে পূবের আকাশে সূর্য উঁকি দেয়ার পরপরই বিলে আসেন পর্যটকরা। এ বিলের সৌন্দর্য ও পদ্ম দেখার জন্য প্রতিদিনই ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। তারা নৌকায় ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। স্থানীয়রাও ভ্রমণ পিপাসুদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন।

আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত বলাকইড় পদ্ম বিলে ফুল থাকে। এ সময় এখানকার মানুষের কোন কাজ থাকে না। বিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে কর্মহীন মানুষ উপার্জন করছেন। দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে দৈনিক ৮’শ থেকে এক হাজার টাকা আয় করছেন। আর কাজে নিয়োজিত আছে বিল পাড়ের অর্ধ শতাধিক পরিবার। ছোট বড় অর্ধশত নৌকা দিয়ে তারা পদ্ম বিলের সৌন্দয্য ঘুরিয়ে দেখান। এতে তাদের পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। এছাড়া এ সব পরিবারের সদস্যরা পদ্ম ফুল বিক্রি করেন। শহরে এক একটি পদ্ম ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি হয়। এতে দৈ‌নিক ৫ থেকে ৬’শ টাকা উপার্জন করছেন তারা। আর এ আয় দিয়ে ভালোভাবে চলছে তাদের সংসার।

গোপালগঞ্জ শহরের গৃহবধূ সম্পা সাহা বলেন, ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে জেনেছি গোপালগঞ্জে পদ্ম বিল রয়েছে। করোনার কারণে ঘর বন্দি থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি। দেখে মনে হয়নি এটা পদ্ম ফুলের বিল, মনে হয়েছে সৌন্দর্যের স্বর্গভূমি।

বাগেরহাট থেকে ঘুরতে আসা গৃহবধূ দীপা সাহা বলেন, গোপালগঞ্জে বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। তাই বায়না ধরেছিলাম পদ্ম ফুল দেখতে যাবো। এখনে এসে যা দেখলাম তা শোনার থেকেও অনেক বেশি। পদ্ম ফুলের সৌন্দর্যে পুরোই মুগ্ধ হয়ে গেছি।

দর্শনার্থী সাব্বির আহমেদ ও পিয়াস মোল্লা বলেন, আমরা বলাকইড় বিলে পরিবার নিয়ে পদ্ম ফুল দেখতে এসেছি। দেখে প্রচণ্ড ভালো লেগেছে। তবে এখানে আসার একমাত্র সড়কটির অবস্থা বেহাল। দর্শনার্থীদের আসতে কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। দ্রুত সড়কটি মেরামতের দাবি জানাই।

পদ্ম বিল পাড়ের বাসিন্দা ইয়াছিন বেগম বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ পদ্ম বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। তাদের নৌকায় ঘুরিয়ে অর্ধশতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে এখানে আসার রাস্তাটি সরু ও খারাপ। তাই অনেকেই গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন না। রাস্তাটি প্রশস্ত করা হলে এখানে অনেক দর্শনার্থী আসবেন। এতে বিল পাড়ের আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসনে। পদ্ম বিলকে কেন্দ্র করে মৌসুমি পর্যটন এলাকা হিসাবে গড়ে তোলার জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পদ্ম বিলে যাওয়ার রাস্তাটি প্রশস্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সড়কটি মেরামত করা হলে দর্শনার্থীদের আর কোনও সমস্যা থাকবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

ট্যাগস :

বিল জুড়ে সৌন্দর্যের আভা ছড়াচ্ছে রাশি রাশি গোলাপী পদ্ম

আপডেট : ১১:৩৪:১৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১
বিল জুড়ে অনিন্দ্য সৌন্দয্যের আভা ছড়াচ্ছে রাশি রাশি ফুটে থাকা গোলাপী পদ্ম। এসব পদ্ম ফুল শুধু বিল নয় সৌন্দয্য বাড়িয়ে তুলেছে প্রকৃতির। প্রষ্ফুটিত এসব পদ্ম ফুলের সৌন্দয্য উপভোগ করতে বিলে এলাকায় ছুটে আসছে দর্শনার্থীরা। প্রতিদিনই এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছে দর্শনার্থীরা। এমন পদ্ম ফুলের দেখা মেলে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বলাকইড় পদ্ম বিলে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার করপাড়া ইউনিয়নের বিলবেষ্টিত গ্রাম বলাকইড়। জেলা শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত এ বিল। ইতোমধ্যে ‘পদ্ম বিল’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯৮৮ সালের পর থেকে বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে পদ্মফুল জন্মে।

পুরো বিল গোলাপী রঙের পদ্ম ভরে ওঠে। চারিদিকে শুধু পদ্ম আর পদ্ম। ৬৪টি পাপড়ি মেলে প্রকৃতিপ্রেমীদের স্বাগত জানায় জলজ ফুলের রানী পদ্ম। এ যেন বিধাতার এক অপরূপ সৃষ্টি-যা দেখলে যে কারো মন জুড়িয়ে যায়। এমন অপরূপ দৃশ্য যেন ভ্রমণপিপাসুদের হাতছানি দিচ্ছে।

পদ্ম ফুলের সৌন্দয্য উপভোগ করতে পূবের আকাশে সূর্য উঁকি দেয়ার পরপরই বিলে আসেন পর্যটকরা। এ বিলের সৌন্দর্য ও পদ্ম দেখার জন্য প্রতিদিনই ছেলে-মেয়ে নিয়ে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। তারা নৌকায় ঘুরে সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। স্থানীয়রাও ভ্রমণ পিপাসুদের সার্বিক সহযোগিতা করছেন।

আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত বলাকইড় পদ্ম বিলে ফুল থাকে। এ সময় এখানকার মানুষের কোন কাজ থাকে না। বিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে কর্মহীন মানুষ উপার্জন করছেন। দর্শনার্থীদের নৌকায় ঘুরিয়ে দৈনিক ৮’শ থেকে এক হাজার টাকা আয় করছেন। আর কাজে নিয়োজিত আছে বিল পাড়ের অর্ধ শতাধিক পরিবার। ছোট বড় অর্ধশত নৌকা দিয়ে তারা পদ্ম বিলের সৌন্দয্য ঘুরিয়ে দেখান। এতে তাদের পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য এসেছে। এছাড়া এ সব পরিবারের সদস্যরা পদ্ম ফুল বিক্রি করেন। শহরে এক একটি পদ্ম ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রি হয়। এতে দৈ‌নিক ৫ থেকে ৬’শ টাকা উপার্জন করছেন তারা। আর এ আয় দিয়ে ভালোভাবে চলছে তাদের সংসার।

গোপালগঞ্জ শহরের গৃহবধূ সম্পা সাহা বলেন, ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে জেনেছি গোপালগঞ্জে পদ্ম বিল রয়েছে। করোনার কারণে ঘর বন্দি থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি। দেখে মনে হয়নি এটা পদ্ম ফুলের বিল, মনে হয়েছে সৌন্দর্যের স্বর্গভূমি।

বাগেরহাট থেকে ঘুরতে আসা গৃহবধূ দীপা সাহা বলেন, গোপালগঞ্জে বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। তাই বায়না ধরেছিলাম পদ্ম ফুল দেখতে যাবো। এখনে এসে যা দেখলাম তা শোনার থেকেও অনেক বেশি। পদ্ম ফুলের সৌন্দর্যে পুরোই মুগ্ধ হয়ে গেছি।

দর্শনার্থী সাব্বির আহমেদ ও পিয়াস মোল্লা বলেন, আমরা বলাকইড় বিলে পরিবার নিয়ে পদ্ম ফুল দেখতে এসেছি। দেখে প্রচণ্ড ভালো লেগেছে। তবে এখানে আসার একমাত্র সড়কটির অবস্থা বেহাল। দর্শনার্থীদের আসতে কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। দ্রুত সড়কটি মেরামতের দাবি জানাই।

পদ্ম বিল পাড়ের বাসিন্দা ইয়াছিন বেগম বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ পদ্ম বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। তাদের নৌকায় ঘুরিয়ে অর্ধশতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে এখানে আসার রাস্তাটি সরু ও খারাপ। তাই অনেকেই গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন না। রাস্তাটি প্রশস্ত করা হলে এখানে অনেক দর্শনার্থী আসবেন। এতে বিল পাড়ের আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে আসনে। পদ্ম বিলকে কেন্দ্র করে মৌসুমি পর্যটন এলাকা হিসাবে গড়ে তোলার জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পদ্ম বিলে যাওয়ার রাস্তাটি প্রশস্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সড়কটি মেরামত করা হলে দর্শনার্থীদের আর কোনও সমস্যা থাকবে না।